ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৩ মার্চ ২০২৫, ১৯ ফাল্গুন ১৪৩১

বাংলাদেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন, তবে আশাহীন নন অমর্ত্য সেন

প্রকাশিত: ০০:৩৮, ৩ মার্চ ২০২৫

বাংলাদেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন, তবে আশাহীন নন অমর্ত্য সেন

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ভারতের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। তিনি বলেছেন, "বাংলাদেশের পরিস্থিতি আমাকে ব্যথিত করেছে। আমি উদ্বিগ্ন, তবে আশাহীন নই।" একই সঙ্গে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এই পরিস্থিতি উত্তরণের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।

সম্প্রতি শান্তিনিকেতনে নিজের পৈতৃক বাড়িতে ভারতের সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

অমর্ত্য সেন বলেন, "বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি আমাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে, কারণ আমার মধ্যে শক্তিশালী বাঙালি পরিচয় রয়েছে। আমি ঢাকায় দীর্ঘ সময় কাটিয়েছি এবং সেখানেই আমার শিক্ষাজীবনের সূচনা। ঢাকা ছাড়াও আমার পূর্বপুরুষের ভিটা মানিকগঞ্জে আমি প্রায়ই যেতাম, মায়ের দিক দিয়ে বিক্রমপুরের সোনারঙেও আমার যাতায়াত ছিল। এসব জায়গার প্রতি আমার বিশেষ টান রয়েছে।"

শৈশবে তিনি ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে পড়াশোনা করেন, পরে শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সেখানেই শিক্ষাজীবন চালিয়ে যান।

বাংলাদেশের রাজনীতি ও ধর্মনিরপেক্ষতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতীতে জামায়াতে ইসলামীকে নজরদারিতে রাখা হয়েছিল এবং আমি চাই এ ধরনের ধর্মনিরপেক্ষতা অব্যাহত থাকুক।"

গত বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেন। দেশব্যাপী সংঘর্ষ ও গুলিবর্ষণের জেরে অনেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছেন। তবে এ বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করে অমর্ত্য সেন বলেন, "বাংলাদেশে বহুদলীয় রাজনীতির যে ধারা রয়েছে, সেটি অব্যাহত রাখা উচিত। কোনো নির্দিষ্ট দলকে একপাশে ঠেলে দেওয়া উচিত নয়।"

ভবিষ্যৎ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আমি আশা করি, বাঙালির স্বাধীনতা ও বহুত্ববাদ বজায় থাকবে এবং ভবিষ্যৎ নির্বাচন অতীতের চেয়ে আরও নিরপেক্ষ হবে।"

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন, "তিনি আমার পুরোনো বন্ধু এবং অত্যন্ত দক্ষ ব্যক্তি। বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে তিনি শক্তিশালী বার্তা দিয়েছেন।"

অমর্ত্য সেন আরও বলেন, "যখন কেউ হঠাৎ করে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে, তখন তাকে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। ড. ইউনূসও একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। তাকে অবশ্যই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সম্প্রদায়ের মতামত বিবেচনায় রাখতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, তার দক্ষতা দিয়ে তিনি এই চ্যালেঞ্জগুলো সফলভাবে মোকাবিলা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।"

সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ বরাবরই সচেতন থেকেছে এবং জামায়াতের মতো দলগুলোকে নজরদারিতে রেখেছে। তবে দুঃখজনকভাবে, ভারতেও মসজিদে হামলার ঘটনা ঘটে। এ ধরনের হামলা, হোক বাংলাদেশ বা ভারত, বন্ধ হওয়া উচিত।"

বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর ভূমিকাকে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরে অমর্ত্য সেন বলেন, "অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে সেনাবাহিনী রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের চেষ্টা করেনি, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।"

তিনি মনে করেন, বাংলাদেশ কঠিন সময় পার করলেও আশার আলো এখনও বিদ্যমান। তার ভাষায়, "আমি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন, তবে আশাহত নই।"

এম.কে.

×