ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৩ মার্চ ২০২৫, ১৯ ফাল্গুন ১৪৩১

ইসরায়েলের চেয়েও ভয়ংকর যুদ্ধবিমানের মালিক হচ্ছে ইরান!

প্রকাশিত: ০০:৩৮, ৩ মার্চ ২০২৫

ইসরায়েলের চেয়েও ভয়ংকর যুদ্ধবিমানের মালিক হচ্ছে ইরান!

ছবি: সংগৃহীত।

ইরান বিশ্বের অন্যতম সামরিক শক্তিধর দেশ হলেও আধুনিক যুদ্ধবিমানের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে একটি দুর্বলতা অনুভব করছিল। যদিও দেশটির কাছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, তবুও শক্তিশালী যুদ্ধবিমান না থাকায় একটি বড় সীমাবদ্ধতা ছিল। তবে এবার সেই ঘাটতি পূরণ করতে যাচ্ছে তেহরান। জানা গেছে, ইতোমধ্যে রাশিয়ার কাছ থেকে সু-৩৫ ও সু-৩০ যুদ্ধবিমান হাতে পেয়েছে ইরান।

গত জানুয়ারিতে ইরানি কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেন, তাদের বিমানবাহিনীতে রাশিয়ার তৈরি সু-৩৫ যুদ্ধবিমান যুক্ত হয়েছে। তবে এখনো এগুলো প্রকাশ্যে আনা হয়নি এবং কোনো এয়ারশোতেও প্রদর্শিত হয়নি। তবে চলতি মাসের ১৯ তারিখে এই যুদ্ধবিমানগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তেহরান।

‘ডিফেন্স সিকিউরিটি এশিয়া’ নামের একটি ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পারস্য নববর্ষ নওরোজ উদযাপনের ঠিক আগের দিন, ২০ মার্চ, সামরিক সক্ষমতার নতুন মাত্রা প্রদর্শনের জন্য ইরান এই যুদ্ধবিমানগুলো উন্মোচন করবে। নওরোজ ইরানের জন্য আশা, সমৃদ্ধি ও নতুন সূচনার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়, তাই এই উপলক্ষে ইরান তার সামরিক শক্তি তুলে ধরতে চায়।

খবরে আরও বলা হয়েছে, ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে সামরিক সম্পর্ক আরও গভীর করতে সম্প্রতি ২০ বছরের একটি চুক্তি সই হয়েছে। এই চুক্তির অংশ হিসেবে রাশিয়ার তৈরি অত্যাধুনিক সুখোই-৩৫ যুদ্ধবিমান ইরানের হাতে এসেছে। ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর কেন্দ্রীয় সদর দপ্তরের উপসমন্বয়ক আলি শাদমানি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে ইরান ঠিক কতটি যুদ্ধবিমান পেয়েছে, সে বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

শাদমানি আরও জানান, চুক্তির আওতায় ইরান শুধু রাশিয়ার কাছ থেকে যুদ্ধবিমানই সংগ্রহ করেনি, বরং ভবিষ্যতে দেশেই সুখোই-৩৫ এবং সুখোই-৩০ যুদ্ধবিমান উৎপাদনের পরিকল্পনা করছে। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা ও অবকাঠামো তৈরিতে সহযোগিতা করবে রাশিয়া।

রাশিয়ার তৈরি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান যুক্ত হওয়ার ফলে ইরানের সামরিক সক্ষমতা এক লাফে বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এখন ইরান শুধু মিসাইল হামলার ওপর নির্ভরশীল থাকবে না, বরং বিমান হামলার ক্ষমতাও অর্জন করবে, যা তাদের প্রতিপক্ষ ইসরায়েলের জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

ইরানের আগে যতবার ইসরায়েলে সরাসরি হামলা হয়েছে, তা মূলত ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছে। পাল্টা জবাবে ইসরায়েল বিমান হামলা চালিয়ে এসেছে। কিন্তু এবার ইরানের এই দুর্বলতা কেটে যাচ্ছে। আলি শাদমানির ভাষায়, “যদি শত্রুরা কোনো বোকামি করে, তাহলে আমাদের ক্ষেপণাস্ত্রের শক্তি অনুভব করবে। তাদের দখলকৃত কোনো অঞ্চল আর নিরাপদ থাকবে না।”

২০২৩ সালের নভেম্বরে ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, রাশিয়ার যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে। যদিও এর এক বছর আগেই তেহরান সুখোই-৩৫ যুদ্ধবিমান কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছিল।

উল্লেখ্য, ২০০৭ সাল থেকেই রাশিয়ার উন্নত যুদ্ধবিমানে আগ্রহী ছিল ইরান। সে সময় দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি এসইউ-৩০MK বিমান কিনতে চেয়েছিলেন। তবে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা ও রাশিয়ার সিদ্ধান্তহীনতার কারণে সেই চুক্তি ভেস্তে যায়। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে নতুন করে আলোচনা শুরু হলেও তা সফল হয়নি।

ইরানের বিমানবাহিনীর বহরে দীর্ঘদিন ধরে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের পুরোনো মডেলের যুদ্ধবিমান ছিল। তাই সামরিক শক্তি বাড়াতে দেশটি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান পেতে মরিয়া হয়ে ছিল। অবশেষে সেই অপেক্ষার অবসান ঘটল, রাশিয়ার সহায়তায় ইরান নতুন যুদ্ধবিমান হাতে পেয়েছে, যা দেশটির সামরিক শক্তিকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।

সায়মা ইসলাম

×