ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৩ মার্চ ২০২৫, ১৯ ফাল্গুন ১৪৩১

৬০ হাজার বছরের জ্বালানির সন্ধান পেল চীন

প্রকাশিত: ২৩:৫০, ২ মার্চ ২০২৫

৬০ হাজার বছরের জ্বালানির সন্ধান পেল চীন

চীন দাবি করছে যে তারা এমন জ্বালানির সন্ধান পেয়েছে যা দিয়ে আগামী ৬০ হাজার বছর জ্বালানির চাহিদা মেটানো সম্ভব।বিশ্বের সবচেয়ে বড় জ্বালানি আমদানিকারক দেশ চীন। দেশজুড়ে শিল্পকারখানা চালু রাখার পাশাপাশি ভোক্তা চাহিদা পূরণে দেশটিকে প্রতিবছর রাশিয়া এবং আরব দেশগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল ও গ্যাস আমদানি করতে হয়। সেই চীনকে এবার সুখবর দিয়েছেন দেশটির বিজ্ঞানীরা।

দেশটিতে জ্বালানির এমন এক উৎস আবিষ্কৃত হয়েছে, যা দিয়ে পুরো চীনের ৬০ হাজার বছরের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ হবে।
দেশটির ভূতত্ত্ববিদরা এমন তথ্য দিয়েছেন।
এ বিষয়ে ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের ইনার মঙ্গোলিয়ায় বায়ান ওবো খনিজ কমপ্লেক্সে পাওয়া গেছে পর্যাপ্ত পরিমাণ থোরিয়াম। এটি এত বেশি যে তা দিয়ে চীনাদের প্রতিটি বাড়িতে চিরদিনের জ্বালানি চাহিদা মেটানো সম্ভব। অন্তত ৬০ হাজার বছর তো চলবে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, যদি ওই খনি থেকে পুরোটা থোরিয়াম উত্তোলন করা যায়, তাহলে তার পরিমাণ হবে ১০ লাখ টন। দ্য সাউথ চায়না পোস্ট প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, ওই খনিতে থোরিয়ামের উৎস এখন পর্যন্ত অস্পৃশ্য অবস্থায় আছে। এটি যথাযথভাবে উত্তোলন করা গেলে তা সারা বিশ্বের জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতার ইতি ঘটাবে। গবেষকরা আরো দাবি করেছেন যে ইনার মঙ্গোলিয়ার একটি লোহার আকরিকের খনি থেকে পাঁচ বছরে যে বর্জ্য হিসেবে খনিজ পাওয়া যাবে, তাতে যে পরিমাণ থোরিয়াম থাকবে, তা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কমপক্ষে এক হাজার বছরের বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো সম্ভব।
এই খবরটি এমন এক সময়ে এলো, যখন চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পাওয়ার সোর্স সন্ধান করছে। গবেষণায় পুরো চীনে ২৩৩টি থোরিয়াম সমৃদ্ধ অঞ্চলের সন্ধান মিলেছে। যদি তা সত্য হয়, তাহলে চীনে যে পরিমাণ থোরিয়াম জমা আছে, তা আগের হিসাবকে অনেকটাই ছাড়িয়ে যাবে। প্রচলিত পারমাণবিক চুল্লিতে ব্যবহৃত হয় ইউরেনিয়াম-২৩২। তার চেয়ে কমপক্ষে ৫০০ গুণ বেশি থোরিয়াম জমা আছে।

পারমাণবিক চুল্লি তেজষ্ক্রিয় পদার্থকে ফিশন বা বিগলন নামে একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শক্তি সৃষ্টি করে। এই প্রক্রিয়াকালে ওই তেজষ্ক্রিয় পদার্থ ভেঙে টুকরা টুকরা হয়ে অধিক স্থিতিশীল পদার্থে পরিণত হয়। তার সঙ্গে প্রচুর তাপশক্তি সৃষ্টি করে। এই তাপশক্তিকে ব্যবহার করে স্টিম টার্বাইন চালানো যায়। নিজে থেকে থোরিয়াম বিগলনযোগ্য নয়। এর অর্থ হলো ফিশন প্রক্রিয়ায় একে ব্যবহার করা যায় না। তবে ফিশন বিক্রিয়ার ভিত্তি হিসেবে তা ব্যবহৃত হয়। এর কারণ হলো থোরিয়াম হলো ‘উর্বর’। এর অর্থ হলো যখন নিউট্রনের সঙ্গে সংঘর্ষে বোমার মতো আচরণ করে, তখন থোরিয়াম পরিবর্তিত হয়ে ইউরেনিয়াম-২৩৩-এ পরিণত হতে পারে।

মল্টেন-সল্ড রিঅ্যাক্টরে থোরিয়াম মিশ্রিত হয় আরেকটি রাসায়নিক লিথিয়াম ফ্লোরাইডের সঙ্গে এবং তা প্রায় ১৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উত্তপ্ত হয়। এই মিশ্রণ তারপর নিউট্রনের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটায় যতক্ষণ না কিছু থোরিয়াম পরিবর্তন হয়ে ইউরেনিয়াম-২৩২-এ পরিণত হওয়া শুরু করে। এটি একটি ফিশন বিক্রিয়া।

ক্ষয়প্রক্রিয়ায় এই ইউরেনিয়াম তখন অধিক পরিমাণে নিউট্রন তৈরি করে। তা অতিরিক্ত থোরিয়ামের সঙ্গে বিক্রিয়ার মাধ্যমে জ্বালানিতে পরিণত হয়। এই প্রক্রিয়া চলাকালে পারমাণবিক চুল্লি বিপুল শক্তি উৎপন্ন করে।

 

সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=ZyoMu81k0VA

সাজিদ

×