
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার পথে ভারতকে কড়া বার্তা দিয়েছে চীন। সম্প্রতি বিএনপির একটি প্রতিনিধি দলের চীন সফর এবং সে দেশের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বক্তব্য ভারতের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগের ভাইস মিনিস্টার সান ওয়েডং স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি শুধুমাত্র বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থের ভিত্তিতে নির্ধারিত হওয়া উচিত, কোনো তৃতীয় পক্ষের পক্ষে নয়। আন্তর্জাতিক কূটনীতিকরা বলছেন, এই বক্তব্য যে ভারতের উদ্দেশেই ছিল, তা বুঝতে বিশেষজ্ঞ হতে হয় না।
নয়াদিল্লির কূটনৈতিক মহলে এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সতর্ক করে বলেছেন, "বাংলাদেশ আমাদের হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে, স্যার।" মোদি নীরবে জানালার দিকে তাকিয়ে ছিলেন, যেন কোনো আসন্ন ঝড়ের আভাস পাচ্ছেন।
বৈঠকে সান ওয়েডং বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক আরও গভীর করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, "প্রতিটি দেশের এমন বন্ধুর প্রয়োজন, যাদের ওপর তারা সম্পূর্ণ আস্থা রাখতে পারে।"
চীন বোঝাতে চাইছে, তাদের চেয়ে ভালো মিত্র আর কেউ হতে পারে না। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই সম্পর্ক নিছক বন্ধুত্ব নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের প্রভাব খর্ব করার একটি কৌশল। চীনের বার্তা স্পষ্ট—বাংলাদেশ যেন এমন কূটনৈতিক পথ বেছে নেয়, যা শুধুমাত্র তাদের নিজস্ব স্বার্থ রক্ষা করবে এবং প্রতিবেশী কারও আধিপত্যের ছায়া পড়তে দেবে না।
বাংলাদেশ শুধু ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ নয়, বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে এটি বৈশ্বিক বাণিজ্যের এক প্রবেশদ্বারও। বিশেষ করে চীনের জন্য এই অঞ্চল কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সান ওয়েডং বলেন, "আপনারা এমন প্রতিবেশী চান, যারা স্থিতিশীল শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানকে গুরুত্ব দেয় এবং উন্নয়নের সুযোগ ভাগ করে নেয়, কিন্তু অন্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না।" বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের প্রতি এটি ছিল একটি স্পষ্ট সতর্কবার্তা।
দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক বিভিন্ন ক্ষেত্রে নির্ভরশীলতার ওপর গড়ে উঠেছিল—ব্যবসা, চিকিৎসা, ট্রানজিটসহ নানা ক্ষেত্রে ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে দেখা হয়েছে। তবে চীন এখন বিকল্প হিসেবে উঠে আসতে চাইছে।
তারা স্পষ্ট জানিয়েছে, বাংলাদেশের মেডিকেল সেক্টরে সহায়তা দিতে প্রস্তুত, প্রযুক্তিগত দক্ষতা ভাগ করে নিতে চায়, যাতে বাংলাদেশ অন্য কোথাও নির্ভর করতে বাধ্য না হয়। চীনের এই বার্তা দক্ষিণ এশিয়ায় এক নতুন ভূরাজনৈতিক সমীকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে, যা ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।
ঢাকার কূটনৈতিক জোনের এক কফিশপে গভীর রাতে আলো জ্বলছিল। এক সাংবাদিক ও এক রাজনৈতিক বিশ্লেষক গোপনে আলোচনা করছিলেন, "চীন বলে দিল বাংলাদেশ যেন কারও স্বার্থে সিদ্ধান্ত না নেয়। বোঝেন কি ইঙ্গিত?"
অন্যজন হালকা হেসে বললেন, "বুঝতে খুব বুদ্ধিমান হওয়ার দরকার নেই। ভারত জানে, চীন শুধু কথার খেলা খেলছে না, বরং ছক কষছে।"
কোণের একটি টেবিলে বসে থাকা এক আন্ডারকভার চীনা এজেন্ট তাদের কথা শুনছিল। কিছু না বলে সে শুধু মুঠোফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকল, যেখানে সান ওয়েডংয়ের বক্তব্য জ্বলজ্বল করছিল—নতুন বাংলাদেশ!
ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/JmuRhJKJ8OY?si=yr6Y8-IqBDbz0xz_
এম.কে.