
স্পেনের তিন বন্ধু ঘোড়ায় চড়ে সৌদি আরবের পথে হজ পালনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন। হজ, যা প্রতিবছর অনুষ্ঠিত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী তীর্থযাত্রা। এই যাত্রার পেছনে মূল প্রেরণা ছিল একজন হাজির ইসলাম গ্রহণের পর করা একটি প্রতিশ্রুতি।
তারা ঘোড়ায় চড়ে মক্কায় হজযাত্রার মাধ্যমে ৫০০ বছর পুরনো আন্দালুসীয় মুসলিম ঐতিহ্য পুনরুজ্জীবিত করছেন। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
গত সাড়ে তিন মাস ধরে ঘোড়ায় চড়ে স্পেন থেকে যাত্রা করে আবদাল্লাহ হার্নান্দেজ, আবদেলকাদের হারকাসি এবং তারিক রদ্রিগেজ এখন ইস্তানবুল পৌঁছেছেন। তারা ঐতিহাসিক ৫০০ বছরের পুরনো আন্দালুসীয় মুসলিম ঐতিহ্য পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্য নিয়ে তাদের যাত্রা চালিয়ে যাচ্ছেন।
৮,০০০ কিলোমিটার (৪,৯৭০ মাইল) দীর্ঘ এই পথে তারা ইতালি, স্লোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, মন্টেনেগ্রো, কসোভো, উত্তর ম্যাসিডোনিয়া, বুলগেরিয়া, গ্রিস এবং তুরস্ক অতিক্রম করে সিরিয়ার মধ্য দিয়ে সৌদি আরবে পৌঁছানোর পরিকল্পনা করেছেন।
ইস্তানবুল সাবাহাত্তিন জাইম বিশ্ববিদ্যালয়ে সংবর্ধনা
ইস্তানবুল সাবাহাত্তিন জাইম বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই তীর্থযাত্রীদের স্বাগত জানানো হয়। সেখানে তারা শিক্ষার্থী ও সমর্থকদের সঙ্গে দেখা করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের অধ্যাপক হুসেইন হুসনু কোয়ুনোগ্লু বলেন, "ইস্তানবুল শত শত বছর ধরে হজযাত্রীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি যাত্রাবিরতি ছিল।"
হার্নান্দেজ তার বক্তব্যে জানান, তিনি ২৪ বছর বয়সে ইসলাম সম্পর্কে জানতে পারেন। ভূগোল বিষয়ে কাজ করার সময় তিনি বাইবেল ও কোরআন অধ্যয়ন করেন এবং কোরআনের আয়াতগুলো তাকে গভীরভাবে স্পর্শ করে।
তিনি আরও জানান, ভূগোলের একটি পরীক্ষার আগে তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন—পরীক্ষায় পাস করতে পারলে তিনি ইসলাম গ্রহণ করবেন। পরীক্ষায় সফল হওয়ার পর তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং পূর্বপুরুষদের মতো ঘোড়ায় চড়ে হজ করার সংকল্প নেন।
এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য হার্নান্দেজের সঙ্গে হারকাসি ও রদ্রিগেজও যোগ দিয়েছেন। এছাড়া, স্পেনে বসবাসরত এক নির্মাণ বিশেষজ্ঞ বুচাইব জাদিল গাড়িতে থেকে তাদের লজিস্টিক সহায়তা দিচ্ছেন।
হারিয়ে যাওয়া একটি ঐতিহ্য পুনরুজ্জীবিত
হজযাত্রী হারকাসি বলেন, "আমরা একটি হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য পুনরুজ্জীবিত করতে পেরে আনন্দিত।"
তিনি জানান, এই দীর্ঘ যাত্রার জন্য তারা কয়েক বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়েছেন এবং সঞ্চয় করেছেন।
যাত্রার কষ্টসাধ্য পথের কথা উল্লেখ করে হারকাসি বলেন, এটি কেবল কঠিনই নয়, বরং অনেক দুঃসাহসিক অভিযানে ভরা। তিনি বলেন, "আমরা অনেক মজার মুহূর্ত ও অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। আমরা অনুভব করেছি, আল্লাহ আমাদের সঙ্গে ছিলেন। আমরা হজ পালনের বিশুদ্ধ নিয়তে এই যাত্রা শুরু করেছি।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা এখন অর্ধেক পথ পার করেছি। আশা করি, বাকি পথটি সহজ হবে।"
দলটি ইস্তানবুলে রমজান মাস কাটানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছে এবং সুলতান আহমেদ মসজিদ ও হাজিয়া সোফিয়া গ্র্যান্ড মসজিদসহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় স্থান পরিদর্শন করতে চায়।
সূত্র: আনাদোলু
শরিফ