
ছবি: সংগৃহীত
সমুদ্রের গর্জন আর আকাশে আগুনের লেলিহান শিখা— ইরানের সামরিক শক্তির এক ভয়ঙ্কর প্রদর্শনী দেখা গেল দেশটির বিশাল সামরিক মহড়ায়। ‘জুলফিকার ১৪০৩’ নামের এই মহড়া ইরানের দক্ষিণ উপকূলে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে স্থল, নৌ এবং বিমান বাহিনী সম্মিলিতভাবে অংশ নেয়। মূলত নৌবাহিনীর প্রতিরক্ষা জোরদার করতেই এই মহড়ায় ব্যাপক গোলাবর্ষণসহ নানা যুদ্ধকৌশল অনুশীলন করা হয়।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী রেজা শেখ জানিয়েছেন, ইরানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক ইউনিটগুলো মহড়ায় অংশ নেয়, যাদের মূল দায়িত্ব ছিল নৌবাহিনীকে প্রতিরক্ষামূলক সহায়তা প্রদান করা। মহড়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল সেনাবাহিনীর দ্রুত প্রতিরক্ষা গড়ে তোলার সক্ষমতা। ৫৫তম এয়ারবোর্ন ব্রিগেড ও ২২৩তম র্যাপিড রিয়াকশন ব্রিগেড বিদ্যুৎগতিতে নির্ধারিত স্থানে অবতরণ করে প্রতিরক্ষা লাইন স্থাপন করে, যা যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুর অগ্রযাত্রা ঠেকাতে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
মহড়ায় ইরান তাদের অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন সক্ষমতারও প্রদর্শন করে। ব্যবহৃত হয় ফাতাহ ও ফাজল ক্ষেপণাস্ত্র, এছাড়াও আকাশে উৎক্ষেপণ করা হয় আরাস-২ লুটারিং মিউনিশন এবং আক্রমণাত্মক ড্রোন আবাবিল-৪, ৫ ও মহাজেব-৬। শুধু আক্রমণ নয়, শত্রুর গোয়েন্দা কার্যক্রম ব্যাহত করতেও ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার ড্রোন ব্যবহার করা হয়।
এই মহড়ায় ইরানের স্থলবাহিনী ও নৌবাহিনীর সমন্বিত যুদ্ধ পরিকল্পনারও পরীক্ষা করা হয়। অ্যান্টি-ট্যাংক মিসাইল সিস্টেম মোতায়েন করা হয়, যা সামরিক যানবাহনের ওপর বসিয়ে শত্রুর অবস্থান লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করা হয়। যুদ্ধক্ষেত্রে ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিটগুলো প্রতিরক্ষা বাঁধ ও দুর্গ নির্মাণ করে শত্রুদের অগ্রগতি ব্যাহত করে।
সেনাবাহিনীর বিমান শাখার ভূমিকাও ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হেলিকপ্টার গানশিপ ব্যবহার করে শত্রুর ওপর আকাশ থেকে হামলা চালানো হয়, মিসাইল দিয়ে শত্রুর ড্রোন ও যুদ্ধবিমান প্রতিহত করা হয়। সাজোয়া ট্যাংক ও সামরিক যানগুলো অত্যন্ত সুসংগঠিতভাবে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে শত্রুকে সমুদ্রে ফিরতে বাধ্য করে। এই অভিযানে ইরানের কারা ড্রোন ও এফ-৪ ফাইটার জেট ব্যবহার করা হয়।
এই মহড়ার মাধ্যমে ইরান শুধু তার সামরিক শক্তির প্রদর্শনী করল না, বরং বিশ্বকে একটি স্পষ্ট বার্তা দিল—দেশের প্রতিরক্ষায় তারা কোনো ছাড় দেবে না। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ও চাপ উপেক্ষা করেই ইরান তার প্রতিরক্ষা শক্তিকে আরও সুসংহত করে তুলছে।
ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/tLzHqq1aKqw?si=FAFujuv07djHyu5d
এম.কে.