
ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধের সম্ভাবনা জাগ্রত হওয়ায় সারা বিশ্ব নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। যদিও সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত আলোচনা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, তবে এর প্রভাব শুধুমাত্র ইউরোপের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না; এটি এশিয়াকেও ব্যাপকভাবে আন্দোলিত করবে।
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সংলাপের ফলে চীন ও ভারত তাদের কৌশল নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য হচ্ছে। বেইজিং এতদিন ধরে ইউক্রেন যুদ্ধের সময় ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করেছে—একদিকে নিরপেক্ষ থাকার বার্তা দিয়েছে, অন্যদিকে মস্কোকে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমর্থন যুগিয়ে গেছে। তবে শান্তি প্রতিষ্ঠার সুযোগে চীন তার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ ইউক্রেনে সম্প্রসারিত করতে চাইতে পারে, যা মস্কোর মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মনোযোগ দেয়, তবে চীন তাইওয়ান ইস্যুতে তার অবস্থান পুনর্বিবেচনা করতে পারে।
অন্যদিকে, ভারত এতদিন কৌশলগতভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখেছে। যুদ্ধকালীন সময়ে ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে সস্তায় তেল কিনে অর্থনৈতিক সুবিধা পেয়েছে, তবে যুদ্ধ বন্ধ হলে এ সুযোগ কমে যাবে। তবে স্থিতিশীল জ্বালানি বাজার ভারতের জন্য দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সহায়ক হবে।
জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের সময় রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিল এবং ইউক্রেনকে সহায়তা করেছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যকার শান্তি আলোচনার সফল সমাপ্তি হলে টোকিও ও সিউলকে তাদের আগের অবস্থান থেকে সরে আসতে হবে। তারা নিশ্চিত হতে চাইবে যে, ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা করলেও আঞ্চলিক নিরাপত্তার প্রশ্নে নমনীয় হবে না। উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ে তাদের উদ্বেগ রয়েই যাবে।
শান্তি প্রতিষ্ঠিত হলে বৈশ্বিক পণ্যবাজার স্থিতিশীল হবে, যা এশিয়ার খাদ্য ও জ্বালানি নির্ভর দেশগুলোর জন্য স্বস্তিদায়ক হবে। ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার হবে, এবং ইউক্রেনের পুনর্গঠনে এশিয়ার দেশগুলোর শিল্প খাত লাভবান হতে পারে।
তবে ইউরোপে সামরিক প্রতিযোগিতা কমে গেলে দক্ষিণ কোরিয়ার অস্ত্র রপ্তানির সুযোগও বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে, যদি রাশিয়া শান্তিচুক্তি থেকে বেশি লাভবান হয়, তাহলে এশিয়ার কিছু দেশ তাদের ভূখণ্ডগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে আরও সাহসী হয়ে উঠতে পারে। ফলে চীন ও তার প্রতিবেশীদের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেতে পারে।
যদি ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেন থেকে মনোযোগ সরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সমস্যায় বেশি গুরুত্ব দেয়, তাহলে এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব ও নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠতে পারে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশ এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা গ্যারান্টির উপর নির্ভর করেছে, তবে এখন তারা চীনের দিকে আরও ঝুঁকতে পারে।
উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শক্তি ভারসাম্যের এই পরিবর্তন এশিয়াকে এক নতুন কৌশলগত পরীক্ষার সামনে দাঁড় করিয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি কেবল ইউরোপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি এশিয়ার আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও ভূরাজনৈতিক সমীকরণের জন্যও এক লিটমাস টেস্ট হয়ে উঠেছে।
ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/c5Tsdn3qO0s?si=Rd8S9yGOxB3OoAmY
এম.কে.