ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১

ইউক্রেন হার মেনে নিচ্ছে!

প্রকাশিত: ২১:৩৬, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ইউক্রেন হার মেনে নিচ্ছে!

ছবি : সংগৃহীত

রাত গভীর, আকাশে শত্রুপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্র উড়ছে। কমান্ড সেন্টারে সাইরেন বাজছে, সেনারা প্রস্তুত। কিন্তু এক সেকেন্ড, কোথায় প্রতিরক্ষার অস্ত্র। 

‘স্যার, আমাদের প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র শেষ।’

ভোর তিন টায় এমনই এক মর্মান্তিক ফোন কল পান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলাদিমির জেলোনস্কি।

তার সেনাপতির কন্ঠে আতঙ্ক। কারণ প্রতিপক্ষের আটটি ক্ষেপণাস্ত্র। কিন্তু ইউক্রেনের হাতে একটিও প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র নেই। এই চিত্র শুধু এক রাতের নয় বরং ইউক্রেনের সামগ্রিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বাস্তবতা।

ইউক্রেন যুদ্ধের তৃতীয় বছরে এসে দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মেরুদণ্ড বলে পরিচিত মার্কিন প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রায় শেষের পথে। আর এই সংকট এখন শুধু ইউক্রেনের নয়, বরং বৈশ্বিক কূটনীতির নতুন মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।

কেন ফুরিয়ে আসছে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র?

প্রথম থেকেই ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষার প্রধান ভরসা ছিল পশ্চিমা অস্ত্র সহায়তা। বিশেষ করে আমেরিকার দেওয়া প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই তিনি এই সহায়তা পুনর্মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

সাম্প্রতিক এক সংবাদ সম্মেলনে জেলোনস্কি জানিয়েছেন, নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ নিশ্চিত না হলে, ইউক্রেনকে নিজস্ব উৎপাদনের অনুমতি দিতে হবে। তবে এত দ্রুত এই ব্যবস্থা গড়ে তোলা কি আদৌ সম্ভব।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউক্রেনের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা সীমিত এবং মার্কিন প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল। আরেকটি বড় কারণ হলো, ব্যয়ের বিশাল অংক প্রতিটি প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্রের মূল্য প্রায় চার মিলিয়ন ডলার। যা ইউক্রেনের জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল। অন্যদিকে রাশিয়ার কম খরচের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিপরীতে এটি প্রতিরক্ষার জন্য টেকশই বিকল্প নয়।

ট্রাম্পের নয়া কৌশল খনিজের বদলে সহায়তা, ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ইউক্রেনকে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দেওয়ার বিনিময়ে তিনি ৫০০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের বিরল খনিজ চান অর্থাৎ শুধু মানবিক সহায়তা নয় বরং অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সুবিধা নিশ্চিত করেই আমেরিকা এগুবে। কিন্তু জেলোনস্কি বলেছেন, এই চুক্তিতে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে কোন কথা নেই বরং এতে ইউক্রেনকে তার খনিজ সম্পদের ৫০ শতাংশ ছাড়তে হবে। এটি মানতে তার আপত্তি কারণ এটি তার দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন তুলে দেয়।

তাহলে যুদ্ধ কি শেষের পথে! এই সংকটের মধ্যেই রাশিয়া ও আমেরিকা রিয়াদে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসে। যুক্তরাষ্ট্র সেখানে কূটনৈতিক সমাধানের প্রয়োজনীয়তার কথা বলছে। কিন্তু একই সঙ্গে ইউক্রেনের অবস্থান নিয়েও হতাশা প্রকাশ করেছে। রাশিয়া-আমেরিকা যুদ্ধ শেষ করার বিষয়ে সম্মত হলেও, বাস্তবে কি হবে তা এখনো পরিষ্কার নয়।

কারণ যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের দুর্বল প্রতিরক্ষা এবং পশ্চিমা সমর্থনের অনিশ্চয়তা রাশিয়ার জন্য সুবিধাজনক পরিস্থিতি তৈরি করছে। তাহলে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ কি?

বিশ্লেষকদের মতে, যদি ইউক্রেন দ্রুত নতুন অস্ত্র সহায়তা না পায় তবে তাদের প্রতিরক্ষা দুর্বল হয়ে পড়বে। পশ্চিমা দেশগুলোর অনীহা, ট্রাম্প প্রশাসনের কৌশলগত হিসাব নিকাশ এবং ইউক্রেনের নিজস্ব অস্ত্র উৎপাদনের সীমাবদ্ধতা, সবকিছু মিলে দেশটি এখন এক কঠিন বাস্তবতার সামনে দাঁড়িয়ে।

ইউক্রেন কি মার্কিন শর্ত মেনে নেবে নাকি নিজস্ব সামরিক সক্ষমতা গড়ে তুলবে? রাশিয়া কি এই সুযোগে আরো আগ্রাসী হবে?

এসব প্রশ্নের উত্তর যাই হোক না কেন একটি বিষয় নিশ্চিত, যুদ্ধের মোড় এখন বড় ধরনের পরিবর্তনের দিকে এগোচ্ছে।

মো. মহিউদ্দিন

×