ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১

ট্রাম্পের রাশিয়ার প্রতি ঝুঁকে পড়া নিয়ে চীনের শঙ্কা

প্রকাশিত: ১৮:৫২, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ট্রাম্পের রাশিয়ার প্রতি ঝুঁকে পড়া নিয়ে চীনের শঙ্কা

ছবিঃ সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক পররাষ্ট্রনীতি রাশিয়াকে ইউক্রেন সংঘাতে সুবিধা দিচ্ছে, তা বেইজিংয়ের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। প্রথমে, চীন আশা করেছিল যে, রাশিয়ার উপর তাদের অর্থনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে তারা শান্তি আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। কিন্তু ট্রাম্প সরাসরি মস্কোর সঙ্গে আলোচনা করায় চীন এখন পুরো প্রক্রিয়া থেকে ছিটকে পড়েছে এবং কৌশলগতভাবে নতুন পরিকল্পনার সন্ধান করছে।

কৌশলগত সংকটে চীন
চীন নিজেকে নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী এবং গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিল। তবে, ট্রাম্প যখন রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি আলোচনা শুরু করেন, তখন বেইজিং আর কোনো পক্ষেই গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে নেই। এটি চীনের কূটনৈতিক শক্তিকে দুর্বল করে দিচ্ছে এবং রাশিয়ার প্রতি তাদের সমর্থন ও পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার চেষ্টাকে আরও জটিল করে তুলছে।

‘রিভার্স নিক্সন’ কি হতে চলেছে?
মার্কিন কর্মকর্তারা সম্ভাব্য ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার ইঙ্গিত দিয়েছেন, যা বৈশ্বিক মৈত্রীতে পরিবর্তন আনতে পারে। ওয়াশিংটনের চিন্তাভাবনা নিয়ে ইউন সান, স্টিমসন সেন্টারের চীন প্রোগ্রামের পরিচালক, সতর্ক করেছেন: “এমনকি যদি এটি মাত্র ৩০% ‘রিভার্স নিক্সন’ হয়… তবুও এটি সন্দেহের বীজ বপন করবে।”
নিক্সনের শীতল যুদ্ধকালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের বিভেদ কাজে লাগানোর কৌশলকে ইঙ্গিত করে বলা হচ্ছে যে, রাশিয়া-চীন সম্পর্কের সামান্য ফাটলও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কৌশলগত সুবিধা আনতে পারে। যদিও বড় কোনো পরিবর্তন এখনও নিশ্চিত নয়, এই অনিশ্চয়তা শি জিনপিংকে তাদের রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের স্থায়িত্ব নিয়ে ভাবতে বাধ্য করতে পারে।

চীনের উদ্বেগ ও প্রতিক্রিয়া
বেইজিং সতর্কতার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া শান্তি আলোচনাকে স্বাগত জানিয়েছে। চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই বলেছেন: “চীন শান্তি আলোচনার জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে।”
তবে, মূল উদ্বেগ হলো, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের সমস্যা মিটিয়ে নেওয়ার পর পুরোপুরি চীনের দিকে মনোযোগ দিতে পারে। মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ ইতিমধ্যেই বলেছেন: “আমাদের অগ্রাধিকার হলো চীনের সঙ্গে যুদ্ধ প্রতিরোধ করা।”
এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় চীন ইউরোপের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করছে এবং জাতিসংঘের মাধ্যমে ইউক্রেন পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখার সম্ভাবনা খুঁজছে।

চীনের প্রতি ইউক্রেনের আহ্বান
অন্যদিকে, ইউক্রেনও চীনকে আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করছে। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন: “পুতিনকে যুদ্ধ বন্ধ করতে চাপ প্রয়োগে চীনের সহযোগিতা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।”

এটি ইঙ্গিত দেয় যে ইউক্রেন চীনকে আলোচনার অংশীদার করতে চায়, যা এই সংঘাতে বেইজিংয়ের ভূমিকা পুনর্গঠনে সহায়ক হতে পারে।

ট্রাম্পের রাশিয়ার প্রতি ঘনিষ্ঠতা চীনের কৌশলগত পরিকল্পনাকে ব্যাহত করেছে। যদিও বড় ধরনের মৈত্রী পরিবর্তন এখনও অনিশ্চিত, যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার সম্পর্কের নতুন গতিধারা বেইজিংয়ের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। ভবিষ্যতে পরিস্থিতি কেমন হবে, তা নির্ভর করবে চীনের কূটনৈতিক পদক্ষেপের ওপর।

তথ্যসূত্রঃ সিএনএন

আবীর

×