ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৯ ফাল্গুন ১৪৩১

জয়শঙ্করকে ঢাকা সফরে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ॥ তৌহিদ হোসেন

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক উন্নত করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ

কূটনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৪৯, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক উন্নত করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ

ভারত ও বাংলাদেশের টানাপোড়েন

ভারত ও বাংলাদেশের টানাপোড়েন কমাতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। বৈঠকে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। 
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ওমানের রাজধানী মাস্কাটে ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনের সাইড লাইনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন তৌহিদ হোসেন। এই বৈঠককালে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানান তিনি।
সাংবাাদিকদের তৌহিদ হোসেন বলেন, আমি তাকে (জয়শঙ্কর) আমন্ত্রণ জানিয়েছি। বলেছি, আমাদের তো পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে, মন্ত্রী পর্যায়েও কিন্তু আমাদের একটা মেকানিজম আছে। আমি তাকে বলেছি, আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতবার আপনাদের দেশে গেছেন, এখন আপনার আসার কথা ঢাকায়। আপনি সময় জানালে আমরা ব্যবস্থা করব। আমন্ত্রণের বিষয়ে জয়শঙ্কর কী বলেছেন জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, তিনি ইতিবাচক।
তৌহিদ হোসেন বলেন, শুরুতে তো (অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর) যে টানাপোড়েন ছিল সেটা সবাই জানে। আমরা স্বীকারও করেছিলাম। ব্যবসা মোটামুটি পিকআপ করেছে। দেখা গেছে যে, আগের লেভেলে পৌঁছে গেছে, এগুলো ইন্ডিকেশন। কিছু টানাপোড়েন এখনো রয়ে গেছে, যেমন-ভিসাসহ কিছু সমস্যা আছে।

কিন্তু দুই পক্ষই আমরা মোটামুটি এ ব্যাপারে একমত হয়েছি যে, এগুলো সব দূর করে একটা গুড ওয়ার্কিং রিলেশনে আমাদের পৌঁছতে হবে। দুই দেশের টানাপোড়েনের বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, আমরা নির্দিষ্ট করে বলিনি যে, এই উদ্বেগ আছে। আমরা স্বীকার করেছি, কিছু উদ্বেগ রয়ে গেছে, এগুলো আমাদের দূর করতে হবে। দুই পক্ষ একমত এগুলো দূর করতে হবে, সম্পর্কটা যাতে উন্নত হয় সেটা দেখতে হবে।
ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরানোর আলোচনায় উপদেষ্টা বলেন, ওটা নিয়ে নির্দিষ্ট করে আলোচনা হয়নি। আমরা ইন জেনারেল সবগুলো নিয়ে কথা বলেছি।
শেখ হাসিনাকে সরিয়ে রেখে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে পাল্টা প্রশ্নে উপদেষ্টা  বলেন, সরিয়ে রাখার ব্যাপার না। কোর্ট চেয়েছে তাকে, আমরা অনুরোধ করেছি ফেরত দেওয়ার জন্য, তার মানে এই নয় যে আমরা বাকি সব কিছু নিয়ে বসে থাকব। সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি জানান, বাংলাদেশ ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে নানা প্রকল্পে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন বাতিলের সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের কিছুই করার নেই।
মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে অর্থায়ন বন্ধ করেছে এটাতে শুধু বাংলাদেশ নির্দিষ্ট নয়। আর এখানে এই মুহূর্তে আমাদের কিছুই করার নেই। আমি মনে করি, আমাদের দেখতে হবে এবং আমাদের বিকল্প উপায়ে কীভাবে সংগ্রাম করতে পারি, এটা দেখতে হবে। উল্লেখ্য, ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে নানা প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির সরকারি দক্ষতা বিভাগ (ডিওজিই) এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।
ইলন মাস্কের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন দপ্তর ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সির (ডিওজিই) এ অর্থায়ন বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক সাহায্যে বৃহত্তর কাটছাঁটের অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ডিওজিই বিভাগ থেকে বলা হয়েছে,  বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নেওয়া প্রকল্প ‘স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ ইন বাংলাদেশ’-এ ২ কোটি ৯০ লাখ ডলারের অর্থায়ন বাতিল করা হয়েছে।  আর ভারতে নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে ২১ মিলিয়ন ডলারের কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে।  
বাংলাদেশ-ভারত ছাড়া আরও ছয়টি দেশে অর্থায়ন বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে মোজাম্বিকের জন্য ১০ মিলিয়ন ডলার, কম্বোডিয়ার জন্য ২.৩ মিলিয়ন ডলার, সার্বিয়ার জন্য ১৪ মিলিয়ন ডলার, মলদোভায় ২২ মিলিয়ন ডলার, নেপালে দুটি উদ্যোগে ৩৯ মিলিয়ন ডলার এবং মালিতে ১৪ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্পের ওপর প্রভাব পড়বে। এ ছাড়া বিশ্বের আরও অনেক দেশ ও অঞ্চলও তহবিল বাতিলের এ তালিকায় রয়েছে।

×