
ইসরাইলি স্থলবাহিনীর ৪০ ভাগ কর্মকর্তা নির্বাচিত হয় উগ্র ইহুদিবাদী-খ্রিস্টান সামরিক স্কুল থেকে। এসব স্কুল উগ্র ইহুদিবাদী খ্রিস্টানদের পরিচালিত। আর এসব স্কুল থেকে পাস করা বা বের হওয়া বর্ণবাদী ছাত্ররা সেনা-কর্মকর্তা হিসেবে গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যায় ভূমিকা রেখেছে বলে ইসরাইলি সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর থেকেও স্পষ্ট হয়েছে। খবর পার্সটুডের।
গবেষণায় দেখা গেছে ইসরাইলি স্থলবাহিনীর ৪০ ভাগ কর্মকর্তা নির্বাচিত হয় উগ্র ইহুদিবাদী খ্রিস্টান সামরিক স্কুল থেকে। অথচ ১২০ আসনের ইসরাইলি সংসদ নেসেটে তাদের আসন রয়েছে মাত্র ১৩টি। এই গ্রুপের সেনারা যে কোনো সেনা অভিযান চালানোর আগে শত্রুর ধ্বংসের জন্য ইহুদিদের খোদার উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করে। গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যায় জড়িতদের বেশিরভাগই এই স্কুলের। এরা পৈশাচিক নির্যাতনের জন্য বেশ কুখ্যাত। বন্দিদের ওপর যৌন নির্যাতন ও ৭৮ বছরের বৃদ্ধ ফিলিস্তিনিকে হত্যার সঙ্গেও এই গ্রুপ জড়িত। ইয়াহুদা ভাচ ছিল বনি দাউদ নামক একটি সামরিক স্কুলের ছাত্র যেখানে শেখানো হতো যে হিটলার ভুল লক্ষ্য নির্বাচন করেছিল। এই উগ্র ইহুদিবাদী খ্রিস্টান গ্রুপের দখলে রয়েছে বহু সংবাদপত্র, রেডিও-টেলিভিশন এবং এরা বহু সরকারি অফিসের কাছ থেকে অর্থ পায়। ইসরাইলি সশস্ত্র বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পোস্টগুলোও এরাই নিয়ন্ত্রণ করে। ১৯৫৩ সাল থেকে একটি বিশেষ ধর্মীয় সামরিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এইসব উগ্র ইহুদিবাদী গড়ে তোলার কাজ চালিয়ে এসেছে। ১৯৬৭ সালে এদের একাডেমির সংখ্যা ছিল মাত্র তিনটি, ১৯৯০ সালে নাগাদ তা ১৩টিতে উন্নীত হয় এবং বর্তমানে এরকম একাডেমির সংখ্যা প্রায় ৯০টি । ইসরাইলি দৈনিক হারেৎজের ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদন ও একটি প্রবন্ধ থেকে জানা যায়, ইসরাইলি সেনাবাহিনীর ২৫২ নম্বর ব্রিগেডের প্রধান ইয়াহুদা ভাচ স্পষ্টভাবে এমন কিছু নির্দেশ দিয়েছেন যেগুলো গাজায় যুদ্ধ-অপরাধের দৃষ্টান্ত। ২০২৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর ইয়ানিউ কুউবুয়িচ এক প্রতিবেদন তৈরি করেছিলেন যার শিরোনাম ছিল- গাজায় কোনো বেসামরিক ব্যক্তি নেই, সবাই সন্ত্রাসী, নেতজারিম চেক পয়েন্টে নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের ব্যাপারে ইসরাইলি সেনাদের সাক্ষ্য। ২০২৫ সালের পয়লা জানুয়ারিতে প্রকাশিত প্রথম প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল- গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ ও ত্রাণ সহায়তা বন্ধ করা, নেতজারিম চেক পয়েন্টে মোতায়েন ইসরাইলি সেনাদের কমান্ডারের নির্দেশ। এ সম্পর্কে একটি প্রধান সম্পাদকীয় প্রকাশ করা হয় ২০২৫ সালের দোসরা জানুয়ারি। ওই সম্পাদকীয়টির শিরোনাম ছিল- ইয়াহুদা ভাচেন ব্যক্তিগত সেনা এবং ইসরাইলি সশস্ত্র বাহিনীর সামরিক কাঠামো ও বিদ্রোহী কমান্ডারদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বিভেদ বা দূরত্ব সৃষ্টি। আর এইসব প্রামাণ্য লেখা থেকে স্পষ্ট যে গাজার বাইত হানুন, জাবালিয়া ও আশপাশের শরণার্থী শিবিরগুলোতে পরিকল্পিতভাবে গণহত্যা চালানো হয়েছে। যে প্রামাণ্য রিপোর্টগুলোর কথা বলা হলো সেগুলো থেকে বোঝা যায় ইসরাইলি সেনা কমান্ডার গাজার অধিবাসীদের মানব-পশু হিসেবে উল্লেখ করেছে। আর এরই ভিত্তিতে নেতজারিম ক্রসিং পয়েন্টে একটি কল্পিত সীমারেখা টানা হয়েছে যে সীমানা আগেভাগে না জানিয়ে অতিক্রম করা মাত্র ফিলিস্তিনিরা মৃত্যুদণ্ডের শিকার হন। ইয়াহুদা ভাচের সুস্পষ্ট নির্দেশ অনুযায়ী এই সীমা অতিক্রমকারী ফিলিস্তিনি নারী, পুরুষ বা শিশু যেই হোক না কেন তার ওপর অবশ্যই গুলি চালাতে হবে। এই কমান্ডার বলেছিল- গাজায় কোনো বেসামরিক ব্যক্তি নেই, এরা সবাই সন্ত্রাসী। গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার দীর্ঘ পাঁচ মাস পর ইসরাইলের এইসব পদক্ষেপের কথা ফাঁস হয় যখন একদল ইসরাইলি সেনা ও কর্মকর্তা এই নৃশংস অপরাধযজ্ঞের ব্যাপারে শিহরিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেন যে তারা এ ব্যাপারে আর নীরব থাকবেন না।