ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৮ ফাল্গুন ১৪৩১

রিয়াদে ওয়াশিংটন-মস্কো বৈঠক

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের ইঙ্গিত

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:১১, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের ইঙ্গিত

রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ অবসান

রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ অবসান এবং ওয়াশিংটন-মস্কো সম্পর্কের বরফ গলাতে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার শহরটির দিরিয়াহ প্রাসাদে চার ঘণ্টা ধরে চলা বৈঠকে রাশিয়ার নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। এছাড়াও ছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ইউরি উশাকোভ। ৭২ বছর বয়সী ল্যাভরভ দুই দশকের বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রাশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ। আয়োজক দেশ সৌদি আরবের পক্ষে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুবরাজ ফয়সাল বিন ফারহান আল-সৌদ এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মুসায়েদ বিন মোহাম্মদ আল-আইবান উপস্থিত ছিলেন। মঙ্গলবারের বৈঠক শেষ হওয়ার পর রাশিয়া জানায়, মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক অত্যন্ত ইতিবাচক এবং গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। 
বৈঠকের পরদিন আজ বুধবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সৌদি আরব সফরের কথা রয়েছে। তবে তিনি রুশ-মার্কিন নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেবেন কি না তা আপাতত স্পষ্ট হওয়া যায়নি।  রুশ কর্মকর্তা কিরিল দিমিত্রিয়েভ বলেন, অত্যন্ত ইতিবাচক ও গঠনমূলক সংলাপ শুরু হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, রাশিয়ার অবস্থান কখনই শোনার চেষ্টা করেনি জো বাইডেন প্রশাসন। বরং সংলাপ শুরু করার, রাশিয়ার অবস্থান বোঝা ও আমরা যেসব বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করি, সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য অত্যন্ত পরিষ্কার প্রচেষ্টা ছিল এই বৈঠকে।
উল্লেখ্য, তিন বছর আগে রুশ-ইউক্রেন সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরুর পর এই প্রথমবারের মতো বিশ্বের শীর্ষ পরাশক্তি রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বৈঠক। এই বৈঠকে ইউক্রেন ও ইউরোপের কোনো প্রতিনিধিকে রাখা হয়নি। খবর আলজাজিরা,  বিবিসি ও সিএনএন অনলাইনের।    
হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই বৈঠক সমঝোতা আলোচনা শুরু করার জন্য নয়; বরং ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে রাশিয়া ‘আন্তরিক’ কি না, সেটা বোঝার জন্য এই আলোচনা। রাশিয়া বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ওপর অগ্রাধিকার দিচ্ছে পুতিন প্রশাসন।  
বৈঠক শুরুর আগে উভয় পক্ষ জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর দুই দেশের প্রথম উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক। এই বৈঠক থেকে যুগান্তকারী কোনো সিদ্ধান্ত বা উদ্যোগ আসবে, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। রিয়াদের আলোচনা শুরুর আগেই কিয়েভসহ ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার জন্ম দিয়েছে।

ইউরোপের নেতারা ভাবছেন, তাদের পাশ কাটিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের উদ্যোগ নিয়েছেন ট্রাম্প ও পুতিন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানান, কিয়েভকে এই আলোচনায় আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
ইতোমধ্যে সোমবার প্যারিসে ইউরোপের নেতারা জরুরি আলোচনায় অংশ নেন। ওই বৈঠকের আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন, বৈপ্লবিক দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীতে ইউরোপের সমন্বিত কৌশল নির্ধারণ। রিয়াদের আলোচনায় ট্রাম্প-পুতিনের আসন্ন বৈঠকের প্রস্তুতিও স্থান পাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তিন বছরের ইউক্রেন যুদ্ধ দ্রুত থামাতে চাইছেন ট্রাম্প।

অপরদিকে, রাশিয়া চাচ্ছে তাদের দাবিগুলো পূরণ করে যুদ্ধ শেষ করতে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুয়ো জিয়াকুন ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্ট সব গোষ্ঠী ও অংশীজনরা আলোচনায় অংশ নেবেন। বৈঠকের আগে রাশিয়া জানায়, পুতিন ও ট্রাম্প অস্বাভাবিক সম্পর্কের বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসতে চান এবং উভয় নেতাই আলোচনার টেবিলে ইউরোপের অন্যান্য দেশের অংশ নেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা দেখেন না।
মঙ্গলবারের বৈঠক শুরুর আগে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, এই আলোচনায় প্রাথমিকভাবে রুশ-মার্কিন সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়টি স্থান পাবে। পাশাপাশি, ইউক্রেন যুদ্ধের সমাধানের জন্য সম্ভাব্য দরকষাকষি ও দুই দেশের প্রেসিডেন্টের বৈঠক আয়োজনও আলোচনায় স্থান পাবে বলে যোগ করেন পেসকভ। সংশ্লিষ্টদের মত, এই বৈঠকে সম্ভবত ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা আসবে না।

মার্কিন কর্মকর্তারা এই বৈঠককে ‘দীর্ঘ প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ হিসেবে বর্ণনা দেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, এই বৈঠক শেষে (যুদ্ধ বন্ধের) দরকষাকষি বা অন্য কোনো উদ্যোগের বিস্তারিত জানা যাবে, এমনটা ভাবা উচিত নয়। রুশ কূটনীতিক উশাকভ জানান, ইউক্রেনে দরকষাকষি কিভাবে শুরু হবে, সেটা নিয়ে এই বৈঠকে আলোচনা হবে।

একইদিন ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রয়োজনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে  আলোচনায় রাজি আছেন পুতিন। যুদ্ধ অবসানে দরকার হলে এই আলোচনা হতে পারে বলে নিশ্চিত করেছেন ক্রেমলিন। ক্রেমলিন বলেছেন, রুশ নেতা পুতিন জেলেনস্কির সঙ্গে ‘প্রয়োজনে’ কথা বলতে প্রস্তুত আছেন।

তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে জেলেনস্কির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ক্রেমলিন। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ বলেন, পুতিন নিজেই বলেছেন যে, প্রয়োজনে তিনি জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রস্তুত থাকবেন। তবে চুক্তির আইনি ভিত্তি হিসেবে জেলেনস্কির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে, এমন বাস্তবতা বিবেচনা করে আলোচনার প্রয়োজন আছে।

সম্প্রতি পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনে আলোচনার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, অবিলম্বে ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে তারা আলোচনা শুরু করবেন। টেলিফোনে আলাপকালে বিশ্বের শীর্ষ ক্ষমতাধর এই দুই রাষ্ট্রনেতা মধ্যপ্রাচ্য সংকট, জ্বালানি, মার্কিন ডলার এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়েও আলোচনা করেন।

×