
ছবি: সংগৃহীত।
পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে মাত্র ১৩ বছর বয়সী গৃহকর্মী ইকরা হত্যাকাণ্ডে পুরো দেশজুড়ে ক্ষোভ ও প্রতিবাদ দেখা দিয়েছে। অভিযোগ অনুসারে, চকলেট চুরির সন্দেহে ইকরা তার নিয়োগকর্তাদের হাতে মারাত্মক নির্যাতনের শিকার হন। গুরুতর আঘাত নিয়ে হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানেই তিনি মারা যান।
ইকরার নিয়োগকর্তা, আট সন্তানবিশিষ্ট এক দম্পতি, এবং একজন কোরআন শিক্ষককে এই ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ইকরার শরীরে একাধিক জখম ও হাড় ভাঙার চিহ্ন পাওয়া গেছে। তার মাথায় গুরুতর আঘাতের প্রমাণও রয়েছে। তদন্তে আরও জানা গেছে যে, ইকরা নিয়মিত নির্যাতনের শিকার হতেন।
ইকরা মাত্র আট বছর বয়স থেকে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। তার ৪৫ বছর বয়সী কৃষক পিতা জানান, দেনা পরিশোধ করতে বাধ্য হয়ে ইকরাকে কাজের জন্য পাঠিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “আমি ফোনে জানতে পারি মেয়ের অবস্থা খারাপ। হাসপাতালে গিয়ে দেখি সে অচেতন অবস্থায় বিছানায়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই সে মারা যায়।”
ইকরার মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। এক্টিভিস্ট শেহর বানো X-এ লিখেছেন, “আমার হৃদয় ভেঙে গেছে। এমন অমানবিক আচরণ প্রতিদিন কতজনকে সহ্য করতে হচ্ছে?” এক পাকিস্তানি নাগরিক মন্তব্য করেন, “সে কি শুধুই চকলেটের জন্য মারা গেল?”
ইকরার নিয়োগকর্তা রাসিদ শফিক ও তার স্ত্রী সানার বিরুদ্ধে হত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে। কোরআন শিক্ষক, যিনি ইকরাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ চূড়ান্ত চিকিৎসা প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছে। ইকরার পিতা বলেন, “আমি চাই, যারা আমার মেয়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী, তাদের কঠোর শাস্তি হোক।”
একই সময়ে, আরেক ১৩ বছর বয়সী মেয়ে তাইয়াবার ওপর নির্যাতনের খবর পাওয়া গেছে। চিকিৎসকদের মতে, তার শরীরে পোড়ার চিহ্ন, কাটাছেঁড়া এবং চোখে আঘাতের দাগ রয়েছে। আদালতে তাইয়াবা জানিয়েছে, ঝাড়ু হারানোর অভিযোগে তাকে মারধর করা হয়।
পাকিস্তানে শিশু শ্রম ও গৃহকর্মীদের নির্যাতন নতুন নয়। ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে প্রায় ৩.৩ মিলিয়ন শিশু শ্রমিক রয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে গৃহকর্মে নিযুক্ত নারী ও তরুণীদের শিকার হতে হয়। পাকিস্তানের আইন অনুযায়ী গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী পরিবার আর্থিক সমঝোতার মাধ্যমে অপরাধীদের ক্ষমা করতে পারে, যা এই ধরনের ঘটনা বাড়িয়ে তুলছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
সূত্র: বিবিসি
সায়মা ইসলাম