
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে আরও ৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর ফলে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ৪৮ হাজার ২৭০ ছাড়িয়ে গেছে। দীর্ঘ ১৫ মাসের বেশি সময় পর গত মাসেই ফিলিস্তিনের গাজায় কার্যকর হয়েছে যুদ্ধবিরতি চুক্তি। তবে এরপর থেকেই সেখানে ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে একের পর এক উদ্ধার হচ্ছে নিহতদের লাশ। আর এতে করে বেড়েই চলেছে প্রাণহানির সংখ্যা। সোমবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
বার্তাসংস্থাটি বলছে, ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্যকর্মী ও উদ্ধারকর্মীরা গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে আরও ৬ জনের লাশ উদ্ধার করেছেন। এর ফলে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের গণহত্যামূলক যুদ্ধে নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ৪৮ হাজার ২৭১ জনে পৌঁছেছে বলে রোববার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আরও ৫ জন আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এতে করে ইসরাইলি আক্রমণে আহতের সংখ্যা ১ লাখ ১১ হাজার ৬৯৩ জনে পৌঁছেছে। অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে থাকলেও উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না। গাজায় গত ১৯ জানুয়ারি থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। তিন পর্যায়ের এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যে বন্দি বিনিময় এবং স্থায়ী শান্তি, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরাইলি বাহিনী প্রত্যাহারের লক্ষ্যমাত্রাও রয়েছে। মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব থাকা সত্ত্বেও ইসরাইল দীর্ঘদিন ধরে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছিল।
জাতিসংঘের মতে, ইসরাইলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। এ ছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
পশ্চিম তীরে প্রায় ১০০০ নতুন অবৈধ বাড়ি নির্মাণ করছে ইসরাইল ॥ ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরে প্রায় এক হাজার অবৈধ বসতি স্থাপনকারী বাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে ইসরাইল। অধিকৃত পশ্চিম তীরের বেথলেহেমের দক্ষিণে অবস্থিত একটি কৌশলগত এলাকা ইফ্রাত বসতিতে নতুন এসব অবৈধ আবাসন ইউনিট নির্মাণের জন্য একটি দরপত্র জারি করেছে নেতানিয়াহুর দেশ।
জানা গেছে, এসব এলাকায় ৯৭৪টি আবাসন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে ইসরাইলের। ইসরাইলি ওয়াচডগ পিস নাউয়ের তথ্য অনুসারে, নতুন এসব আবাসন তৈরির ফলে ওই অঞ্চলে বাসিন্দাদের সংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বলছে, ইফ্রাত বসতির ফলে দক্ষিণে একটি পরিকল্পিত বেথলেহেম মেট্রোপলিসের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। ইসরাইল যদি এলাকাটিকে সংযুক্ত করতে চায়, তবে এটি সমগ্র দক্ষিণ-পশ্চিম তীরের অংশের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হবে, যা হাইওয়ে ৬০-এর বেথলেহেমের মাধ্যমে উত্তরের সংযোগের ওপর নির্ভর করে।
গাজা যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ অবশ্যই শুরু হবে ॥ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ বলেছেন, ইসরাইল-হামাস যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা কিছু জটিলতার সম্মুখীন হলেও এটি ‘অবশ্যই শুরু হতে যাচ্ছে’ এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এটি বাস্তবায়ন দেখতে চান।
ফক্স নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে উইটকফ বলেন, তিনি ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আল থানি এবং মিশরের গোয়েন্দা প্রধান হাসান রাশাদের সঙ্গে ‘অত্যন্ত ফলপ্রসূ ও গঠনমূলক’ ফোনালাপ করেছেন। আলোচনায় দ্বিতীয় ধাপের সময়কাল, উভয় পক্ষের অবস্থান এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় ধাপ একটু বেশি জটিল, কারণ এটি যুদ্ধের অবসান ঘটানোর পাশাপাশি গাজায় হামাসের ক্ষমতা বিলুপ্ত করার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করে।’ তবে চুক্তিতে হামাসকে ক্ষমতা থেকে সরানোর কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই।
ট্রাম্পের গাজা দখলের পরিকল্পনা নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে উইটকফ বলেন, ‘নতুন ধারণা নিয়ে আসলে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়, তবে এটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা উসকে দিয়েছে। এখন মিশর ও জর্ডান নিজেদের পরিকল্পনার কথা বলছে, যা ইতিবাচক। ট্রাম্পের মূল লক্ষ্য হলো গাজার প্রায় ২০ লাখ জনগণের পুনর্বাসনের উপযুক্ত স্থান নির্ধারণ করা। সম্ভাব্য বিকল্পের মধ্যে মিশর ও জর্ডানের পাশাপাশি আরও কিছু দেশ রয়েছে, যারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানবিক প্রচেষ্টায় অংশ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।’