
ছবি: সংগৃহীত।
দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক মঞ্চে ভারত ক্রমেই একঘরে হয়ে পড়ছে। দিল্লির দীর্ঘমেয়াদি কূটনৈতিক কৌশলে দেখা দিয়েছে বড় ধরনের ফাটল। সীমান্তে উত্তেজনা তুঙ্গে, আর অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ বাড়ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির তিন মেয়াদের শাসনে।
এই সংকট একদিনে তৈরি হয়নি। গত এক দশকে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অনেকটাই বদলেছে। মোদি সরকার হিন্দুত্ববাদ এবং উগ্র জাতীয়তাবাদকে প্রাধান্য দিয়ে দেশ পরিচালনা করলেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। এর সাম্প্রতিক উদাহরণ বাংলাদেশ ইস্যু।
২০২৪ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয়। দিল্লির ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে হাসিনার বিদায় ভারতের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি নৈতিকতার প্রশ্ন তুলেছে, তবে মিত্রকে এভাবে ফিরিয়ে দিলে কূটনৈতিক শিষ্টাচার রক্ষা হবে কিনা, তা নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে ভারতের সংসদেও প্রশ্ন উঠেছে—শেখ হাসিনাকে কবে বাংলাদেশে ফেরানো হবে।
বাংলাদেশ সংকটের রেশ কাটতে না কাটতেই কাশ্মীর ইস্যু মোদির সরকারের জন্য নতুন দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠেছে। জম্মু-কাশ্মীরের লাইন অব একচুয়াল কন্ট্রোলে (এলএসি) উত্তেজনা চরমে। সীমান্ত পার হয়ে গুলির শব্দে ভারতের সেনারা রাতের ঘুম হারাম করছে। দিল্লির দাবি, পাকিস্তান গোপনে সীমান্তে যুদ্ধ শুরু করেছে। যদিও ইসলামাবাদ এই অভিযোগ নিয়ে নীরব।
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির সরাসরি ঘোষণা দিয়েছেন, “কাশ্মীর একদিন পাকিস্তানের হবে।” প্রয়োজনে তারা আরও দশটি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই ভারত-আমেরিকার যৌথ বিবৃতিতে পাকিস্তানের ওপর নতুন চাপ তৈরি হয়েছে। হোয়াইট হাউসের বৈঠকের পর প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদ দমনের আহ্বান জানানো হয়। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইসলামাবাদ।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এ বিবৃতিকে বিভ্রান্তিকর বলে আখ্যা দিয়েছেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শফকাত আলী খান বলেন, “সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাকিস্তান অনেক আত্মত্যাগ করেছে, যা সম্পূর্ণ উপেক্ষিত হয়েছে।”
এই কূটনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। সীমান্তে যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং কূটনৈতিক চাপের মুখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একচ্ছত্র আধিপত্য ধরে রাখা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের অবস্থান এখন অনেকটাই চ্যালেঞ্জের মুখে।
সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=30Kzvpfrk34
সায়মা ইসলাম