ছবি; সংগৃহীত
ইতালিতে উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশি তরুণদের লিবিয়ায় আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায় এবং নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত মানবপাচার চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন মাদারীপুরের রাজৈরের লিপন মাতুব্বর (৩৫) ও ফরিদপুরের ভাঙ্গার আনোয়ার ওরফে আনো মাতুব্বর (৪৫)। মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) র্যাবের গোয়েন্দা শাখা, র্যাব-৩ ও র্যাব-১০ এর যৌথ অভিযানে রাতে রাজধানীর ভাটারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে লিপন মাতুব্বরকে।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঢাকার দোহার থেকে আনোয়ারকে গ্রেফতার করা হয়। বিকালে কেরানীগঞ্জের র্যাব-১০ ব্যাটালিয়ান সদরদফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-১০ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।
মানবপাচারের ভয়াবহ তুলে ধরে র্যাব-১০ এর অধিনায়ক বলেন, মানবপাচার চক্রের এই সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে ইতালি যাওয়ার লোভ দেখিয়ে বেকার যুবকদের ফাঁদে ফেলছে। ইতোমধ্যে তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে এবং পুরো চক্রটিকে আইনের আওতায় আনার জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও মাদারীপুরের রাজৈরের কয়েকজন ইতালি গমনকারী ব্যক্তির মৃতদেহের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি দেশজুড়ে আলোড়ন তোলে।
ভুক্তভোগীদের পরিবার আদম ব্যবসায়ীদের বাড়িতে গিয়ে অভিযোগ করলে তারা বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। পরে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানায় মিন্টু হাওলাদার এবং মাদারীপুরের রাজৈর থানায় নাজমিন বেগম পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন।
অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, গ্রেফতারকৃত লিপন মাতুব্বরের ভাই তপন ওরফে মাসুদ মাতুব্বর লিবিয়া প্রবাসী। লিপন তার ভাইয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার ইচ্ছুক ব্যক্তিদের সংগ্রহ করত। জনপ্রতি ১৬ লাখ টাকার চুক্তিতে তাদের লিবিয়া পাঠানো হতো।
ভুক্তভোগীদের মাদারীপুর থেকে বাসে ঢাকায় এনে বিমানবন্দরে অবস্থানরত দালালদের কাছে হস্তান্তর করা হতো। এরপর লিবিয়ায় নিয়ে আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন চালানো হতো এবং নির্যাতনের ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠিয়ে মুক্তিপণ দাবি করা হতো। টাকা পরিশোধের পর তাদের নৌকায় করে ইতালির উদ্দেশে রওনা করানো হতো। নৌকা ডুবে বা নির্যাতনে অনেকেই মারা যান।
গ্রেফতারকৃত লিপন মাতুব্বর স্বীকার করেছেন, তিনি এ পর্যন্ত অন্তত ছয় থেকে সাতজনকে ইতালি পাঠানোর জন্য লিবিয়ায় পাঠিয়েছেন। পেশায় রংমিস্ত্রি হলেও গত তিন-চার মাস ধরে মানবপাচারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। গ্রেফতারকৃত আনোয়ার ওরফে আনো মাতুব্বর কৌশলে ফরিদপুরের হৃদয় হাওলাদারকে ইতালিতে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ১৬.৫ লাখ টাকায় চুক্তি করেন। হৃদয়ের পরিবার ১.৫ লাখ টাকা এবং পাসপোর্ট আনোয়ারের কাছে হস্তান্তর করে।
নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে হৃদয় লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর পরিবারকে জানায়, তাকে সেখানে আটকে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে এবং ১৫ লাখ টাকা না দিলে তার ক্ষতি হবে। পরিবারের সদস্যরা টাকা পরিশোধ করলেও হৃদয়কে ছাড়েনি চক্রটি। বরং আরও ১০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। বাধ্য হয়ে হৃদয়ের পরিবার ৫ লাখ টাকা আরও পরিশোধ করে।
জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে হৃদয় পরিবারকে ফোনে জানায়, তাকে লিবিয়ার সাগরপাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এরপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হৃদয়ের মৃতদেহের ছবি দেখতে পায় তার পরিবার।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং তদন্তের মাধ্যমে পুরো চক্রটিকে চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে বলে জানিয়েছে র্যাব।
শহীদ