ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৯ মাঘ ১৪৩১

ঝাড়খণ্ডের গেড্ডায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ক্ষমতা ১৬০০ মেগাওয়াট

গরমের সময় আদানির বিদ্যুতের পুরোটাই চায় বাংলাদেশ

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:০১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

গরমের সময় আদানির বিদ্যুতের পুরোটাই চায় বাংলাদেশ

আদানির বিদ্যুতের পুরোটাই চায় বাংলাদেশ

ভারতের আদানি পাওয়ারের ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনের পুরোটাই চাইছে বাংলাদেশ। গ্রীষ্মের বিদ্যুৎ সংকট সামাল দিতে সরকার আদানিকে তাদের বিদ্যুৎকেন্দ্র পূর্ণ সক্ষমতায় চালুর আহ্বান জানিয়েছে। বাংলাদেশের এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এর আগে, টানা তিন মাসের বেশি সময় ধরে আদানি বাংলাদেশে ঝাড়খ-ের গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সক্ষমতার খুব সামান্যই সরবরাহ করছিল।

মূলত বাংলাদেশে শীতকালে বিদ্যুতের কম চাহিদা ও বকেয়া পরিশোধের জটিলতার কারণে সরবরাহ অর্ধেক করা হয়েছিল। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন, তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে আদানি বাংলাদেশে কম বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল। শীতের মৌসুমে কম চাহিদা ও অর্থ পরিশোধ সংক্রান্ত বিরোধের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে নেমে আসে।
২০১৭ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাক্ষরিত ২৫ বছরের চুক্তির অধীনে আদানি ভারতের ঝাড়খ-ে অবস্থিত ২ বিলিয়ন ডলারের গেড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট নিয়ে গঠিত এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদিত সম্পূর্ণ বিদ্যুৎই বাংলাদেশে সরবরাহ করা হয়।
বৈদেশিক মুদ্রার সংকট মোকাবিলার কারণে বাংলাদেশের বিল পরিশোধে বিলম্ব হওয়ায় আদানি ৩১ অক্টোবর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে নামিয়ে আনে। এর ফলে ১ নভেম্বর একটি ইউনিট বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি মাত্র ৪২ শতাংশ সক্ষমতায় পরিচালিত হতে থাকে। পরে বাংলাদেশও আদানিকে অর্ধেক বিদ্যুৎ সরবরাহে করতে বলে।
রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) জানিয়েছে, বকেয়া পরিশোধের জন্য তারা প্রতি মাসে আদানিকে ৮৫ মিলিয়ন ডলার করে দিচ্ছে এবং এখন কোম্পানিটিকে দুই ইউনিট থেকেই বিদ্যুৎ পুনরায় সরবরাহের জন্য বলেছে।
বিপিডিবির চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘সাম্প্রতিক চাহিদা অনুসারে তারা দ্বিতীয় ইউনিট চালুর পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু অনেক বেশি কম্পনের কারণে তা সম্ভব হয়নি।’ তিনি জানান, সোমবার ইউনিটটি পুনরায় চালু করতে গিয়ে কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে আমরা প্রতি মাসে ৮৫ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করছি। আরও বেশি পরিশোধের চেষ্টা চলছে এবং বকেয়া কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এখন আদানির সঙ্গে কোনো বড় সমস্যা নেই।’
এ বিষয়ে আদানির একজন মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেননি।
গত ডিসেম্বরে আদানির একটি সূত্র জানায়, বিপিডিবির কাছে আদানির পাওনা প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার। তবে করিম সে সময় দাবি করেছিলেন, বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৬৫০ মিলিয়ন ডলার।
বিদ্যুতের ট্যারিফ নির্ধারণ নিয়ে বিরোধের কেন্দ্রবিন্দু হলো ২০১৭ সালের চুক্তি, যেখানে দুটি সূচকের গড়ের ভিত্তিতে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদানি থেকে নেওয়া বিদ্যুতের মূল্য ভারত থেকে সরবরাহকৃত অন্য কেন্দ্রের বিদ্যুতের মূল্যের তুলনায় ৫৫ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশের আদালত আদানির সঙ্গে করা চুক্তি পর্যালোচনার নির্দেশ দেন এবং এর জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পর্যালোচনার ফলাফল চলতি মাসেই প্রকাশ পেতে পারে। এর ওপর ভিত্তি করে চুক্তি পুনঃআলোচনার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।
গত বছর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালে সরকার আদানির বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির শর্ত ভঙ্গের অভিযোগ করেছিল। অভিযোগটি ছিল যে, ঝাড়খ- প্ল্যান্ট ভারতীয় সরকারের কাছ থেকে পাওয়া কর সুবিধা বাংলাদেশকে না দেওয়ায় চুক্তির শর্ত লঙ্ঘিত হয়েছে। রয়টার্স গত ডিসেম্বরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট নথির উদ্ধৃতি দিয়ে এ তথ্য প্রকাশ করে।
বাংলাদেশের কর্মকর্তারা তখন জানান, তারা চুক্তিটি পর্যালোচনা করছেন। তবে, আদানির এক মুখপাত্র সে সময় রয়টার্সকে বলেন, তারা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে করা চুক্তির সব শর্ত মেনে চলেছে এবং তাদের কাছে চুক্তি পর্যালোচনার কোনো আনুষ্ঠানিক ইঙ্গিত আসেনি।
এদিকে, দুই পক্ষের মধ্যে মতপার্থক্য নিরসন হয়েছে কি না, সে বিষয়ে রয়ট র্সের প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি বিপিডিবির চেয়ারম্যান রেজাউল করিম।
গত নভেম্বরে, মার্কিন প্রসিকিউটররা আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা গৌতম আদানি ও কোম্পানিটির আরও সাতজন নির্বাহীর বিরুদ্ধে ভারতে ২৬৫ মিলিয়ন ডলারের ঘুষ কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগ আনেন। তবে, আদানি গ্রুপ এই অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উল্লেখ করে।
এর আগে, গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটি, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে স্বাক্ষরিত প্রধান প্রধান জ্বালানি চুক্তিগুলো পর্যালোচনা করছে।

×