![কি আছে পৃথিবী অষ্টম আশ্চর্যে? কি আছে পৃথিবী অষ্টম আশ্চর্যে?](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/13-72-2502111412.jpg)
ছবি: সংগৃহীত
লিবিয়ার 'গ্রেট ম্যান-মেড রিভার' প্রকল্পটি বিশ্বের বৃহত্তম সেচ প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি, যা সাহারা মরুভূমির গভীরে অবস্থিত প্রাচীন ভূগর্ভস্থ জলাধার থেকে লিবিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে উচ্চমানের মিঠা পানি সরবরাহ করে। এই প্রকল্পটি লিবিয়ার জনবহুল উত্তরাঞ্চলীয় শহরগুলোতে, যেমন ত্রিপোলি, বেনগাজি, সির্তে ইত্যাদিতে প্রতিদিন প্রায় ৬.৫ মিলিয়ন ঘনমিটার পানি সরবরাহ করে, যা দেশের মোট মিঠা পানির চাহিদার ৭০% পূরণ করে।
১৯৫০-এর দশকে লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে তেল অনুসন্ধানের সময় বিশাল পরিমাণে প্রাচীন মিঠা পানির সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর ১৯৮৪ সালে 'গ্রেট ম্যান-মেড রিভার' প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রকল্পটি পাঁচটি পর্যায়ে বিভক্ত ছিল, যার প্রথম পর্যায়ের উদ্বোধন হয় ১৯৯১ সালে এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ সম্পন্ন হয় ১৯৯৬ সালে। লিবিয়ার তৎকালীন নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি এই প্রকল্পটিকে "পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য" হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে সাহারা মরুভূমির গভীরে অবস্থিত নুবিয়ান স্যান্ডস্টোন অ্যাকুইফার সিস্টেম থেকে পানি উত্তোলন করে লিবিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। প্রকল্পটি প্রায় ২,৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন এবং ১,৩০০টিরও বেশি কূপ নিয়ে গঠিত, যা লিবিয়ার কৃষি, শিল্প এবং গৃহস্থালী কাজে মিঠা পানির চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
তবে, এই প্রকল্পের পানি উৎস হলো প্রাচীন ফসিল পানি, যা পুনর্নবীকরণযোগ্য নয়। ফলে, এই পানির মজুদ সীমিত এবং বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি দীর্ঘমেয়াদে টেকসই নাও হতে পারে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, লিবিয়ার রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সংঘাতের কারণে প্রকল্পটির রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনায় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে। বিশেষ করে, ২০১১ সালের আরব বসন্তের সময় এবং পরবর্তীতে প্রকল্পটির অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা লিবিয়ার পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
বর্তমানে, 'গ্রেট ম্যান-মেড রিভার' প্রকল্পটি লিবিয়ার পানি সরবরাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়, তবে এর স্থায়িত্ব এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। প্রকল্পটির সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনা লিবিয়ার জনগণের জন্য নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মুহাম্মদ ওমর ফারুক