![সারাদেশে ১৩০৮ জন গ্রেপ্তার সারাদেশে ১৩০৮ জন গ্রেপ্তার](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/1-2502091753.jpg)
.
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে রাখতে সারাদেশে একযোগে পরিচালিত হচ্ছে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’। এ অপারেশন যৌথভাবে পরিচালনা করছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবি। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপারেশনে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ‘ডেভিল’ পুরোপুরি শেষ না হওয়া পর্যন্ত দেশব্যাপী চলবে এই সাঁড়াশি অভিযান। পুলিশ সদর জানায়, চলমান অভিযানে রবিবার সারাদেশে মোট ১৩০৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশকে যারা অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে তাদের ‘ডেভিল হান্ট’ অপারেশনের আওতায় গ্রেপ্তার করা হবে। সন্ত্রাসীরা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন নষ্ট করতে না পারে সে জন্য এ অপারেশন পরিচালনা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে পুলিশের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদেরও চিহ্নিত করে তালিকা তৈরি হচ্ছে। এই সকল পুলিশের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেবে সরকার। এদিকে আইনশৃঙ্খলা পর্যবেক্ষণে রবিবার সন্ধ্যা থেকে কমান্ড সেন্টারের যাত্রা শুরু করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে এ কমান্ড সেন্টারটি পরিচালিত হচ্ছে। বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন। সেন্টারটির সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনী-পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, কোস্ট গার্ড, আর্মডফোর্স ব্যাটালিয়নের সদস্যরা যুক্ত রয়েছেন।
ইংরেজি শব্দ ডেভিল অর্থ শয়তান আর হান্ট অর্থ শিকার। ফলে ডেভিল হান্ট-এর অর্থ দাঁড়ায় শয়তান শিকার করা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষিত ডেভিল হান্ট বলতে দেশবিরোধী চক্র, সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতকারীদের বোঝানো হয়েছে। এ বিষয়ে রবিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি বলেন, প্রতিটি অপারেশনের একটি ‘কোড নেম’ দেওয়া হয় অপারেশনকে ফোকাস করার জন্য। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা যায়, অপারেশন ডেভিল হান্টের প্রথম রাতে গাজীপুর জেলার পাঁচটি থানায় সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকা-ের অভিযোগে আওয়ামী লীগের ৪০ জন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশনায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য রবিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে যাত্রা শুরু করছে কমান্ড সেন্টার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে এ কমান্ড সেন্টারটি পরিচালিত হবে। সেন্টারটির সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনী-পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, কোস্ট গার্ড, আর্মডফোর্স ব্যাটালিয়নের সদস্যরা যুক্ত থাকবেন। রবিবার রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, রাজধানীসহ দেশের কোথাও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হলে কমান্ড সেন্টার থেকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ওই বৈঠকে বিভিন্ন বাহিনীর কার্যক্রমে (কোন বাহিনী কি কাজ করছে) সুষ্ঠুভাবে সমন্বয় সাধনের লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা একটি কমান্ড সেন্টার স্থাপনের নির্দেশ দেন।
অপারেশন ডেভিল হান্টের লক্ষ্য ॥ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে দেখা গেছে সন্ত্রাসীরা দেশকে অকার্যকরের উদ্দেশ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট করতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছে। তারা ষড়যন্ত্র করে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইছে। এর মধ্যে তাদের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেশে কয়েকটি সন্ত্রাসী কার্যক্রম সংঘটিত হয়েছে। তাই দেশের সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে এ অপারেশন শুরু করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর যৌথভাবে পরিচালিত এ অপারেশনের প্রাথমিকভাবে বেশ কয়েকটি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই লক্ষ্য পূরণে সারাদেশে একযোগে অপারেশন পরিচালনা করা হচ্ছে।
সূত্র আরও জানা যায়, এ লক্ষ্যগুলোর মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি কারা করছে এবং এ সন্ত্রাসীরা কীভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে সেগুলো শনাক্ত করা। শনাক্তের পর দেশব্যাপী অভিযান পরিচালনা করে সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা যেন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট করতে না পারে ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল এবং উন্নত করার লক্ষ্যে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ কাজ করবে। পাশাপাশি সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে গোয়েন্দাদের মাধ্যমে। পরে গোয়েন্দারা তথ্য দিলে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে দমন করা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সূত্র জানায়, একই সঙ্গে পুলিশের শুদ্ধি অভিযানও শুরু হয়েছে। দুর্নীতিবাজ পুলিশের তালিক তৈরি করা হচ্ছে। বর্তমানে পুলিশের যারা ঘুষের সঙ্গে জড়িত তাদের তালিক তৈরি করতে কাজ করছে পুলিশের বিশেষ ইউনিট। পাশাপাশি রয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। দুর্নীতিবাজ পুলিশের তালিকা তৈরি হলে তা যাচাই-বছাইয়ের পর প্রকৃত দুর্নীতিবাজ পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার। এমনকি চাকরিচ্যুতও করা হতে পারে। সকল সেক্টরে দুর্নীতিমুক্ত করতে পারলে দেশ দুর্নীতিমুক্ত হবে। এতে দেশও যেমন এগিয়ে যাবে, তেমনি বহির্বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।
অপারেশন ডেভিল হান্ট কী ও যে কারণে শুরু
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অপারেশন ডেভিল হান্ট একটি বিশেষ অভিযান। যা ৮ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে একযোগে শুরু হয়েছে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরে ছাত্র ও সাধারণ জনগণের ওপর সন্ত্রাসী হামলা করে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। এ হামলায় নেতৃত্ব দেয় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের কয়েক নেতাকর্মী। এ হামলায় বেশ কয়েকজন হতাহত হন এবং সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। ঘটনার পরপরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অন্য নিরাপত্তা সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বৈঠকে দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার সিদ্ধান্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ৮ ফেব্রুয়ারি অপারেশন ডেভিল হান্ট নামক বিশেষ অভিযান শুরু হয়।
সূত্র জানায়, সন্ত্রাস নির্মূলের এ অপারেশন পরিচালনা করবে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বাহিনীগুলো গোয়েন্দা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সারাদেশে একযোগে যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করবে। বাহিনীগুলোর মধ্যে রয়েছে পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবি।
সরকার এ অভিযানকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করেছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপারেশন ডেভিল হান্টের প্রাথমিক ধাপে বেশ কয়েক সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার হয়েছে এবং বেশ কিছু অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, এ অভিযান দীর্ঘমেয়াদি হবে এবং সন্ত্রাসবাদের মূল উৎপত্তিস্থল চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অপারেশন ডেভিল হান্ট নিয়ে যা বলছে বাহিনীগুলো ॥ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর সূত্রে জানা যায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অপারেশন ডেভিল হান্ট ঘোষণার পর সবগুলো বাহিনী একসঙ্গে সমন্বিতভাবে সারাদেশে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে। সব গোয়েন্দা তথ্য একসঙ্গে বিচার-বিশ্লেষণ করে নির্দিষ্ট টার্গেটকে সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে অপারেশন ডেভিল হান্টের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে এ অভিযানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বলা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী পুলিশ এ অভিযানের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পুলিশের সব ইউনিক একযোগে সারাদেশে এ অভিযানে অংশগ্রহণ করেছে এবং কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
অপারেশন ডেভিল হান্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্য বাহিনীগুলোর সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করছে র্যাব। এ বিষয়ে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের উপ-পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্বে পরিচালক) মেজর লুৎফুল হাদী বলেন, আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে যৌথভাবে অভিযানে কাজ করছি। আমরা গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে যৌথভাবে কাজ করছি। বিশেষ এ অপারেশনের বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, ঢাকা শহরের মানুষজনকে নিরাপদ রাখতে আমরা প্রতিনিয়ত জোরালোভাবে অভিযান পরিচালনা করছি। অপারেশন ডেভিল হান্ট শুরু হয়েছে। আমাদের অভিযানও জোরালো হয়েছে। ঢাকা শহরের মানুষজন যেন নিরাপদে থাকতে পারে এবং স্থিতিশীল পরিবেশে থাকতে পারে, সে জন্য আমি যোগদান করার পর থেকে নিয়মিত সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালনা করছে ডিবি।
অপারেশন ডেভিল হান্টের বিষয়ে যা বলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ॥ রবিবার রাজধানীর ফার্মগেটের মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউটের নতুন মৃত্তিকা ভবন উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ডেভিল যতদিন শেষ না হবে ততদিন পর্যন্ত অপারেশন ডেভিল হান্ট চলবে। যারা দেশকে অস্থিতিশীল করবে তাদের টার্গেট করে ডেভিল হান্ট অপারেশন চলবে। গাজীপুরে যারা ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের অনেককেই আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তাড়াতাড়ি বাকিদেরও আনা হবে।
অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অপারেশন ডেভিল হান্ট সম্পর্কে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি বলেন, এটা পুলিশি অ্যাকশন। পুলিশ কাজ করবে এবং সেনাবাহিনী এতে সহায়তা করবে। যেসব দেশে বিপ্লব হয়েছে সেখানে পরাজিত শক্তিকে কেউ রাখেনি। এ সরকার অতটা অমানবিক হতে পারেনি। আমরা পুলিশকে রিফর্ম করেছি। পুলিশের কেউ ভয়ে এবং চাপে পড়ে অন্যায় করেছে। কিছু অতি উৎসাহী ছিল তারা পালিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেওয়া হচ্ছে। একটা বাহিনীর মনোবল ভেঙে গেছে। পুলিশে কিছু পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছি। আমরা চাই পুলিশ কোমর সোজা করে দাঁড়াক। এ জন্য তাদের অ্যাকটিভলি কাউন্সেলিং করছি।
তিনি বলেন, দেশকে যারা অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে তাদের ‘ডেভিল হান্ট’ অপারেশনের আওতায় গ্রেপ্তার করা হবে। পুলিশের কেউ কেউ ভয়ে ও চাপে পড়ে অন্যায় করেছে। পুলিশের মধ্যে কিছু অতিউৎসাহী ছিল তারা পালিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে আমরা চাই পুলিশ কোমর সোজা করে দাঁড়াক। যতদিন প্রয়োজন হয় ততদিন এই অপারেশন রাখা হবে। ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নিয়ে এক বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। তিনি বলেন, বিপ্লবের পর কেউ পরাজিত শক্তিকে রাখেনি জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি বলেন, আমরা অতটা অমানবিক হতে পারিনি।
ছয় মাস হয়ে যাওয়ার পরও মানুষ এখনো পুলিশের কাছে নিরাপত্তা পাচ্ছে নাÑ এ বিষয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, যে সব দেশে বিপ্লব হয়েছে, সেখানে পরাজিত শক্তিকে কেউ রাখেনি। আমরা অতটা অমানবিক হতে পারিনি। আমরা অনুভব করি কিছু লোক ভয়ের কারণে করেছে। কিছু যারা ডাইভার্ট ছিল তারা পালিয়ে গেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, যৌথভাবে সকলে মিলে অপারেশন ডেভিল হান্ট করা হচ্ছে। একটি ফোকাসডওয়েতে কিছু কাজ করবে। যেসব জায়গা থেকে দেশকে পরিস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হচ্ছে, সেটাকে আমরা নিউট্রালাইজ করব। সে জন্য আইনানুগ পন্থায় যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, সেগুলো নেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ। সে জন্য সব বাহিনীকে প্রস্তুত করা হয়েছে, ব্রিফিং করা হয়েছে এবং কাজও চলমান রয়েছে। আমরা আজও করেছি এবং এটা চলতে থাকবে।
সিনিয়র সচিব বলেন, আগে যে আকারে আইন প্রয়োগ করা হতো আমরা তো সেই পথে হাঁটতে পারব না। আমাদের আইনের স্পিরিট নিয়ে কাজটা করতে হবে। সরকার চায় পুলিশ কোমর সোজা করে দাঁড়াক জানিয়ে নাসিমুল গনি বলেন, পুলিশের কিছু পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছি। তাদের অ্যাকটিভলি কাউনসিলিং করছি।
তিনি বলেন, আমাদের সিস্টেমের মধ্যে যেন একটা ভালো প্র্যাকটিস রেখে যেতে পারি। আর যেন দেশে আয়নাঘর তৈরি না হয়। এ রকম পরিস্থিতি যাতে আর তৈরি না হয়। আমাদের সিস্টেমে যারা কাজ করবেন তারা যেন সঠিকভাবে কাজ করতে পারেন। আগামী ১১ তারিখ মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হবে। যেখানে ঢাকা ও গাজীপুরের ১৫০ জন কর্মকর্তা থাকবে। ডেভিল হান্টে কারা নেতৃত্ব দেবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা পুলিশি অ্যাকশন। পুলিশ কাজ করবে এবং সেনাবাহিনী এতে সহায়তা করবে।
ডেভিল হান্টে কেউ গ্রেপ্তার হয়েছে কি নাÑ জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা গতকাল থেকে কাজ শুরু করেছে। চট করে সবকিছু বলা যাবে না। যতদিন প্রয়োজন হয় ততদিন এই অপারেশন রাখা হবে। ডেভিল হান্ট অপারেশন যারা পরিচালনা করছে তাদের ক্ষমতা কতটুকুÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটের যে ক্ষমতা আছে সেই ক্ষমতাই পাবে।
নাসিমুল গনি বলেন, আমাদের সিস্টেমের মধ্যে যেন একটা ভালো প্র্যাকটিস রেখে যেতে পাবি। দেশে আর যেন ‘আয়নাঘর’ তৈরি না হয়। এ রকম পরিস্থিতি যাতে আর তৈরি না হয়। আমাদের সিস্টেমে যারা কাজ করবেন তারা যেন সঠিকভাবে কাজ করতে পারেন। ডেভিল হান্টে কারা নেতৃত্ব দিচ্ছে জানতে চাইলে নাসিমুল গনি বলেন, এটা পুলিশি অ্যাকশন। পুলিশ কাজ করবে এবং সেনাবাহিনী এতে সহায়তা করবে।
ডেভিল হান্টে কেউ গ্রেপ্তার হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা শনিবার থেকে কাজ শুরু করেছে। চট করে সব বলা যাবে না। যতদিন প্রয়োজন হয় ততদিন এই অপারেশন রাখা হবে। ডেভিল হান্টের তাৎপর্য কী প্রশ্নের উত্তরে সিনিয়র সচিব বলেন, প্রতিটি অপারেশনের একটি কোড নেম হয়। এটা অপারেশনকে ফোকাস করার জন্য। ৫ আগস্টের পর যাদের নামে মামলা হয়েছে তারা ডেভিল হান্টের আওতায় আসবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশ যখন ধরবে তখনই দেখতে পারবেন। ‘ডেভিল হান্ট’ প্রসঙ্গে নাসিমুল গনি বলেন, দেশের পরিস্থিতি অনেকেই অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। সেটাকে স্বাভাবিক করতে এই অপারেশন চালানো হবে। এটা একটা পুলিশ অ্যাকশন।
সিনিয়র সচিব বলেন, ছয় মাস আগে সরকার পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশের আইনশৃখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সারাদেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। সে সময় আমাদের পুলিশ বাহিনীর বেশ কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মানসিক দুর্বলতা হয়েছে এবং বেশ কিছু সমস্যা হয়েছে। অনেক থানা পোড়ানে হয়েছিল। এসব কারণেই সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে কাজ করতে গিয়ে আমরা অনেক পরিকল্পনা নেই। এর অনেকগুলো চলমান আছে এবং অনেকগুলো প্রয়োগ করতে যাচ্ছি। তার একটা ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’।
তিনি বলেন, এই অপারেশনে যৌথভাবে সবাই মিলে একটা ফোকাসড ওয়েতে কিছু কাজ করবে। দেশের স্থিতিশীল অবস্থাকে অস্থিতিশীল করার যে চেষ্টা হচ্ছে সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এই অপারেশন চলবে। এর জন্য আইনানুগ পদ্ধতিতে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন সেটা নেওয়া হবে। সেটার জন্য সব বাহিনীকে প্রস্তুত ও ব্রিফিং করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের কাজ চলমান।
সিনিয়র সচিব বলেন, আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে আগে যে আকারে আইন প্রয়োগ করা হতো আমরা সেভাবে হাঁটতে পারব না। আইনের স্পিরিটে কাজটা করতে হবে। সে জন্য আইন প্রয়োগের সঙ্গে যারা জড়িত, সব স্টেকহোল্ডারকে একত্রিত হয়ে কীভাবে আইনটাকে প্রয়োগ করতে পারি সে বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
বিভিন্ন জেলায় ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ ও বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেপ্তার সহ¯্রাধিক ॥ অভিযানে গাজীপুর জেলায় ৮২ জন, নোয়াখালীতে ৭ জন ও চট্টগ্রামে ১৯ জনকে গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া খাগড়াছড়িতে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছেন।
এদিকে অপারেশন ডেভিল হান্ট ছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলা, হত্যা, পূর্বের বিভিন্ন মামলা ও অভিযোগে বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীসহ অভিযুক্তদের আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে গাজীপুরে ৩৪ জন, ঠাকুরগাঁয়ে ১৫ জন, কুষ্টিয়ায় ৩ জন, পাবনায় ২ জন এবং নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, হবিগঞ্জ, পটুয়াখালী, কুড়িগ্রাম ও সিরাজগঞ্জে একজন করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতার।
গাজীপুরে অপারেশন ডেভিল হান্ট অভিযানে রবিবার বিকেল পর্যন্ত ৮২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ৪২ জন এবং গাজীপুর জেলা পুলিশ ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করে। আটককৃতদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থক। দেশজুড়ে চলমান অপারেশন ডেভিল হান্টের অংশ হিসেবে অভিযান চালিয়ে তাদের জেলার বিভিন্ন স্থান হতে গ্রেপ্তার করা হয়।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) রিয়াজ উদ্দিন বলেন, গাজীপুর মহানগরের ৮টি থানা এলাকা হতে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত মোট ৪২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রবিবার দুপুর পর্যন্ত মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৩৪ জনকে মহানগরীর ধীরাশ্রম এলাকায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হকের পৈতৃক বাড়িতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় শনিবার বিকেল পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি বলেন, অপারেশন ডেভিল হান্ট চলমান রয়েছে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও র্যাবসহ যৌথ বাহিনীর সদস্যরা অপারেশন ডেভিল হান্ট পরিচালনা করেছে।
এদিকে গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মো. যাবের সাদেক জানান, গাজীপুরে অপারেশন ডেভিল হান্টের আওতায় অভিযান চলমান রয়েছে। শনিবার থেকে শুরু হওয়া অপারেশন ডেভিল হান্টে এখন পর্যন্ত (বিকেল সাড়ে ৪টা) ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেলার ৫টি থানা (কালীগঞ্জ, কাপাসিয়া, জয়দেবপুর, শ্রীপুর ও কালিয়াকৈর) এলাকা হতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। আটককৃতরা বিভিন্নভাবে ফ্যাসিস্ট সরকারের লোকজন। এ অভিযান জেলার সর্বত্র চলমান রয়েছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান বলেন, যারা জনগণকে ঘুমাতে দিবে না, দেশকে শান্তিতে থাকতে দিবে না বলে হুমকি দেয়-আমরা তাদের চিহ্নিত করছি। অবশ্যই তাদের আইনের আওতায় আনব। গাজীপুরে ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত সদর থানায় দুইটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হয়েছে ধীরাশ্রম এলাকায় ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনায় এবং অপরটি হয়েছে শহরের রাজবাড়ী সড়কে ছাত্রদের গুলি করার ঘটনায়। আমরা আশা করছি যারা জনগণকে অশান্ত করবে, যারা জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে, যারা জনগণকে ঘুমাতে দিবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে, তাদের প্রত্যেককে আমরা আইনের আওতায় আনব।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। রবিবার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের জেলা আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মুহিম বাদী হয়ে সদর থানায় এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় ২৩৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২শ’ থেকে ৩শ’ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় রবিবার বিকেল পর্যন্ত ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জিএমপি’র সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. সিদ্দিক হোসেন জানান, মহানগরীর ধীরাশ্রম এলাকায় লাঠিসোঁটা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা চালিয়ে প্রাণনাশের উদ্দেশে মারধর ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করার ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের জেলা আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মুহিম বাদী হয়ে রবিবার সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় ২৩৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২শ’ থেকে ৩শ’ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় রবিবার বিকেল পর্যন্ত ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, শনিবার সন্ধ্যার পর শহরের রাজবাড়ী সড়কে ছাত্রদের লক্ষ্য করে গুলি করার ঘটনায় এক ছাত্র আহত হন। এ ঘটনায় রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় মামলা দায়ের হয়নি। তবে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
চট্টগ্রাম ॥ মহানগর পুলিশ জানিয়েছে, ১৬ থানায় অভিযান চালিয়ে ১৯ জন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা রয়েছে। একইসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনারও আসামি তারা। অবশ্য পুলিশের এ অভিযান গত এক সপ্তাহ ধরে অব্যাহত রয়েছে।
শনিবার ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ সংক্রান্ত নির্দেশনার পরপরই রাতে যানবাহনে তল্লাশি শুরু হয় নগরী ও উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে। এছাড়া সন্দেহজনক গতিবিধি দেখলেই ব্যক্তি ও যানবাহনে তল্লাশির পাশাপাশি সন্ত্রাসী গ্রেপ্তারে এবং আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালনায় নিয়োজিত রয়েছে যৌথ বাহিনী।
নারায়ণগঞ্জ ॥ সোনারগাঁয়ে হেফাজতের মামলায় সাদিপুর ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা মামুন ভূঁইয়া (৩৮) কে গ্রেপ্তার করেছে সোনারগাঁ থানা পুলিশ। রবিবার সকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তার নিজ বাড়ি গুলনগর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ওসি আব্দুল বারী। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের গুলনগর গ্রামের মো. ইদ্রিস ভূঁইয়ার ছেলে।
কুমিল্লা ॥ দাউদকান্দিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত বাবু হত্যাকা-ের আসামি সুন্দলপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন আজিকে ঢাকা যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে দাউদকান্দি মডেল থানা পুলিশ। আলাউদ্দিন আজিজ (৪৭) দাউদকান্দি উপজেলার সুন্দলপুর ইউনিয়নের মুদাফ্ফরদি গ্রামের মৃত মনু মিয়া ছেলে। গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দাউদকান্দি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জুনায়েত চৌধুরী।
পটুয়াখালী ॥ কলাপাড়ায় লালুয়া ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দিন গাজীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার দিবাগত রাতে লালুয়া থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। কলাপাড়া থানার ওসি মোহাম্মদ জুয়েল ইসলাম জানান, শাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা রয়েছে। ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন।
ঠাকুরগাঁও ॥ পুলিশের বিশেষ অভিযানে ঠাকুরগাঁও জেলায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বিভিন্ন মামলায় ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার রাত থেকে রবিবার পর্যন্ত ঠাকুরগাঁও জেলার পাঁচটি উপজেলায় পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ঠাকুরগাঁও সদরের ভেলাজান গ্রামের মৃত ইব্রাহিমের ছেলে শামছুল হক (৫০)। দেহন গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে শাহাদৎ আলী (৪৭), দানার হাট গ্রামের গোলাম রব্বানীর ছেলে মেহেদী হাসান (২৫), হরিনারায়ণপুর (মাস্টারপাড়া) গ্রামের মৃত নুরুল হকের ছেলে ও সদর মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল আউয়াল (৫২) ।
পীরগঞ্জ থানায় পীরগঞ্জের পশ্চিম রঘুনাথপুর (মাস্টার মোড়) গ্রামের মৃত জিয়াউর রহমানের ছেলে ঋত্বিক রোশন রাব্বি (২০)। সনগাঁও গ্রামের আনসার আলীর ছেলে সাগর আলী (২২)।
রুহিয়া থানা, রুহিয়ার আসাননগর গ্রামের মৃত রফিজ উদ্দিন সরকারের ছেলে ও রাজাগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য তাহেরুল ইসলাম (৪৮), কশালগাঁও গ্রামের অসিব উদ্দিনের ছেলে ও রুহিয়া পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সাদেকুল ইসলাম (৪০)।
রাণীশংকৈল থানার কলেজপাড়া বন্দর গ্রামের বিষু বসাকের ছেলে স্বাধীন বসাক (৩০)। দোশিয়া গ্রামের ইসলাম উদ্দিনের ছেলে লুৎফর রহমান (৪০)। বালিয়াডাঙ্গী থানায় বালিয়াডাঙ্গীর বড়বাড়ি রূপগঞ্জ গ্রামের মৃত আব্দুল হাকিমের ছেলে সাজিদুর রহমান (সাজিদ) (৩৬), একই গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে ও বড়বাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জয়নুল হক (৪৩), মমিনটলা গ্রামের মৃত জের মোহাম্মদের ছেলে ও আমজানখোর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শাহেদ আলী (৫৫)। তোররা গ্রামের শামসুদ্দিন মিয়ার ছেলে জিন্নাহ আলী (৩৬), বড়বাড়ী (বুধু মেম্বার পাড়া) গ্রামের রশিদুল হকের ছেলে মাহাবুব আলম ওরফে বুধু আলম (৪৫)।
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারকৃতরা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী এবং বেশ কয়েকজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিও রয়েছেন। এদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এবং তদন্তের আওতায় রয়েছে।
পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম জানান,আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং অপরাধ দমন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এই বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলোর আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আদালতে পাঠানো হবে।
এ ছাড়াও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নাশকতা-সংক্রান্ত মামলাগুলোর ভিত্তিতে এই অভিযান পরিচালিত হয়।
সিরাজগঞ্জ ॥ উল্লাপাড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সেলিনা মির্জা মুক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। শনিবার রাতে সেলিনা মির্জাকে ঢাকায় তার মিরপুরের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পল্লবী থানা হস্তান্তর করে র্যাব। তাকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন করেছেন পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম।
হবিগঞ্জ ॥ শায়েস্তাগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলাকারী পলাতক আসামি কামরুজ্জামান আল রিয়াদকে আটক করেছে সেনাবাহিনী। তিনি জেলার শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার উবাহাটা গ্রামের আব্দুল কাইয়ূমের ছেলে পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক যুগান্তরের উপজেলা প্রতিনিধি। এ ছাড়া সে উপজেলা সাংবাদিক ফোরামের সাবেক সভাপতি ছিল। রবিবার সকালে এসব তথ্য নিশ্চিত করে শায়েস্তাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিলীপ কান্ত নাথ বলেন-শনিবার দিবাগত রাত পৌনে ১টায় আসামি রিয়াদকে থানায় হস্তান্তর করেছে সেনাবাহিনী।
খাগড়াছড়ি ॥ দেশব্যাপী ডেভিল হান্ট অভিযানের ঘোষণার পর শনিবার রাতে খাগড়াছড়ি জেলার গুঁইমারা উপজেলায় অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের চার নেতাকর্মী আটক করেছে পুলিশ। গুঁইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. এনামুল হক চৌধুরী জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সারাদেশে অভিযানের অংশ হিসেবে গুঁইমারা বড়পিলাক এলাকায় অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের চার নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
নোয়াখালী ॥ বর্তমান সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনী অপারেশন ডেভিল হান্টের অংশ হিসেবে আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান পরিচালনায় নিয়োজিত রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার দিবাগত রাতে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশ নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড ও পুলিশ যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। খবর আইএসপিআরের।
অভিযানে ৫নং চর ঈশ্বর ইউনিয়নের কুখ্যাত চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আল আজাদ, আব্দুল মাজেদ পলাশ, আব্দুল জাহের পিন্টু, সিরাজুল ইসলাম রাফসান ও আবুল কালাম বিটুকে আটক করা হয়। আটককৃতদের বিরুদ্ধে হাতিয়ায় ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকা-সহ বিভিন্ন ধরনের নাশকতামূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও আটককৃতরা ৬ ফেব্রুয়ারি ছাত্র-জনতার মিছিলে হামলার সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন রকমের দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। আটককৃত সন্ত্রাসী ও উদ্ধারকৃত অস্ত্রসমূহ পরবর্তীতে হাতিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়। উল্লেখ্য, ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ এর আওতায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর দায়িত্বপূর্ণ এলাকাসমূহে নিয়মিত টহল ও বিশেষ অভিযান চলমান রয়েছে।
এদিকে নিজস্ব সংবাদদাতা, নোয়াখালী থেকে জানান, অপারেশন ‘ডেভিল হান্টের’ প্রথমদিনে নোয়াখালী হাতিয়ায় যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ সাতজনকে আটক করেছে। রবিবার দুপুরে আসামিদের বিচারিক আদালতে হাজির করা হয়েছে। এর আগে, শনিবার রাতে হাতিয়ার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের আটক করা হয়।
কুড়িগ্রাম ॥ নাগেশ্বরী উপজেলার নেওয়াশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলামকে রবিবার দুপুরে নেওয়াশী বাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নাগেশ্বরী উপজেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় মামলার আসামি তিনি। জানা যায়, চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে নিয়োগে অনিয়ম ও সরকারী গাছ কর্তনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরেুদ্ধে। নাগেশ্বরী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিম রেজা জানান, আসামিকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
কুষ্টিয়া ॥ দৌলতপুরে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা জামিরুল ইসলাম বাবুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে কোন মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে পুলিশ তা নিশ্চিত করেনি। শনিবার গভীর রাতে উপজেলার রিফাইতপুর গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। জামিরুল ইসলাম বাবু রিফাইতপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও রিফাইতপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। এদিকে পুলিশের বিশেষ অভিযানে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- কুমারখালী পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার মোবিন হাসান প্রান্ত (২৮) ও উপদপ্তর সম্পাদক মেজবাউল হক হৃদয় (২১)। রবিবার ভোরে কুমারখালী উপজেলার পদ্মপুকুর ঘাট এলাকা থেকে মেজবাউল হক হৃদয় এবং দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা মোড় থেকে খন্দকার মোবিন হাসান প্রান্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পদ্মপুকুর ঘাট এলাকায় নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে পৃথক স্থান থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ওই দুই নেতাকে আটক করা হয়। পরে তাদের নাশকতা ও বিস্ফোরক মামলায় আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পাবনা ॥ ঈশ্বরদীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলার ঘটনার অভিযোগে দুই যুবলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রবিবার ভোরে শহরের নিজ নিজ এলাকা থেকে তাদের আটক করে পুলিশ। আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে ঈশ্বরদী থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ঈশ্বরদী থানার পাকশী ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও চররূপপুর গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে সিরাজুল ইসলাম (৪৫) এবং সলিমপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও চরমিরকামারী গ্রামের এস এম মহির উদ্দিনের ছেলে এস এম মনোয়ার হোসেনকে (৪৮) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের পাবনা জেলা কারাগারে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে তিনি জানান।
রাঙ্গামাটি ॥ রাঙ্গামাটিতে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনছুর আলীসহ ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। বিকেল থেকে রাঙ্গামাটি শহরের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িতে অভিযান কার্যক্রম শুরু করেন পুলিশ ও ডিবি। বিকেলে রাঙ্গামাটি পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনছুর আলীকে আটক করে ডিবি পুলিশ। এর আগে ডিবি পুলিশ রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. মুছা মাতব্বরের বাস ভবনে অভিযান পরিচালনা করলে তাকে তার বাসায় পাওয়া যায়নি। পরে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বাস ভবনে অভিযান চালিয়ে সাধারণ সম্পাদক মনছুর আলীকে আটক করে। অপরদিকে রাঙ্গামাটি জেলা শ্রমিক লীগের শাহজালাল মাঝি ও মাওলা মিয়াকেও আটক করা হয়েছে। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জেলা পুলিশ জানান।