ছবি : সংগৃহীত
হাসিনা প্রসঙ্গে কথার সুর বদলাতে শুরু করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গুজব প্রচার বন্ধ করে হঠাৎ করেই বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচার শুরু করেছে কোন কোন সংবাদ মাধ্যম।
খোদ ভারতীয় মিডিয়া দা প্রিন্ট বলছে, শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির কোন ধরনের সহযোগিতা করা ঠিক হচ্ছে না। চলমান পরিস্থিতিতে সাধারণ বাংলাদেশীদের পাকিস্তানের ভূত হিসেবে উপস্থাপন করে হয়তো পশ্চিমবঙ্গে কিছু ভোট জিততে পারবে মোদি সরকার।
তবে দীর্ঘমেয়াদে কৌশলগতভাবে বাংলাদেশের এর মত গুরুত্বপূর্ণ দেশে সবকিছু হারানোর মত ক্ষতির কারণ ভারত নিজেই জন্ম দিয়েছে। শেখ হাসিনার দুঃশাসন ও তার দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদের মধ্যে ভারতের গণমাধ্যম এই নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
সম্প্রতি, কিছু ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, শেখ হাসিনাকে ভারতীয় সরকারের সমর্থন দেয়া বন্ধ করা উচিত। কারণ তার শাসন বাংলাদেশের জনগণের কাছে অপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং এটি ভারতীয় স্বার্থের বিপক্ষে কাজ করছে।
এদিকে বাংলাদেশে বিরোধী দলগুলো এবং সাধারণ জনগণ ভারতের আচরণে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করছে। পলাতক শেখ হাসিনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বক্তব্য দেয়ার পর জনরোষের কবলে পড়ে ৩২ নম্বরের বাড়িসহ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িতে। বাংলাদেশের গণমাধ্যমও এই পরিস্থিতির দিকে ভারতের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এবং অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, হাসিনার পৃষ্ঠপোষকতা ভারতের জন্য একদমই আর লাভজনক নয়।
আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, হাসিনার কর্মকাণ্ড শুধু বাংলাদেশেই গণতান্ত্রিক সংকট সৃষ্টি করেনি বরং তা ভারতের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষত, আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছে এবং মানুষের মৌলিক অধিকার লুণ্ঠন করেছে, যা দেশের অভ্যন্তরে অস্থিরতা তৈরি করেছে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক দৃশ্যমান সংকট সৃষ্টি করেছে।
ভারতের গণমাধ্যমগুলি এতদিন শেখ হাসিনার শাসন ব্যবস্থার অস্বচ্ছতা, দুর্নীতি এবং বিরোধী দলের প্রতি নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে মুখ বন্ধ রাখলেও এখন কথা বলতে শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত সরকার যদি হাসিনার সমর্থনে অবিচল থাকে, তবে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে বিদ্যমান অসন্তোষ আরো তীব্র হয়ে উঠতে পারে।
একদিকে চীন তার অবস্থানে অনড় ও আরো শক্তিশালী হয়ে উঠছে, অন্যদিকে অন্যতম প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের উচিত নিজের অবস্থান পুনর্মূল্যায়ন করা। একদিকে ভারতের সাউথ ব্লক আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশের ক্ষমতায় পুনর্বহালের কল্পনায় আটকে আছে। অপরদিকে চীন বর্তমান সরকারের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তুলছে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভারতকে তার নীতি পুনরায় পর্যালোচনা করতে হবে। বিশেষত, যখন দেশের জনগণের মধ্যে হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রতি ঘৃণা তৈরি হচ্ছে। যা ভবিষ্যতে ভারতের জন্য এক কৌশলগত বিপদ সৃষ্টি করতে পারে। হাসিনার প্রতি ভারতের অব্যাহত সমর্থনে বাংলাদেশের জন্য জনগণের হৃদয়ে যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে, তাতে স্পষ্টতই এক অজানা সংকটের পথে পা বাড়াচ্ছে ভারত।
মো. মহিউদ্দিন