![শেখ হাসিনা কোন দালাই লামা নন, ভারতকে তার সমর্থন বন্ধ করতে হবে, চীন তার পাশে দাঁড়াবে? শেখ হাসিনা কোন দালাই লামা নন, ভারতকে তার সমর্থন বন্ধ করতে হবে, চীন তার পাশে দাঁড়াবে?](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/befunky_2025-1-5_16-43-14-2502071048.jpg)
ছবিঃ সংগৃহীত
৮ আগস্ট থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি, ঠিক ১৮০ দিন পর, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী শেখ হাসিনা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাষণ দেন। তার এই ভাষণ পুরো দেশে তোলপাড় শুরু করে। অনেক বাংলাদেশি, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম, এইভাবে হাসিনার ফিরে আসার শঙ্কায় হতাশ। শুরুতে হাসিনার একটি সাধারণ ফেসবুক পোস্ট ছিল, কিন্তু সেটা খুব তাড়াতাড়ি হাজার হাজার তরুণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, এবং ঢাকার কেন্দ্রে প্রতিবাদীদের একটি বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কিছু বুলডোজার এসে ঐতিহাসিক ধানমণ্ডি রোড ৩২-এর বাড়িটি ধ্বংস করে ফেলে—এটি একসময় ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের শেষ আশ্রয়স্থল।
এটি এক অবিশ্বাস্য ঘটনা, যেখানে পাকিস্তানি সেনারা যা করতে পারেনি স্বাধীনতার সময়, তা হলো মাত্র ৯ ঘণ্টায় হাসিনার ঘরটি ধ্বংস করা। কিন্তু যারা এই কাজটি করল, তারা কোনো ধর্মীয় উন্মাদনা বা পাকিস্তান ফেরত চাওয়া কিছু নয়। তারা ছিল বাংলাদেশী জনগণ, যাদের দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে হাসিনা এবং তার দলের হাতে ভোটের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা তার বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহ্যকে খুবই গুরুত্ব দিয়েছেন, কিন্তু এই দুটি নাম আজকাল একে অপরের সঙ্গে এত জড়িয়ে গেছে, যে সাধারণ মানুষ বুঝতেই পারছে না তাদের মধ্যে কি পার্থক্য। আর ভারত, যেটি হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে, তা এখন একটি কূটনৈতিক সমস্যায় পড়েছে।
ঢাকায় এখন অস্থিরতা। ব্রিটিশ-বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ এহতেশাম হক বলেছেন, “আপনি কিভাবে আশা করতে পারেন, লাখ লাখ নির্যাতিত মানুষ তাদের শিকারীর প্রতীক—একটি বাড়িকে—সম্মান করবে?” শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বাড়ি, যা একসময় গর্ব ছিল, এখন হাসিনার শাসনের দুর্নীতি ও অপশাসনের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভারতের আওয়ামী লীগ সম্পর্কিত সমস্যা
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এমনটাই বলছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধের নেতা তাজউদ্দিন আহমেদের ছেলে সোহেল তাজ। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, “যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে আওয়ামী লীগের সম্মান ও ইতিহাস প্রশ্নবিদ্ধ।”
ভারতের হাসিনার প্রতি অবিচল সমর্থন নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে, বিশেষত যখন তার দলের বিরুদ্ধে অগ্নিসংযোগের মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
ভারতকে বুঝতে হবে, শেখ হাসিনা কোনো শান্তির প্রতীক বা জাতির নেতা নন। তিনি বহু বছর ধরে ভারতের সঙ্গী ছিলেন, তবে তার শাসন যতই দীর্ঘ হয়েছে, ততই তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বাড়ছে। ভারত যদি এখনো তাকে সমর্থন দেয়, তাহলে তা বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে বিরোধিতাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।
চীন এবং ভারতের কূটনীতি
চীন, যেটি বাংলাদেশের প্রতি খুবই বাস্তববাদী, বর্তমানে হাসিনার পাশে দাঁড়িয়েছে। ভারত, যেটি এখনও হাসিনাকে সমর্থন করার চেষ্টা করছে, এখন এমন এক দুঃসময়ে পড়েছে, যেখানে বাংলাদেশে তার পুরনো কূটনৈতিক সম্পর্ক বিপন্ন হতে পারে।
এই পরিস্থিতি ভারতকে নতুন কূটনৈতিক কৌশল নিতে বাধ্য করছে। ভারতকে বাংলাদেশে আরও সঠিক এবং নিরপেক্ষ বন্ধু খুঁজে নিতে হবে। চীন যেমন বাস্তববাদী, ভারতকে সেই পথেই চলতে হবে।
এইভাবে, ভারত যদি হাসিনাকে সমর্থন করতে থাকে, তবে তা দীর্ঘমেয়াদে দেশের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। একে বাদ দিয়ে, ভারতকে বাংলাদেশের জনগণের মৌলিক অধিকার এবং স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে একটি নতুন পথ খুঁজে বের করতে হবে।
মারিয়া