ছবি: সংগৃহীত
২০২৫ সালে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর ১০টি দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস। এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
১. যুক্তরাষ্ট্র (USA)
- জিডিপি: ৩০.৩৪ ট্রিলিয়ন ডলার
- জনসংখ্যা: ৩৪.৫ কোটি
- বিশ্লেষণ: যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ হিসেবে শীর্ষে অবস্থান করছে। দেশটির বিরাট অর্থনীতি, সামরিক শক্তি, এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের কারণে এটি প্রায় সকল ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী সামরিক বাহিনী এবং নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা, আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিশ্বনীতি গঠনেও এটি শীর্ষে। দেশটির বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তারকারী ভূমিকা, যেমন জাতিসংঘ, ন্যাটো, এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনে তা স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যায়।
২. চীন (China)
- জিডিপি: ১৯.৫৩ ট্রিলিয়ন ডলার
- জনসংখ্যা: ১৪১ কোটি
- বিশ্লেষণ: চীন বিশ্বের বৃহত্তম জনসংখ্যা নিয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ। সামরিক শক্তি, প্রযুক্তি, এবং শিল্প ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি চীনকে একটি শক্তিশালী দেশ হিসেবে তুলে ধরে। চীন তার অর্থনীতি এবং আধুনিক সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে বিশ্বে শক্তিশালী উপস্থিতি বজায় রেখেছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে এটি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে প্রতিযোগিতায় রয়েছে।
৩. রাশিয়া (Russia)
- জিডিপি: ২.২ ট্রিলিয়ন ডলার
- জনসংখ্যা: ৮.৫ কোটি
- বিশ্লেষণ: রাশিয়া বিশ্বের অন্যতম প্রধান সামরিক শক্তি হিসেবে পরিচিত, এবং এটি বিশ্বব্যাপী শক্তির একটি বড় কেন্দ্র। যদিও রাশিয়ার অর্থনীতি চীন বা যুক্তরাষ্ট্রের মতো বৃহত্তম নয়, তবে তার বিশাল আঞ্চলিক প্রভাব এবং শক্তিশালী সামরিক বাহিনী দেশটিকে অত্যন্ত ক্ষমতাধর করে তোলে। ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের পর রাশিয়া আরো বেশি আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং এটি নিজের প্রভাব বিস্তার করে চলেছে।
৪. যুক্তরাজ্য (United Kingdom)
- জিডিপি: ৩.৭৩ ট্রিলিয়ন ডলার
- জনসংখ্যা: ৭ কোটি
- বিশ্লেষণ: যুক্তরাজ্য এখনও বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়, বিশেষ করে তার বহির্বিশ্বে রাজনৈতিক প্রভাব এবং অর্থনৈতিক শক্তি বিবেচনায়। যুক্তরাজ্যের সামরিক বাহিনী এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অত্যন্ত শক্তিশালী। এটি বিশ্বব্যাপী প্রভাব বিস্তারকারী একটি দেশ, বিশেষ করে ব্রেক্সিটের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে আসার পর তার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং অবস্থান নতুনভাবে বদলেছে।
৫. জার্মানি (Germany)
- জিডিপি: ৪.৯২ ট্রিলিয়ন ডলার
- জনসংখ্যা: ৮.৫ কোটি
- বিশ্লেষণ: জার্মানি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনৈতিক শক্তির কেন্দ্র। এটি বিশ্বে বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে একটি এবং সামরিক শক্তির দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। জার্মানির উচ্চ প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং শিল্পক্ষেত্রে নেতৃত্বের কারণে এটি গ্লোবাল শক্তির ক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা রাখে।
৬. দক্ষিণ কোরিয়া (South Korea)
- জিডিপি: ১.৯৫ ট্রিলিয়ন ডলার
- জনসংখ্যা: ৫.১৭ কোটি
- বিশ্লেষণ: দক্ষিণ কোরিয়া তার প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, উচ্চমানের উৎপাদনশীলতা, এবং সামরিক শক্তি দিয়ে এই তালিকায় স্থান পেয়েছে। দেশটির বৃহত্তম প্রযুক্তি কোম্পানিগুলি (যেমন, স্যামসাং) বিশ্বব্যাপী প্রভাবশালী, এবং কোরিয়ান পপ (K-pop) সাংস্কৃতিক প্রভাব বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। সামরিক দিক থেকেও দক্ষিণ কোরিয়া শক্তিশালী, বিশেষত উত্তর কোরিয়ার প্রতি তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
৭. ফ্রান্স (France)
- জিডিপি: ৩.২৮ ট্রিলিয়ন ডলার
- জনসংখ্যা: ৬.৬৫ কোটি
- বিশ্লেষণ: ফ্রান্স বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ, বিশেষ করে তার সামরিক বাহিনী, রাজনৈতিক প্রভাব, এবং বিশ্বব্যাপী কূটনৈতিক উপস্থিতির কারণে। এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম শক্তিশালী সদস্য এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজের প্রভাব বজায় রেখেছে।
৮. জাপান (Japan)
- জিডিপি: ৪.৩৯ ট্রিলিয়ন ডলার
- জনসংখ্যা: ১২.৫ কোটি
- বিশ্লেষণ: জাপান তার শক্তিশালী অর্থনীতি, প্রযুক্তি খাতে অগ্রগতি এবং আধুনিক সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। এটি বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং তার অর্থনীতি আধুনিকীকরণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করেছে।
৯. সৌদি আরব (Saudi Arabia)
- জিডিপি: ১.১৪ ট্রিলিয়ন ডলার
- জনসংখ্যা: ৩.৩৯ কোটি
- বিশ্লেষণ: সৌদি আরব তেল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলির মধ্যে একটি এবং তার জ্বালানি শক্তির কারণে একটি শক্তিশালী আন্তর্জাতিক প্রভাব রয়েছে। সৌদি আরবের সামরিক বাহিনীও শক্তিশালী এবং দেশটি মধ্যপ্রাচ্যে তার প্রভাব ধরে রেখেছে।
১০. ইসরায়েল (Israel)
- জিডিপি: ৫৫১ বিলিয়ন ডলার
- জনসংখ্যা: ৯৪ লাখ
- বিশ্লেষণ: ইসরায়েল একটি শক্তিশালী সামরিক দেশ এবং তার বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। ছোট একটি দেশ হওয়া সত্ত্বেও ইসরায়েল তার সামরিক বাহিনী এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রভাবের মাধ্যমে শীর্ষ ১০ শক্তিশালী দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে।
এই ১০টি দেশ তাদের অর্থনীতি, সামরিক শক্তি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং রাজনৈতিক প্রভাবের মাধ্যমে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ হিসেবে পরিচিত। ২০২৫ সালে এই দেশগুলো কেবলমাত্র অর্থনৈতিক দিক থেকেই নয়, সামরিক এবং কূটনৈতিকভাবে বিশ্বের অঙ্গনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব রাখতে সক্ষম।
রেজা