ছবিঃ সংগৃহীত
গত ১৬ মাসে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক আক্রমণে ৪৭,০০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। এক সপ্তাহ আগে, যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজাকে "ধ্বংসস্তূপ" বলে বর্ণনা করেছিলেন এবং “পুরোটা পরিষ্কার করে ফেলার” প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তখন সবাই ভাবছিলেন, তিনি কতটা সিরিয়াস? কিন্তু ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহুর সাথে তার সংবাদ সম্মেলনের পর, এটা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, এসব মন্তব্য ছিল মূলত এক ধরনের অবচেতন মন্তব্য, যা তেমন পরিকল্পনা হিসেবে দেখা যায় না।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওও ট্রাম্পের গাজা পুনর্নির্মাণ পরিকল্পনাকে সমর্থন করেছেন। তিনি বলেছেন, "গাজাকে হ্যামাস মুক্ত করা উচিত। যুক্তরাষ্ট্র তার নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত এবং গাজাকে সুন্দর করতে প্রস্তুত।"
তবে ট্রাম্পের পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলেননি, কিন্তু তিনি যে ফিলিস্তিনিদের মিশর এবং জর্ডানে স্থানান্তরিত করার কথা বলেছেন, তা আরব দেশগুলির কাছে অত্যন্ত আপত্তিকর হয়েছে এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলি এটিকে জাতিগত নির্মূলের প্রস্তাব হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
ট্রাম্পের পরিকল্পনা কী? ট্রাম্প বলেছেন, “আমরা গাজার দখল নেব, এবং সেখানকার সমস্ত বিপজ্জনক বোমা এবং অন্যান্য অস্ত্র অপসারণ করব। পুরানো, ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনগুলি ভেঙে ফেলব, এবং সেই জায়গা থেকে নতুন অর্থনৈতিক উন্নয়ন তৈরি করব, যাতে হাজার হাজার মানুষের জন্য কাজ এবং বাসস্থান তৈরি হয়।”
গাজার ফিলিস্তিনিদের কী হবে? ট্রাম্পের কথায়, যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবেশী দেশগুলির কাছে ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তরের জন্য অনুরোধ করবে। মিশর এবং জর্ডানকে তিনি এই প্রস্তাবটি দিয়েছেন, কিন্তু তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছে। গাজার আগের জনসংখ্যা ছিল ২.৩ মিলিয়ন।
তিনি বলেন, “আমরা অন্য দেশগুলোতে যাব, যাদের মানবিক হৃদয় রয়েছে এবং তারা এই কাজ করতে চায়। ধনী দেশগুলো এই খরচ বহন করতে পারে। আমরা একসঙ্গে কাজ করলে, গাজার মানুষদের জন্য শান্তি, উন্নয়ন এবং একটা নতুন জীবন তৈরি করা সম্ভব।”
এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব? আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, কোনো জনগণের জোর করে স্থানান্তর করা নিষিদ্ধ। ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে, ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তর করতে হবে, যা জাতিগত নির্মূলের মতো হতে পারে। এই প্রস্তাবটি, যদি বাস্তবে বাস্তবায়িত হয়, তবে তা একটি বিপজ্জনক পথের দিকে নিয়ে যেতে পারে, যার ফলে ভবিষ্যৎ দুই-রাষ্ট্র সমাধানের আশা শেষ হয়ে যেতে পারে।
বিশ্বের প্রতিক্রিয়া আরব দেশগুলি ট্রাম্পের এই পরিকল্পনাকে কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বলেছে, এটি অঞ্চলের স্থিতিশীলতা বিপন্ন করতে পারে এবং শান্তি ও সহাবস্থানের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করবে।
এখন প্রশ্ন, ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কীভাবে হবে এবং এটি কি শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক কৌশল নাকি আসলেই কোনো পরিবর্তন আনবে, সেটি সময়ই বলবে।
মারিয়া