ছবি: সংগৃহীত
টানা কয়েকশ ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে গ্রিসের একাধিক দ্বীপ। বিশেষ করে পর্যটন কেন্দ্র স্যান্টোরিনি ও আশপাশের এলাকায় ব্যাপক কম্পন অনুভূত হয়েছে। গত রবিবার থেকে শুরু হওয়া এই ভূমিকম্পের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে, যার মধ্যে অন্তত ২০০টির তীব্রতা উল্লেখযোগ্য।
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞদের মতে, এজিয়ান সাগরের দক্ষিণাঞ্চলে জলের নিচে টেকটোনিক প্লেটের নড়াচড়া এই কম্পনের কারণ হতে পারে। যদিও কিছু বিশেষজ্ঞের ধারণা, এর সঙ্গে জলতলের নিচে থাকাআগ্নেয়গিরিরও সংযোগ থাকতে পারে।
মঙ্গলবার সকালে স্যান্টোরিনিতে ৪.৯ মাত্রার কম্পন রেকর্ড করা হয়, যা পরিস্থিতিকে আরও উদ্বেগজনক করে তুলেছে। এই পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে জরুরি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বিভিন্ন দ্বীপের হোটেল, বাড়িঘর খালি করে স্থানীয়দের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। পর্যটকদের চলাচলেও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকস মিতসোতাকিস নাগরিকদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এবং প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলতে অনুরোধ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে।
গ্রিসের অর্থনীতির একটি বড় অংশ পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল, বিশেষ করে স্যান্টোরিনি দ্বীপে প্রতিবছর লাখো পর্যটক আসেন। দ্বীপটির জনসংখ্যা মাত্র ১৫,০০০ হলেও ২০২৩ সালে এখানে প্রায় ৩০ লাখের বেশি পর্যটক ভ্রমণ করেছেন। ফলে এই ভূমিকম্পের ধাক্কা দেশটির অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে, বারবার ভূমিকম্পের কারণে স্থানীয়রা আতঙ্কে বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিচ্ছেন। কিছু এলাকায় মোবাইল ফোনে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে, যেখানে পাথর ধসে পড়ার ঝুঁকি ও আরও বড় ধরনের কম্পনের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। ওল্ট পোর্টসহ কিছু জায়গায় যেসব স্থানে খাড়া পাহাড় রয়েছে, সেখানে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
গ্রিস এমনিতেই ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। বিশেষ করে স্যান্টোরিনি সংলগ্ন সমুদ্র এলাকায় একটি ছোট টেকটোনিক প্লেট রয়েছে, যা আফ্রিকান প্লেটের সঙ্গে সংযুক্ত। আফ্রিকান প্লেটটি ইউরেশিয়ান প্লেটের নিচে চলে যাওয়ার ফলে প্রায়ই এই অঞ্চলে ভূমিকম্প হয়।
১৯৫৬ সালে এই অঞ্চলে ৭.৭ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়, যা ভয়াবহ সুনামি সৃষ্টি করে এবং বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটায়। এছাড়া ২০১১ ও ২০১২ সালে একাধিক ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছিল, তবে সংখ্যায় এত বেশি ছিল না।
প্রায় ৩৫০০ বছর আগে, খ্রিস্টপূর্ব ১৬২০ সালে, এই অঞ্চল ভয়াবহ অগ্ন্যুৎপাতের সাক্ষী হয়েছিল, যা মিনোয়ান সভ্যতার পতনের অন্যতম কারণ বলে মনে করা হয়। পাঁচের দশকে শেষবার স্যান্টোরিনিতে অগ্ন্যুৎপাত হয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পগুলোর কারণে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, হয়তো আবারও বড় ধরনের ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তন ঘটতে পারে।
এ মুহূর্তে গ্রিসের সরকার ও উদ্ধারকারী সংস্থাগুলো সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে এবং জনসাধারণকে যেকোনো ধরনের নির্দেশনার জন্য প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছে।
সূত্র: এবিপি আনন্দ
তাবিব