ছবি: সংগৃহীত
দক্ষিণ কোরিয়ার কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে দ্রুত শারীরিক ও মানসিক পরিপক্বতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাদের উচ্চতা, সঙ্গে বাড়ছে মদ্যপান, ধূমপান ও যৌনতার প্রতি আগ্রহ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, উন্নত স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন এর পেছনে মূল কারণ।
দক্ষিণ কোরিয়ার কিশোর-কিশোরীরা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় দ্রুত লম্বা হচ্ছে। দেশটির বাণিজ্য, শিল্প ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ এজেন্সি ফর টেকনোলজি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, গত ১০০ বছরে কোরিয়ান পুরুষদের গড় উচ্চতা চার থেকে পাঁচ ইঞ্চি এবং নারীদের তিন থেকে চার ইঞ্চি বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বিশ্বের গড় বৃদ্ধির হার থেকে অনেক বেশি।
সম্প্রতি ১১ থেকে ১৯ বছর বয়সী ১১৮ জন কিশোর-কিশোরীর ওপর চালানো এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে যে, এক দশক আগের তুলনায় বর্তমানে তারা উল্লেখযোগ্যভাবে লম্বা। বিশেষজ্ঞদের মতে, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা এবং উন্নত স্বাস্থ্যসেবা উচ্চতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ১০ বছর আগের তুলনায় কিশোর-কিশোরীরা এখন প্রায় দুই বছর আগেই তাদের সর্বোচ্চ বৃদ্ধির স্তরে পৌঁছে যাচ্ছে। ছেলেদের ক্ষেত্রে এটি ১৪ থেকে ১৫ বছর এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৩ থেকে ১৪ বছর বয়সে ঘটছে, যেখানে আগে এটি সাধারণত ১৬ থেকে ১৭ বছর বয়সে দেখা যেত।
শারীরিক বৃদ্ধি ছাড়াও মানসিক ও সামাজিকভাবে তারা দ্রুত পরিণত হচ্ছে। কৈশোর পার হওয়ার আগেই মদ্যপান, ধূমপান এবং যৌনতার প্রতি তাদের ঝোঁক বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পশ্চিমা খাদ্যাভাস, পরিবর্তিত সামাজিক পরিস্থিতি এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এই পরিবর্তনের অন্যতম কারণ।
শুধু উচ্চতা নয়, দক্ষিণ কোরিয়ার তরুণদের গড় ওজনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। গবেষণা অনুযায়ী, গত এক দশকে ছেলেদের বিএমআই (বডি মাস ইনডেক্স) ২০.৭ থেকে বেড়ে ২১.৫ হয়েছে এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে এটি ১৯.৮ থেকে বেড়ে ২০.০-তে পৌঁছেছে। এর ফলে স্থূলতা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও আর্থ্রাইটিসের মতো রোগ বেড়ে চলেছে।
অর্থনৈতিক উন্নতি এবং জীবনযাত্রার মান পরিবর্তনের কারণে দক্ষিণ কোরিয়ার জন্মহার ব্যাপকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, যদি এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তবে শতাব্দীর শেষ নাগাদ দেশটির জনসংখ্যা এক-তৃতীয়াংশে নেমে আসতে পারে।
যদিও অন্যান্য উন্নত দেশেও জন্মহার কমছে, তবে দক্ষিণ কোরিয়া এই সংকটের সবচেয়ে চরম পর্যায়ে রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিবর্তন কেবল শারীরিক বৃদ্ধি নয়, বরং সমাজের কাঠামোর ওপরও দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব ফেলতে পারে।
আগামীতে এ বিষয়ে আরও গবেষণা ও নীতিগত উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/7E_hvnrW16w?si=O5P4ngOonkjE1Wx6
এম.কে.