ছবিঃ সংগৃহীত
জাপানের এক বৃদ্ধার গল্প আমাদের একাকীত্ব এবং জীবনের কঠিন পরিস্থিতির তীব্র বাস্তবতা দেখায়। ৮১ বছর বয়সী আ্কিয়ো নামের এই মহিলার কাছে, কারাগার ছিল এক ধরনের আশ্রয়স্থল। তিনি জীবনে একাধিকবার অপরাধ করেছিলেন, শুধুমাত্র এই কারণে যে, বাইরে একা থাকার চেয়ে কারাগারে থাকাটা তার জন্য বেশি নিরাপদ এবং আরামদায়ক ছিল।
আ্কিয়ো প্রথমবার চুরি করেছিলেন যখন তিনি ৬০-এর দশকে ছিলেন, শুধু খাবারের জন্য। পরে, যখন তার পেনশন আর জীবন চালানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না, তিনি আবার চুরি করেন। এই অপরাধের পর তাকে তোচিগি মহিলা কারাগারে পাঠানো হয়, যা জাপানের সবচেয়ে বড় মহিলা কারাগার। এখানে তার মত অনেক বৃদ্ধ বন্দী রয়েছেন, যারা একাকীত্ব এবং জীবনের কঠিনতা থেকে মুক্তির জন্য কারাগারকেই আশ্রয় হিসেবে বেছে নেন।
আ্কিয়ো বলেন, "আমি একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এবং চুরির মাধ্যমে ভাবলাম, এটা ছোট একটি সমস্যা হবে। যদি আমি অর্থনৈতিকভাবে স্থিতিশীল থাকতাম, তাহলে কখনোই এটা করতাম না।" তিনি আরও বলেন, "এখানে অনেক ভালো মানুষ আছেন। আমার কাছে মনে হয়, এই জীবনটাই হয়তো সবচেয়ে স্থিতিশীল।"
কিছুদিন আগে, আ্কিয়ো তার ৪৩ বছর বয়সী ছেলের সাথে থাকতেন, কিন্তু ছেলেটি তাকে রাখতে চাইত না এবং প্রায়ই চলে যেতে বলত। মুক্তির পর আ্কিয়ো তার ছেলের সম্পর্কে গভীর লজ্জা এবং শঙ্কায় ভুগছিলেন। "আমি ভয় পাচ্ছি যে সে আমাকে কীভাবে দেখবে। একা থাকা খুব কঠিন, এবং আমি লজ্জিত যে আমি এই অবস্থায় পৌঁছেছি," তিনি বলেছিলেন।
জাপানে বৃদ্ধজনসংখ্যার সমস্যা এখন বিপদজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। ২০২৪ সালে, ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা ৩৬.২৫ মিলিয়নে পৌঁছেছে, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ২৯.৩ শতাংশ। এই বৃদ্ধ জনগণের মধ্যে অনেকেই একাকীত্ব এবং আর্থিক সমস্যায় ভুগছেন, এবং কেউ কেউ আ্কিয়োর মত কারাগারে স্থান পেতে চাচ্ছেন, শুধু একাকীত্বের থেকে মুক্তি পেতে।
কারাগারের একজন কর্মকর্তা, তাকায়োশি শিরানাগা বলেন, "বৃদ্ধ বন্দীদের জন্য কারাগার অনেক সময় বাইরের একাকীত্ব থেকে অনেক ভালো। এমনকি কেউ কেউ মাসে ২০,০০০ থেকে ৩০,০০০ ইয়েন পর্যন্ত দিয়ে কারাগারে থাকতে চায়।"
এই গল্পটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সমাজে একাকীত্বের মধ্যে যারা ভুগছেন তাদের অবস্থা, এবং বিশেষত বৃদ্ধদের জন্য যে কঠিন সময় কাটাচ্ছে তা। জাপানের বৃদ্ধজনসংখ্যার সমস্যা এবং একাকীত্বের মানসিক চাপ প্রকটভাবে বেড়ে চলেছে।
মারিয়া