ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০ মাঘ ১৪৩১

অস্ত্র কেনেন,না হলে কিন্তু!

প্রকাশিত: ১২:১০, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ১২:২০, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

অস্ত্র কেনেন,না হলে কিন্তু!

এক অদ্ভুত ফোনালাপ ।ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী,আর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে কথোপকথন হয়েছে। কিন্তু এই কথোপকথন কি কেবল বন্ধুত্বের বার্তা বহন করে? না কি এর পেছনে আছে আরো বড়ো একটি কৌশলগত চাল?

হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ট্রাম্প সরাসরি ভারতের কাছে মার্কিন প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার জন্য চাপ দিয়েছেন। পাশাপাশি ন্যায্য বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলার কথাও বলেছেন৷ অথচ ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে এসব স্পর্শকাতর বিষয় কিছুই উল্লেখ করা হয়নি।

ট্রাম্প প্রশাসন কার্যত ভারতের উপর চাপ সৃষ্টি করছে যেন তারা আরও বেশি মার্কিন অস্ত্র কেনে। এর পেছনে কারণও স্পষ্ট। গত দুই দশকে ভারত আমেরিকা থেকে বিপুল পরিমাণ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কিনেছে। এমনকি সম্প্রতি তিনশ কোটি ডলারের প্রিডেটর ড্রোন কেনার চুক্তি হয়েছে। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। ভারতের প্রতিরক্ষা নীতি যে শুধু আমেরিকার উপর নির্ভর করছে না  সেটাই ট্রাম্পের মাথাব্যথার কারণ।

ভারত, রাশিয়া, ফ্রান্সসহ অন্যান্য দেশের কাছ থেকেই অস্ত্র কেনে।যা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ট্রাম্প বরাবরই বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারতকে শুল্কের রাজা বলে অভিহিত করেছেন। সম্প্রতি এক দলীয় বৈঠকে তিনি ভারত ও ব্রাজিলের মতো দেশগুলোর বিরুদ্ধে শুল্ক আরোপের হুমকি দেন।

উল্লেখ করে বলেন, আমরা আমেরিকাকেই অগ্রাধিকার দেব। ট্রাম্পের এই অবস্থান শুধু প্রতিরক্ষা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নয়, বরং ভারত মার্কিন সম্পর্কের সামগ্রিক দিককেই প্রভাবিত করতে পারে।অন্যদিকে ভারতের জন্য পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। রাশিয়ার সঙ্গে তার ঐতিহ্যগত প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্ব ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত এখনও রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র কেনা অব্যাহত রেখেছে, যা আমেরিকার দৃষ্টিতে স্বাভাবিক নয়। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ১৯ টি ভারতীয় সংস্থার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যারা রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রাখছে।

ফলে ভারতের জন্য মার্কিন প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করা এবং রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা উভয়েই এক ধরনের কৌশলগত ভারসাম্যের খেলা করে।

এখানে ভারতের সামনে দু টি পথ খোলা। এক দিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আরও জোরদার করা, যা বাণিজ্যিক ও কৌশলগত দিক থেকে লাভজনক হতে পারে। অন্যদিকে বহুমেরু কেন্দ্রিক প্রতিরক্ষা নীতি বজায় রাখা, যেখানে রাশিয়া, ফ্রান্স ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে ভারতের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

পরিস্থিতি ইঙ্গিত দিচ্ছে ভবিষ্যতে ভারত মার্কিন প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আরও গভীর হবে। কিন্তু এর ফলে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করা আরও কঠিন হয়ে উঠবে। ভারতকে এখন তাঁর জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করে কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যেখানে বন্ধুত্ব আর কুটনৈতিক চাপ এর মধ্যকার সূক্ষ্ম পার্থক্যটি ও স্পষ্ট থাকবে ।

ফুয়াদ

×