ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ গ্রিনল্যান্ড বর্তমানে বিশ্বরাজনীতির আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। দ্বীপটি বরফে ঢাকা হলেও, এর নিচে লুকিয়ে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ।
এসব সম্পদ এবং গ্রিনল্যান্ডের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বের কারণে এটি এখন বড় শক্তিগুলোর মধ্যে লড়াইয়ের জায়গা হয়ে উঠেছে।
গ্রিনল্যান্ডের বিশেষ গুরুত্বের অন্যতম কারণ হলো এর ভূ-অবস্থান। এটি ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার মাঝামাঝি অবস্থানে অবস্থিত, যা এটিকে একটি কৌশলগত জায়গা হিসেবে পরিণত করেছে। এই অবস্থান থেকে যুদ্ধ বা সামরিক হামলা ঠেকানো সহজ হতে পারে। এছাড়া, এর বরফ গলার ফলে নতুন শিপিং রুট তৈরি হচ্ছে, যা পৃথিবীর বড় শক্তিগুলোর জন্য বাণিজ্যের সময় এবং খরচ কমাচ্ছে।
এছাড়াও, গ্রিনল্যান্ডের ভূখণ্ডে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ। এর মধ্যে রয়েছে তেল, গ্যাস, ইউরেনিয়াম এবং অন্যান্য ধাতু, যা আধুনিক প্রযুক্তি যেমন স্মার্টফোন, ব্যাটারি, এবং সামরিক সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এই সম্পদগুলি বিশ্ববাজারে অত্যন্ত মূল্যবান, এবং এর জন্য পৃথিবীর বড় শক্তিগুলি গ্রিনল্যান্ডের উপর প্রভাব বিস্তার করতে চায়।
গ্রিনল্যান্ডের ভূমিকা এখন শুধুমাত্র অর্থনৈতিক নয়, সামরিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় সামরিক ঘাঁটি, পিটুফিক এয়ারবেস, এখানে রয়েছে। এই ঘাঁটি রাশিয়ার মিসাইল উৎক্ষেপণ এবং অন্যান্য সামরিক কার্যকলাপ নজরদারি করে। তবে, গ্রীনল্যান্ডের ন্যাটো সামরিক উপস্থিতি এখনও কম, যা এই অঞ্চলে আরো আগ্রহ সৃষ্টি করছে।
এরই মধ্যে, ২০১৮ সালে চীনও এই অঞ্চলে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে। চীন নিজেকে আর্কটিক রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে এবং গ্রিনল্যান্ডে বড় বিনিয়োগ করতে শুরু করে। বর্তমানে, চীন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় গ্রিনল্যান্ডে বেশি উপস্থিতি স্থাপন করেছে।
রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্কটিক অঞ্চলে তার সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে। তারা নতুন সামরিক ঘাঁটি, বিমান ঘাঁটি এবং সাবমেরিন ডিপো তৈরি করেছে, যা তাদের এই অঞ্চলে প্রভাব বাড়িয়েছে। রাশিয়া, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এই ভূ-রাজনৈতিক লড়াই এখন তীব্র হয়ে উঠেছে।
বরফ গলার ফলে গ্রিনল্যান্ডের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব আরও বেড়ে গেছে। নতুন শিপিং রুটগুলোর সৃষ্টি এবং প্রাকৃতিক সম্পদ পাওয়ার জন্য এই দ্বীপটি এখন শক্তিশালী দেশের জন্য একটি অমূল্য সম্পদ। তবে, এই পরিবর্তন শুধু অর্থনৈতিক নয়, পরিবেশগত দিক থেকেও অত্যন্ত বিপদজনক। আর্কটিকের বাস্তুতন্ত্র মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে এবং জলবায়ু পরিবর্তন পরিবেশগত সংকট তৈরি করছে।
ফলে, গ্রিনল্যান্ড শুধু পৃথিবীর বড় শক্তিগুলোর লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেনি, এটি বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা বাড়ানোরও একটি কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/X6-ta1Eb6Ww?si=uptwYSJpNa7gHYtm
এম.কে.