ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯ মাঘ ১৪৩১

ট্রাম্পের সহায়তা কার্যক্রম স্থগিত: কোন দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে?

প্রকাশিত: ১৩:২৮, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ১৩:২৮, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ট্রাম্পের সহায়তা কার্যক্রম স্থগিত: কোন দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে?

ছবি: সংগৃহীত।

যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা সাময়িকভাবে স্থগিত করার ঘোষণার ফলে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প এবং মানবিক সহায়তার তহবিল হুমকির মুখে পড়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরপরই বিদেশি সহায়তা পর্যালোচনা করে, প্রয়োজনীয় হলে তা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তের ফলে ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সহায়তাকারী প্রকল্পগুলোর জন্য বরাদ্দ কোটি কোটি ডলার অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে চলমান বিভিন্ন সংস্থা ও প্রকল্পের কর্মচারীদের চাকরি হারানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিশেষভাবে বাংলাদেশে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) জানিয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন বন্ধ হওয়ার কারণে তারা ধাপে ধাপে সহস্রাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাঁটাই করতে বাধ্য হচ্ছে।

২০২৩ সালে, যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সহায়তা পেয়েছে ইউক্রেন, যেখানে ১৬৬২ কোটি ডলার বরাদ্দ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ১৬৪৮ কোটি ডলার ছিল অর্থনৈতিক সহায়তা এবং ১৪ কোটি ডলার সামরিক খাতে খরচ হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সহায়তা পেয়েছে ইসরায়েল, যা ছিল ৩৩১ কোটি ডলার, যার প্রায় পুরোটাই সামরিক খাতে ব্যবহৃত হয়েছে। তৃতীয় অবস্থানে থাকা ইথিওপিয়া পেয়েছে ১৭৭ কোটি ডলার, যা পুরোপুরি অর্থনৈতিক সহায়তা হিসেবে প্রদান করা হয়েছে।

এছাড়াও, জর্ডান পেয়েছে ১৭২ কোটি ডলার (১২৯ কোটি অর্থনৈতিক এবং ৪৩ কোটি সামরিক সহায়তা), মিশর পেয়েছে ১৪৫ কোটি ডলার (২২ কোটি অর্থনৈতিক এবং ১২২ কোটি সামরিক সহায়তা)।

বাংলাদেশ ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে মোট ৫৫ কোটি ডলার সহায়তা পেয়েছে, যার মধ্যে ৫১ কোটি ছিল অর্থনৈতিক সহায়তা এবং ৪ কোটি ছিল সামরিক সহায়তা।

মার্কিন সহায়তা বন্ধের ফলে বিশ্বজুড়ে পানীয় জল, স্যানিটেশন, আশ্রয় এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বিপদে পড়তে পারে। ইউএসএআইডির সাবেক পরিচালক ডেভ হার্ডেন এই সিদ্ধান্তকে ‘অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং সতর্ক করেছেন যে, এটি বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে পরিচালিত উন্নয়ন এবং মানবিক সহায়তা প্রকল্পগুলোকে স্থগিত করে দিতে পারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক কূটনীতির ওপরও ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। সহায়তা হ্রাস বা বন্ধ হলে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর জন্য নতুন তহবিল সংগ্রহ করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠবে, বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য। এর ফলে, খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, এবং মানবিক সহায়তা সংকটে পড়তে পারে, যা দরিদ্র এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোর জন্য দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলোর জন্য এটি একটি বড় ধরনের সংকটের সূচনা হতে পারে, যার প্রভাব আগামীতে আরও গভীর হয়ে উঠবে।

নুসরাত

×