ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯ মাঘ ১৪৩১

এবার কি বাংলাদেশ পরতে যাচ্ছে ট্রাম্পের “আমেরিকা ফার্স্ট” জালে?

প্রকাশিত: ১২:৪৮, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

এবার কি বাংলাদেশ পরতে যাচ্ছে ট্রাম্পের “আমেরিকা ফার্স্ট” জালে?

ছবি: সংগৃহীত।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থদাতা দেশ যুক্তরাষ্ট্র, এবং এবার তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্যান্য দেশগুলোকে আর্থিক সহায়তা বন্ধ করার। ডোনাল্ড ট্রাম্প তৃতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে এটি তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশ পড়তে যাচ্ছে ট্রাম্পের "আমেরিকা ফার্স্ট" নীতির কষাঘাতে। অর্থাৎ, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আর কোনো আর্থিক সহায়তা পাওয়া যাবে না। এখন প্রশ্ন, এর কী প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের উপর?

যুক্তরাষ্ট্রে অনেক সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা রয়েছে, যেগুলি জলবায়ু, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করে। মূলত মার্কিন ফেডারেল সরকারের অর্থায়নেই চলে এসব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান। প্রতিবছর এসব সংস্থায় লক্ষ কোটি ডলারের সহায়তা ও ঋণ প্রদান করে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকার। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত এসব সংস্থার জন্য বড় একটি ধাক্কা। এর প্রভাব বাংলাদেশে নানা খাতে পড়তে পারে, যেমন খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, সুশাসন, শিক্ষা, পরিবেশ সংরক্ষণসহ অন্যান্য প্রকল্পগুলো। এছাড়া সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোর কর্মীরাও পড়তে পারেন বিপদে। তবে, রোহিঙ্গাদের খাদ্য ও পুষ্টি কার্যক্রমের অর্থায়ন বজায় থাকবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

২০১৭ সাল থেকে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ২.৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি মানবিক সহায়তা প্রদান করেছে। এর পাশাপাশি, গত ৫০ বছরে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, জ্বালানি, পরিবেশ, খাদ্য নিরাপত্তা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা এবং আরও অনেক খাতে ৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা দিয়েছে। সর্বশেষ ২০২১ সালে ৫০০ মিলিয়ন ডলার, ২০২২ সালে ৪৭০ মিলিয়ন ডলার, ২০২৩ সালে ৪৯০ মিলিয়ন ডলার এবং ২০২৪ সালে ৪৫০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

এখন, অর্থায়ন স্থগিত হওয়ার কারণে শুধু ইউএসএইড সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলো নয়, প্রভাব পড়বে ইউনিসেফ, সেভ দ্য চিলড্রেন, ইউএনডিপিসহ আইসিডিডিআর,বি মতো স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরও। "অ্যালায়েন্স ফর কমব্যাটিং টিবি ইন বাংলাদেশ (এসিটিবি)" নামক প্রকল্পের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) টিবি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে বড় পরিমাণ অর্থায়ন প্রদান করত ইউএসএইড।

এমনকি এই ধরনের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের অপুষ্টির সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে, শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং লাখ লাখ দুর্বল ব্যক্তিকে আরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিতে পারে।

ডা. শামীম হায়দার বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে গত ৫৩ বছরে আমেরিকা বাংলাদেশকে এই সহযোগিতাগুলো প্রদান করে আসছে। এসব সহযোগিতা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের নীতিনির্ধারণ এবং ভবিষ্যৎ পলিসি মেকিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, বিশেষ করে মাতৃস্বাস্থ্য ও শিশুস্বাস্থ্য ক্ষেত্রে। এখন যদি আসলেই অর্থায়ন স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে আমাদের দ্রুত বিকল্প সহযোগী খুঁজে বের করতে হবে, যাতে বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য খাতের ক্ষতি কমানো যায়।

এছাড়া, এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিছু নতুন চ্যালেঞ্জও সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে আর্থিক সহায়তার উপর নির্ভরশীল যেসব প্রকল্প চলছে, সেগুলোর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে বা বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=3o7WF2BzavI

নুসরাত

×