ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১

৩৮ মরদেহ উদ্ধার, ক্ষুব্ধ ট্রাম্প

ওয়াশিংটনে বিমান ও সামরিক কপ্টার সংঘর্ষ

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২:৪৪, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫

ওয়াশিংটনে বিমান ও সামরিক কপ্টার সংঘর্ষ

যুক্তরাষ্ট্রে বিমান ও কপ্টারের সংঘর্ষের পর পটোম্যাক নদীতে উদ্ধার অভিযান

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন এয়ারলাইন্সের একটি যাত্রীবাহী জেট বিমানের সঙ্গে একটি সামরিক হেলিকপ্টারের সংঘর্ষ হয়েছে। বুধবার স্থানীয় সময় রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। বিমান ও কপ্টারটি বিধ্বস্তের পর পটোম্যাক নদীতে পড়ে। ওই বিমানে ৬৪ ও কপ্টারটিতে অন্তত চারজন আরোহী ছিলেন। আরোহীদের সবাই প্রাণ হারিয়েছে বলে ধারণা। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অন্তত ৩৮ মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

ওয়াশিংটনে প্রায় ১৬ বছরের মধ্যে ঘটা সবচেয়ে বড় এই দুর্ঘটনা নিয়ে ট্রুথ সোশ্যালে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, যেভাবে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে সেটি দেখে মনে হচ্ছে এটি এড়ানো যেতে পারত। ট্রাম্প এর দায় চাপিয়েছেন সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টারের ওপর। তিনি বলেন, বিমানটি দেখে আগেই হেলিকপ্টারের সরে যাওয়া উচিত ছিল। তিনি বলেন, উড়োজাহজটি তার সঠিক পথেই বিমানবন্দরের দিকে যাচ্ছিল।

কিন্তু হেলিকপ্টারটি অনেকক্ষণ ধরেই সরাসরি উড়োজাহাজটির দিকে এগোচ্ছিল। রাতের আকাশ যথেষ্ট পরিষ্কার ছিল। বিমানে আলো জ্বলছিল। হেলিকপ্টারটি ওপরে উঠে যেতে পারত, নিচে নেমে আসতে পারত কিংবা উল্টো দিকে ঘুরে যেতে পারত। কেন তা করা হলো না? কন্ট্রোল টাওয়ার থেকেই বা কেন হেলিকপ্টারকে এ সংক্রান্ত সঠিক নির্দেশনা দেওয়া হলো না।
কন্ট্রোল টাওয়ারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ট্রাম্প লিখেন,  হেলিকপ্টারের পাইলট উড়োজাহাজটি দেখেছেন কিনা তা জিজ্ঞাসা করার পরিবর্তে কন্ট্রোল টাওয়ার কেন হেলিকপ্টারটিকে কী করতে হবে তা জানায়নি। ট্রাস্প এ দুর্ঘটনাকে ‘ভয়ানক বিপর্যয়’ উল্লেখ করে বলেন, এই রাত কত ভয়াবহই না ছিল! খুবই খারাপ একটি পরিস্থিতি গেছে। দেখে মনে হচ্ছে এটা ঠেকানো যেত। ভালো হলো না। খবর আলজাজিরা, বিবিসি ও সিএনএন অনলাইনের।  
মার্কিন ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন জানায়, বুধবার রাতে ওয়াশিংটনের কাছে রোনাল্ড রিগ্যান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় যাত্রীবাহী একটি অভ্যন্তরীণ বিমানের সঙ্গে সামরিক বাহিনীর একটি ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারের মুখোমুখি সংঘর্ষে যাত্রীবাহী বিমান ও হেলিকপ্টার পটোম্যাক নদীতে বিধ্বস্ত হয়।
ঘটনাস্থল থেকে পুলিশের সিনিয়র এক কর্মকর্তা বলেন, বিমানটিতে ৬৪ জন যাত্রী এবং সামরিক হেলিকপ্টারে চারজন সেনা সদস্য ছিলেন। দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই বিমানের সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়। ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এক বিবৃতিতে জানিায়, ‘স্থানীয় সময় রাত ৯টা ৩০ মিনিটের দিকে ওয়াশিংটনের রোনাল্ড রিগ্যান ইন্টারন্যানাল এয়ারপোর্টের রানওয়ে ৩৩-এ অবতরণের সময় একটি পিএসএ এয়ারলাইন্স বোম্বাডিয়ার সিআরজে ৭০০ অভ্যন্তরীণ বিমান সিকরস্কি এইচ-৬০ সামরিক হেলিকপ্টারের সঙ্গে মধ্য আকাশে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
আমেরিকান এয়ারলান্সের বিমানটি ক্যানসাসের উইচিটা যাত্রা থেকে করেছিল। এদিকে একাধিক সূত্র এবং সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, একটি আর্মি ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারের সঙ্গে যাত্রীবাহী বিমানটির সংঘর্ষ হয়। সেনাবহিনী পরে নিশ্চিত করে, হেলিকপ্টারটি ভার্জিনিয়ার ফোর্ট বেলভোয়ার থেকে যাত্রা করেছিল।

জয়েন্ট টাস্ক ফোর্স-ন্যাশনাল ক্যাপিটল অঞ্চলের মুখপাত্র হেদার চেয়ারেজ বলেন, হেলিকপ্টারটি প্রশিক্ষণে ছিল। তিনি বলেন, হেলিকপ্টারটি বি কোম্পানির ১২তম এভিয়েশন ব্যাটালিয়নের। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারটিতে তিনজন সেনাসদস্য ছিলেন। তবে কোনো পদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন না।
এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুম থেকে প্রাপ্ত স্ক্যানার অডিওতে একজন বলেন, ‘দুর্ঘটনাটি ঘটেছে নদীতে। যার কারণে রাতের অন্ধকারে উদ্ধার অভিযান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।  হেলিকপ্টার এবং বিমান দু’টিই নদীতে বিধ্বস্ত হয়। পোটোম্যাক নদীতে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে জরুরি সার্ভিসের কয়েকটি ইউনিট। 
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দুর্ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। রোনাল্ড রিগ্যান বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এক্সে এক বার্তায় বলেছে, বিমানবন্দরে সব ধরনের বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
ওয়াশিংটন জরুরি বিভাগের কর্মকর্তা জন ডনেলি বলেন, বিমানের বিভিন্ন অংশ খুঁজে পেলেও কেউ আদৌ বেঁচে আছেন কিনা সেটা তারা জানেন না। মার্কিন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। আর হেলিকপ্টারটি বিমানের কাছেই পানিতে অক্ষত অবস্থায় উল্টে ছিল। 
রাতের বেলায় ওয়াশিংটন ডিসি এবং এর আশপাশের এলাকায় তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নামে ফলে উদ্ধার কার্যক্রম ব্যহত হয়। রোনাল্ড রিগ্যান এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, সেখানে সমস্ত ফ্লাইটের উড্ডয়ন ও অবতরণ আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। বিমানগুলোকে ২৮ মাইল দূরের ডালাস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান তারা আকাশে উজ্জ্বল আলো দেখেছেন। প্রত্যক্ষদর্শী অরি শুলম্যান বলেন, তিনি আকাশে ‘বিশাল আতশবাজির’ মতো এক ধরনের ‘স্ফুলিঙ্গ’ দেখতে পেয়েছেন। সে সময় তিনি বিমানবন্দরের পাশেই জর্জ ওয়াশিংটন পার্কওয়েতে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। শুলম্যান বলেন, তিনি প্রায়ই সেখানে বিমান অবতরণ করতে দেখেন, তাই প্রথমে কিছু অস্বাভাবিক মনে হয়নি। তিনি বলেন, সবকিছু স্বাভাবিক ছিল, বিমানটি ঠিকঠাক এগিয়ে আসছিল। 
তবে, এরপর হঠাৎ করে তিনি দেখেন, বিমানটি ডানদিকে প্রায় ৯০ ডিগ্রি কোণে কাত হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, আমি বিমানের নিচের অংশ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম, যা এত অন্ধকারে দেখা যাওয়ার কথা নয়। তিনি বিমানটির নিচে উজ্জ্বল হলুদ আলো এবং সামনের দিক থেকে পেছন পর্যন্ত স্ফুলিঙ্গ দেখতে পান- যা অনেকটা আতশবাজির মতো।

কিন্তু বিস্ফোরণের শব্দ না পাওয়ায়, আর আগুনের গোলা বা দুর্ঘটনার অন্য কোনো লক্ষণ না দেখায় তিনি রাস্তার দিকে মনোযোগ দেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের এমপিরা দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রার্থনা করার আহ্বান জানিয়েছেন। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ জেফারি থমাস দুর্ঘটনার ম্যাপ পর্যবেক্ষণ করে বলেন, হেলিকপ্টারটি ওপরে উঠছিল এবং শেষ মিনিটে এটি ২০০ ফিট থেকে সাড়ে ৩০০ ফিটে উঠে যায়।

এ ছাড়াও এটি ছয়বার গতিপথ পরিবর্তন করে। আমি ধারণা করি সামনে আমরা হেলিকপ্টারটিকেই দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে দেখব। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন নিশ্চিত করেছে যে, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজনে সহায়তা দেবে।

×