ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১

বিশাল সংস্কার প্রকল্পের অংশ

‍লুভরে ‘মোনালিসা’র নতুন ঠিকানা

প্রকাশিত: ২২:৪৭, ২৯ জানুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ২২:৪৯, ২৯ জানুয়ারি ২০২৫

‍লুভরে ‘মোনালিসা’র নতুন ঠিকানা

ছবি : সংগৃহীত

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ মঙ্গলবার ঘোষণা করেছেন যে, বিশ্বখ্যাত শিল্পকর্ম “মোনালিসা” লুভর জাদুঘরে একটি স্বতন্ত্র কক্ষে স্থান পাবে। প্যারিসের এই ঐতিহ্যবাহী জাদুঘরের বিশাল সংস্কার ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় এই স্থানান্তর করা হবে, যা সম্পন্ন হতে এক দশক সময় লাগতে পারে।

৮৩৪ মিলিয়ন ডলারের সংস্কার প্রকল্প

“লুভর নিউ রেনেসাঁ” নামে পরিচিত এই সংস্কার প্রকল্পের আওতায় ২০৩১ সালের মধ্যে সেন নদীর কাছে একটি নতুন প্রবেশদ্বার তৈরি করা হবে। প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ বলেন, লুভরকে আধুনিকীকরণের জন্য নির্দিষ্ট কোনো বাজেট ঘোষণা না করা হলেও প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৮০০ মিলিয়ন ইউরো (৮৩৪ মিলিয়ন ডলার) পর্যন্ত।

এর আগে ১৯৮০-এর দশকে লুভরের সর্বশেষ বড় সংস্কার কাজ করা হয়েছিল, যখন আইকনিক গ্লাস পিরামিড নির্মাণ করা হয়।

 

লুভরে দর্শনার্থীদের অভিজ্ঞতা সহজ করতে মোনালিসার স্থানান্তর

ম্যাক্রোঁ বলেন, এই সম্প্রসারণ প্রকল্পের মাধ্যমে দর্শনার্থীরা একটি বিশেষ টিকিটের মাধ্যমে সরাসরি মোনালিসার নতুন কক্ষে প্রবেশের সুযোগ পাবেন। এটি শুধু মোনালিসার দর্শনার্থীদের জন্যই নয়, বরং অন্যান্য অংশে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের জন্যও অভিজ্ঞতাকে সহজ করবে।

তিনি বলেন, “প্রদর্শনী, ব্যাখ্যা এবং উপস্থাপনা এমনভাবে সাজানো হবে যা ‘মোনালিসা’ যথাযোগ্য সম্মান পায়।”

বর্তমানে এই চিত্রকর্মটি লুভরের বৃহত্তম কক্ষে সুরক্ষিত কাচের ভেতরে সংরক্ষিত রয়েছে, যেখানে দীর্ঘ ও কোলাহলপূর্ণ লাইনে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার দর্শনার্থী এক নজর দেখার চেষ্টা করেন এবং সেলফি তোলেন। ফলে, টিশিয়ান ও ভেরোনেসের মতো ভিনিশিয়ান চিত্রশিল্পীদের অনেক মূল্যবান চিত্রকর্ম দর্শনার্থীদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়।

লুভর জাদুঘর ১৯৮০-এর দশকের সংস্কারের সময় বছরে ৪ মিলিয়ন দর্শনার্থীর জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল, কিন্তু ২০২৩ সালে এটি ৮.৭ মিলিয়ন দর্শনার্থী গ্রহণ করেছে, যার ৭৫% বিদেশি (মূলত যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ইতালি, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও স্পেন থেকে)।

 

ব্যয়বহুল ও জটিল সংস্কার পরিকল্পনা

ম্যাক্রোঁ জানান, ২০৩১ সালের মধ্যে সেন নদীর কাছে একটি নতুন প্রবেশদ্বার তৈরি করা হবে, যা অর্থায়ন করা হবে টিকিট বিক্রি, পৃষ্ঠপোষকতা এবং আবুধাবি শাখার লাইসেন্সিং ফি থেকে।

আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এর জন্য একটি ডিজাইন প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হবে। পাশাপাশি নতুন ভূগর্ভস্থ কক্ষ তৈরি করে জাদুঘরের সম্প্রসারণ করা হবে।

একজন ফরাসি শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, পুরো সংস্কার প্রকল্পে ৭০০ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ইউরো ব্যয় হতে পারে, যার অর্ধেকই নতুন প্রবেশদ্বার তৈরিতে ব্যয় হবে। তবে ফরাসি প্রেসিডেন্টের প্রচলিত নিয়ম অনুসারে কর্মকর্তার নাম প্রকাশ করা হয়নি।

ম্যাক্রোঁ আরও জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের বিদেশি দর্শনার্থীদের জন্য টিকিটের মূল্য বৃদ্ধি করা হবে, যা বর্তমানে ২২ ইউরো ($২৩)।

তিনি প্রতিশ্রুতি দেন যে, সংস্কারকৃত লুভর জাদুঘর আরও নিরাপদ ও আরামদায়ক হবে, যা দর্শনার্থী এবং কর্মীদের অভিজ্ঞতা উন্নত করবে। নটর ডেম ক্যাথেড্রালের সাম্প্রতিক সংস্কারের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “সংস্কারকৃত ও সম্প্রসারিত লুভর আমাদের দেশ এবং সারা বিশ্বের জন্য শিল্প ইতিহাসের কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠবে।”

 

জাদুঘরের জরাজীর্ণ অবস্থা ও সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা

এই সংস্কার প্রকল্পের ঘোষণা আসে লুভর পরিচালক লরেন্স দে কার সম্প্রতি ফরাসি সংস্কৃতি মন্ত্রী রাশিদা দাতি-কে পাঠানো একটি নোটের পর, যেখানে তিনি লুভরের জীর্ণ অবস্থার ব্যাপারে সতর্কতা জানান।

ফরাসি দৈনিক Le Parisien প্রথম এই তথ্য প্রকাশ করে, যেখানে বলা হয়, জাদুঘরটি জল চুয়ানো, তাপমাত্রার ওঠানামা ও অন্যান্য সমস্যার কারণে ধীরে ধীরে নষ্ট হচ্ছে, যা মূল্যবান শিল্পকর্মগুলোর সংরক্ষণের জন্য হুমকি তৈরি করছে।

১৯৮৯ সালে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিতেরঁ’র প্রকল্পে নির্মিত গ্লাস পিরামিডও এখন পুরাতন মনে হচ্ছে। এটি শীত ও গরম থেকে যথাযথভাবে সুরক্ষিত নয় এবং এতে শব্দ প্রতিধ্বনিত হয়, যা দর্শনার্থী ও কর্মীদের জন্য অসুবিধা তৈরি করে।

এছাড়া, লুভরের খাবারের বিকল্প কম এবং প্রচলিত শৌচাগার সুবিধার অভাব রয়েছে, যা দর্শনার্থীদের জন্য আরেকটি সমস্যা বলে জানান লরেন্স দে কার।

সূত্র: এপি

মো. মহিউদ্দিন

×