ছবি: সংগৃহীত
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটে শিক্ষকের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ একটি স্কুল এখন সাপ্তাহিক হাটের ঠিকানা হয়ে উঠেছে। মঙ্গলকোটের ভাল্যগ্রাম জুনিয়র হাই স্কুল প্রায় দুই বছর ধরে বন্ধ। সেই ফাঁকা স্কুলেই প্রতি মঙ্গলবার জমে উঠছে বাজার। শাক-সবজি থেকে শুরু করে শাড়ি, মশলাপাতি—সবই মিলছে এই হাটে। স্কুলের বারান্দায় বসছে গরম গরম চপ-বেগুনির দোকানও।
ব্যবসায়ীদের দাবি, বিদ্যালয় দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় মাঠটি হাটের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। স্থানীয় তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতের এক সদস্যের মতে, এলাকায় বাজারের জন্য নির্দিষ্ট জায়গার অভাবেই সাময়িকভাবে স্কুল চত্বরে হাট বসানো হয়েছে। তবে স্কুল চালু হলেই এই হাট অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
এদিকে, মহকুমা শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, শিক্ষকের অভাবেই বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। শিক্ষক নিয়োগ হলেই আবার পঠনপাঠন শুরু হবে। তবে বিদ্যালয়ের চত্বরে হাট বসার বিষয়ে তিনি অবগত নন।
স্কুলটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় দোতলা ভবনটির অবস্থা দ্রুত অবনতি হচ্ছে। ক্লাসরুমের দরজা-জানলা ভেঙে পড়েছে, বেঞ্চ-টেবিল ধুলো জমে নষ্ট হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ওই গ্রামের দেড়শোর বেশি ছাত্রছাত্রী বাধ্য হয়ে দূরের স্কুলে পড়াশোনা করছে। অভিভাবকদের আশঙ্কা, এখন সপ্তাহে একদিন হাট বসলেও ভবিষ্যতে পুরো বিদ্যালয়টি বাজারের দখলে চলে যেতে পারে। তখন হয়তো শুধুই স্মৃতিতে থেকে যাবে—এই জায়গাটিতে একসময় স্কুল ছিল, ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনা করত।
এই ঘটনা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল পশ্চিমবঙ্গে সরকারি স্কুলগুলোর করুণ অবস্থা। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রকের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে পড়ুয়াহীন সরকারি স্কুলের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি পশ্চিমবঙ্গেই। রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাজ্যের ৩ হাজার ২৫৪টি সরকারি স্কুলে একজনও ছাত্রছাত্রী নেই, অথচ সেখানে শিক্ষক রয়েছেন ১৪ হাজারেরও বেশি। আবার এমন ৬ হাজার ৩৬৬টি সরকারি স্কুল রয়েছে, যেখানে মাত্র একজন শিক্ষক আছেন, অথচ সেখানে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ।
ভাল্যগ্রামের বন্ধ স্কুলে বসা হাট যেন এই চিত্রেরই প্রতিফলন। প্রশ্ন উঠছে, শিক্ষকের অভাবে যেখানে স্কুল বন্ধ, সেখানে সরকারি উদ্যোগ কবে বাস্তবে রূপ নেবে? শিক্ষার আলো ফিরবে তো? নাকি একদিন সত্যিই ইতিহাস হয়ে যাবে এই বিদ্যালয়?
সূত্র: এবিপি লাইভ
এম.কে.
