ছবি: সংগৃহীত
চীন এবং ভারত পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো সরাসরি বাণিজ্যিক ফ্লাইট পুনরায় চালু করতে সম্মত হয়েছে। এটি বিশ্বের দুই বৃহত্তম জনসংখ্যাবহুল দেশের সম্পর্ক উষ্ণ হওয়ার একটি ইঙ্গিত।
২০২০ সালের শুরুতে কোভিড মহামারি শুরু হওয়ার পর ভারত এবং মূল ভূখণ্ড চীনের মধ্যে ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায়। এরপরে রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে এই সংযোগ পুনরায় চালু করা হয়নি।
সোমবার চীনের বেইজিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি এবং চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র মধ্যে বৈঠকের পর এই ঘোষণা আসে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দুই দেশ নীতিগতভাবে সরাসরি বিমান চলাচল পুনরায় চালু করতে সম্মত হয়েছে। শিগগিরই এর বিস্তারিত নির্ধারণ করা হবে।
এদিকে, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা এই বছর ভারতের তীর্থযাত্রীদের জন্য তিব্বতের পবিত্র স্থান কৈলাস পর্বত এবং মানসসরোবর হ্রদ পুনরায় উন্মুক্ত করতে সম্মত হয়েছে।
কোভিড মহামারির কয়েক মাস পর, দুই দেশের সৈন্যরা হিমালয়ের বিতর্কিত সীমান্তে একটি রক্তাক্ত সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে অন্তত ২০ জন ভারতীয় এবং ৪ জন চীনা সৈন্য নিহত হয়।
ভারত ও চীন উভয়েই ৩,৩৭৯ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (LAC) বরাবর বিশাল সামরিক উপস্থিতি বজায় রেখেছে। এই সীমান্ত কখনো সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা হয়নি এবং ১৯৬২ সালের যুদ্ধের পর থেকে এটি উত্তেজনার একটি প্রধান উৎস।
২০২০ সালের জুন মাসের সংঘর্ষের পর সীমান্ত থেকে সৈন্য সরানো এবং নিয়মিত আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা হ্রাস করার চেষ্টা চালানো হয়। তবে কিছু অঞ্চলে সংঘর্ষের ঝুঁকি রয়ে গেছে।
সম্প্রতি, দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও কমানোর উদ্যোগ দেখা গেছে। গত অক্টোবর রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে একটি বিরল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ফ্লাইট পুনরায় চালুর ঘোষণার পর, চীনের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম উইবোতে অনেকেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।
এক চীনা ব্যবহারকারী জানান, তিনি ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের একটি টিকিট কিনেছিলেন। কিন্তু মহামারি শুরুর সঙ্গে সঙ্গে তার ফ্লাইট ও ভিসা বাতিল হয়ে যায়। তিনি লেখেন, "পাঁচ বছর অপেক্ষা করলাম... এবার আমাকে অবশ্যই ভারতে যেতে হবে।"
অন্য একজন ব্যবহারকারী ভারতের রঙের উৎসব হোলিতে যোগ দেওয়ার আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, "মার্চে হোলিতে যোগ দেওয়ার সুযোগ হবে কি?"
বর্তমানে বেইজিং থেকে নয়াদিল্লিতে সরাসরি যাত্রা করতে সাত ঘণ্টা সময় লাগে। তবে এখন যাত্রীদের হংকং, ব্যাংকক বা কুয়ালালামপুর হয়ে যাত্রা করতে হয়, যা অতিরিক্ত ছয় থেকে দশ ঘণ্টা সময় যোগ করে।
সাংহাইয়ে অধ্যয়নরত ভারতীয় পিএইচডি ছাত্র আনায়েত আলী এই খবরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, "এতে খরচ কমবে, সময় বাঁচবে এবং বাড়িতে যাওয়ার যাত্রা অনেক সহজ হবে।"
তবে কিছু চীনা নাগরিক এখনও সন্দিহান। একজন উইবো ব্যবহারকারী মন্তব্য করেন, "এটি এখনো নীতিগত একটি চুক্তি মাত্র।"
সূত্র: সিএনএন
নাহিদা