ছবি : সংগৃহীত
একটি ভিডিও, একটি বার্তা।
গাজার মাটি থেকে নতুন অধ্যায় লিখছে হামাস। হামাসের সামরিক শাখা আল কাসাম ব্রিগেড প্রকাশ করেছে একটি ভিডিও। যার নাম দেয়া হয়েছে ডেথ অ্যাম্বুশ সিরিজ। এতে দেখা যাচ্ছে হামাসের প্রতিরোধ যোদ্ধারা দুই ইসরাইলি শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করছে। এই দুই কর্মকর্তাই ছিলেন হামাসের সাবেক প্রধান ইয়াহিয়া সিনোয়ারের হত্যার পেছনে মূল পরিকল্পনা।
৬ জানুয়ারি, বেইথ হানুন। হামাস জানায়, একটি বোমার ফাঁদে পড়ে ইসরাইলের মেজর তার ডেপুটি এবং আরো কয়েকজন ইসরাইলি সেনাও প্রাণ হারায়। ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরোধী কার্যকর হওয়ার আগে এই ঘটনাগুলো ঘটেছে। কিন্তু কেন এই ভিডিও এখন প্রকাশ করল হামাস?
হামাস দেখাতে চায় ইসরাইল কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাজায় তাণ্ডব চলছে ১৫ মাস ধরে। আকাশ থেকে টানা বর্ষণ, মাটিতে ট্যাংকের গর্জন, গাঁজা আজ ধ্বংসস্তুূপ। কিন্তু কি ঘটছে এই ভূখণ্ডের ভেতরে?
গোপন গোয়েন্দা তথ্য বলছে, হামাস দিন দিন আরো শক্তিশালী হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বরাদ দিয়ে জানা যায়, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে হামাস ১০ থেকে ১৫ হাজার নতুন যোদ্ধা নিয়োগ দিয়েছে। যদিও তাদের অনেকে অল্প বয়সী এবং অপরিকল্পিতভাবে প্রশিক্ষিত, তবুও এই সংগ্রহ নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
তবে যুদ্ধে একদিকে যেমন নতুন যোদ্ধা এসেছে, তেমনি বিপুল সংখ্যক প্রাণহানি হয়েছে। ইসরাইলের দাবি, হামাসের প্রায় ২০০০০ যোদ্ধা প্রাণ হারিয়েছে। অন্যদিকে মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন এই সংখ্যা কিছুটা কম হলেও উল্লেখযোগ্য।
কিন্তু এখানে প্রশ্ন হলো, এত প্রাণহানি সত্ত্বেও কিভাবে হামাস বারবার সঙ্গবদ্ধ হচ্ছে? কেন ইসরাইল তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী হামাসকে ধ্বংস করতে পারছে না?
যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন, প্রতিবার ইসরাইলের অভিযান শেষ হওয়ার পর হামাস আবারো সংগঠিত হয়ে শক্তি সঞ্চয় করে। এটি এক ধরনের স্থায়ী বিদ্রোহ এবং চিরস্থায়ী যুদ্ধের দিকে পরিস্থিতি নিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি সতর্ক করেছেন।
গাজায় হামাস পরিচালিত প্রশাসন যুদ্ধবিরতির পর দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। ধ্বংস হয়ে যাওয়া এলাকার প্রাথমিক পরিষেবা গুলো পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে। একদিকে ইসরাইল চেষ্টা করেছে হামাসকে নির্মূল করতে ও অন্যদিকে হামাস দেখিয়েছে, গাজার মাটিতে তাদের শেকড় কতটা গভীরে।
হামাসের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা নতুন সদস্য নিয়োগ এবং তাদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে। গত জুলাইয়ে আবু উবাইদা বলেছিলেন, তাদের সংগঠন কয়েক হাজার নতুন যোদ্ধাকে দলে নিয়েছে।
যুদ্ধবিরতি কি সত্যি শান্তির পথ দেখাবে, নাকি এটি আরেকটি সংঘাতের জন্য প্রস্তুতির সময়?
গাজার বর্তমান অবস্থা এক একটাই ইঙ্গিত দেয়, হামাস শুধু টিকে নেই বরং তারা আরো শক্তিশালী হচ্ছে। ইসরাইলের এতদিনের পরিকল্পনা হয়তো গাজাকে ধ্বংস করেছে কিন্তু হামাসের শেকড় উপরে ফেলতে পারেনি।
শুরুতে যে ভিডিওর কথা বলেছিলাম, সেই ভিডিওর শেষ অংশ যেন একটাই বার্তা দেয়, এই লড়াই শুধু অস্ত্রের নয়, এটি মনোবলেরও। গাজা আজও দাঁড়িয়ে আছে। আর হামাস তার শেকড় আরো গভীর করছে।
মো. মহিউদ্দিন