ছবি: সংগৃহীত
নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার তেল সরবরাহে প্রভাব পড়ায় ভারতের জন্য একটি সংকটপূর্ণ সময় শুরু হয়েছে। দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতির দেশ হিসেবে ভারত ব্যাপকভাবে আমদানিকৃত জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল। তেলের উপর এই নির্ভরশীলতা ভারতকে বহিরাগত ধাক্কার মুখে ফেলে দিয়েছে।
নিষেধাজ্ঞাগুলো রাশিয়ার তেল উৎপাদক ও পরিবহনকারীদের লক্ষ্য করে তৈরি হয়েছে, যা ভারতের জ্বালানি স্থিতিশীলতা ব্যাহত করতে পারে, মুদ্রাস্ফীতি বাড়াতে পারে এবং গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ভারসাম্যে প্রভাব ফেলতে পারে। এর ফলে শুধু ভারতের অর্থনীতিই নয়, বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারও বড় পরিসরে প্রভাবিত হবে।
ভারত তার ব্যবহৃত তেলের ৮৮ শতাংশ আমদানি করে, যার ৪০ শতাংশ রাশিয়া থেকে আসে। এই নির্ভরশীলতা ২০২১ সালে মাত্র ১২ শতাংশ ছিল, যা ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরীণ চাহিদা সামাল দিতে রাশিয়ার দেওয়া ছাড়ে কেনাকাটা বাড়ানোর কারণে বেড়েছে। তবে এই রাশিয়ার তেলের ওপর নির্ভরশীলতা এখন ভারতের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে।
নতুন নিষেধাজ্ঞার ফলে ভারতের আমদানিকৃত রাশিয়ান তেলের এক-তৃতীয়াংশ, অর্থাৎ দৈনিক প্রায় ৫ লাখ ব্যারেল, বিপদের মুখে পড়েছে। এরই মধ্যে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। ভারতের ক্ষেত্রে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ১০ ডলার বাড়লে মুদ্রাস্ফীতি ০.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাবে এবং ব্যবসায়িক লাভের পরিমাণ কমবে। সরকারকে হয় এই বাড়তি খরচ ভর্তুকি দিয়ে সামাল দিতে হবে, নাহলে তা ভোক্তা বা ব্যবসায়ীদের ওপর চাপাতে হবে।
ভর্তুকির মাধ্যমে ভোক্তাদের রক্ষা করা যেতে পারে, তবে এর ফলে বাজেট ঘাটতি বাড়বে এবং ভারতের ঋণের পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে। অন্যদিকে, এই খরচ ব্যবসায়ীদের ওপর চাপালে বেসরকারি খাতের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। আর ভোক্তাদের ওপর চাপানো হলে ব্যাপক অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে।
ভারতে মুদ্রার মান কমে যাওয়া পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তুলেছে। ডলারের বিপরীতে রুপি দুর্বল হওয়ায় আমদানির খরচ বেড়ে গেছে। এ ছাড়া নিষেধাজ্ঞার ফলে রাশিয়ার তেল পরিবহনে ব্যবহৃত ১৮৩টি জাহাজ নিষিদ্ধ হওয়ায় পরিবহন খরচ বেড়েছে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে ভারত মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল সংগ্রহের চেষ্টা করছে। তবে এটি রাশিয়ার দেওয়া ছাড়ের মতো খরচ সাশ্রয়ী হবে না। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের তেল সরবরাহকারীরা দীর্ঘমেয়াদি ছাড় দেওয়ার ক্ষেত্রে রাশিয়ার মতো উদার নয়।
তেল সংকট ভারতের অর্থনৈতিক লক্ষ্য এবং কৌশলগত অবস্থানকেও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। আমদানি করা জ্বালানির ওপর এই নির্ভরশীলতা ভারতের দীর্ঘমেয়াদি শক্তি নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতায় বড় ধাক্কা দিতে পারে।
সূত্র: দ্য ডিপ্লোমেট
নাহিদা