ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩ মাঘ ১৪৩১

মিশিগানে চলতি মৌসুমের তুষারপাতে বিপর্যস্ত প্রবাসী বাঙালির জীবন

রফিকুল হাসান চৌধুরী তুহিন, যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশিত: ০৯:৫৫, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫

মিশিগানে চলতি মৌসুমের তুষারপাতে বিপর্যস্ত প্রবাসী বাঙালির জীবন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যসহ কয়েকটি রাজ্যে অব্যাহত শৈত্য প্রবাহ ও ভারী তুষারপাত প্রবাসী বাঙালি ও ভিনদেশী নাগরিকদের জীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। চলতি মৌসুমে ৩/৪ কিংবা ৫/৬ ইঞ্চি পর্যন্ত টানা তুষারপাত এবং হিমাঙ্কের নিচে নেমে আসা তাপমাত্রার কারণে জনজীবন কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। এমন চরম প্রতিকূল আবহাওয়ায় নাগরিকদের দিন কাটছে অসহনীয় কষ্টে।

নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাসা-বাড়ী থেকে বের হচ্ছেন না। ইতিমধ্যে থেমে থেমে বন্ধ দেয়া হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আবার বেশ কিছু কর্মস্থলেও চলছে সাট ডাউন।সব মিলিয়ে লেজে গোবরে অবস্থা অতিবাহিত করছেন এখানকার নাগরিকরা।

বাংলাদেশী তথা বাঙালী সহ আরো কয়েকটি দেশের প্রবাসীদের জীবন-জীবিকার বড় অর্থ আয়ের একমাত্র ভরসাস্থল হিসেবে পরিচিত মিশিগানের গুরুত্বপূর্ণ বেশ ক'টি কোম্পানী। অথচ এসবের অনেক গুলোতেই চলছে শাটডাউন।

অনেক কোম্পানীর কোন না কোন শাখা প্ল্যান্ট একেবারে আবার থেমে থেমেও বন্ধ রাখা হচ্ছে। কখনো কখনো নানান অজুহাত বা শর্তের আওতায় কর্মী ছাটাই বা সময় বেধে দিয়ে বাড়ীতে শ্রমিকদের পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে করে অনেকেই  পড়ছেন আর্থিক সংকটে। 

অন্যদিকে এসব ভূক্তভোগীরা স্ব স্ব কোম্পানী বা সংশ্লিষ্ট সরকারী কতৃপক্ষের শর্তাবলীর আওতায় না পড়ায় আনএমপ্লোমেন্টের জন্য এপ্লাই করা তো দূরের কথা, আর্থিক সুবিধাও গ্রহণ করতে পারছেন না।সার্বিক অবস্থায় নিত্য দিনের পারিবারিক খরচ,বাসা ভাড়া সহ আনুসাঙ্গিক বিষয়াদি মোকাবেলায় সকলকেই এখন চরম হিমশিম খেতে হচ্ছে। 

আবার কেউ আনএম্পলোমেন্ট সুবিধা গ্রহনের আওতায় পড়লেও সপ্তাহ অনুযায়ী নামে মাত্র ২/৩'শ মতো ডলার পাচ্ছেন। তন্মধ্যে সামান্য কম-বেশীও হচ্ছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই কম।এমতাবস্থায় কেউ বিকল্প হিসেবে বিভিন্ন গ্রোসারী,শপিংমল,রেষ্টুরেন্ট ও ফাস্ট ফুডের মতো প্রতিষ্ঠান গুলোতে হন্য হয়ে কাজ খুজলেও তেমন সাড়া পাচ্ছেন না। উপরন্ত বাধা হয়ে দাড়িয়েছে প্রকৃতির এমন বিরুপ আবহাওয়া।

মাত্রাতিরিক্ত শৈত্য প্রবাহে এসব প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক নিয়োগ, ক্রেতা উপস্থিতি ও বেচা-কেনা হ্রাস পাওয়ায় নাগরিক জীবন-যাত্রা থমকে গেছে।বিশেষ করে কর্মস্থল গুলোতে কাজের পরিস্থিতি বেশ ভাটা পড়েছে। 

এদিকে আবহাওয়া বার্তা ও প্রত্যক্ষ পরিস্থিতি বিবেচনায় শৈত্য প্রবাহে শারীরিক অবস্থা বিপদের আশংকা সহ সার্বিক অবস্থাধীনে অনেকেই বাসা-বাড়ীতে অবস্থান করছেন। চলতি উইন্টার মৌসুমে এমন আকস্মিক ভয়াবহ চিত্রে অঝেরো তুষার, গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি, হিমেল হাওয়ার মতো সবকিছু মিলিয়ে প্রকৃতি যেন সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মকলুখাত অর্থাৎ মানুষের প্রতি বিরক্ত মনোভাব প্রকাশ করছে।  

আকাশ অন্ধকারাচ্ছন্ন, রৌদ্রের কোন বালাই নেই। দিনকে কখনো সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার মুহুর্তের মতো মনে হয়। আরো ক'দিন এমন শৈত্য প্রবাহ, তুষারপাত ও কর্মস্থল সংশ্লিষ্ট লীলা-খেলায় প্রবাসী বাংলাদেশী সহ অধিকাংশ নাগরিকরা চরম জীবন যুদ্ধে বৈরী সময় পাড় করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এমন পরিস্থিতি কাটিয়ে আবার দৃঢ় চেতা মনোবল নিয়ে আর্থিক মন্দা কাটিয়ে উঠাও অসম্ভব কিছু নয়। এমনিভাবে কর্মক্লান্ত আর্থিক অনটনের মানুষ গুলোর অবয়ব ভরে উঠবে অট্টহাসিতে,সেটা-ই এখন সকলের প্রত্যাশা।

আফরোজা

×