ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১১ মাঘ ১৪৩১

ট্রাম্প যেভাবে বদলে দেবেন বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৫:২৩, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫

ট্রাম্প যেভাবে বদলে দেবেন বাংলাদেশ

ছবি: সংগৃহীত

অন্ধকার রাত। ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউসের সামনে তুষারের স্তূপ এখনও ঝিকিমিকি করছে। এমন মুহূর্তে এক ঘোষণা সারা বিশ্বকে চমকে দিল—ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন। এই ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই বদলে যেতে শুরু করল বিশ্বের রাজনীতি, অর্থনীতি এবং পরিবেশের সমীকরণ।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক তথ্যমতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশে রেমিটেন্স পাঠানো দেশের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে এসেছে ১.৪ বিলিয়ন ডলার। এতদিন এই তালিকার শীর্ষে থাকা সংযুক্ত আরব আমিরাত অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে। যদিও এই তথ্য বাংলাদেশের জন্য আনন্দের, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে গভীর এক প্রশ্ন—ট্রাম্পের দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসা বাংলাদেশের উপর কী প্রভাব ফেলবে?

ডোনাল্ড ট্রাম্প রিপাবলিকান দলের প্রতিনিধি এবং তার অর্থনৈতিক নীতি বরাবরই প্রটেকশনিস্ট। দেশীয় ব্যবসাকে সুরক্ষিত করতে বিদেশি পণ্যের উপর শুল্ক আরোপে তার কৌশল নতুন নয়। চীনসহ অনেক দেশের রপ্তানির উপর ৬০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনের তুলনায় বাংলাদেশের রপ্তানি তুলনামূলক কম এবং সস্তা হওয়ায় তৈরি পোশাক শিল্পে এর প্রভাব কিছুটা কম হতে পারে। তবুও ট্রাম্পের নতুন নীতিগুলো এই খাতেও চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে।

অভিবাসন নীতিতেও কঠোর অবস্থান বজায় রাখার ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে তিনি বদ্ধপরিকর। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করা শিশুরাও নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার হারাতে পারে—এমন সিদ্ধান্তের ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ অবৈধ অভিবাসীর মধ্যে প্রায় ৮৩ লাখ কর্মজীবী। এই অভিবাসীদের একটি বড় অংশ বাংলাদেশি। ফলে তাদের ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ইস্যুতেও ট্রাম্পের নীতিগুলো বাংলাদেশের জন্য শঙ্কার কারণ হতে পারে। নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ভর্তুকি কমানো এবং পরিবেশ রক্ষার উদ্যোগ বন্ধ করা তার আগের শাসনামলেই দেখা গেছে। তিনি আবারো প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিতে পারেন। এর ফলে জলবায়ু অর্থায়ন কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে, যা বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে।

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনৈতিক চুক্তি, অভিবাসন সুবিধা এবং জলবায়ু অর্থায়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কৌশলগত প্রস্তুতি নিতে হবে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসা শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয়, সারা বিশ্বের রাজনীতিকে নতুন করে সাজাচ্ছে। বাংলাদেশের জন্য এটি একদিকে সুযোগ তৈরি করছে, অন্যদিকে সতর্কবার্তা দিচ্ছে। এখনই সময় কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার।

ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/Xvk0TMfrP7w?si=6pCizkqs_xnf8qZy

এম.কে.

×