ছবি: সংগৃহীত
আজ ২৩ জানুয়ারি ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের অবিসংবাদিত মহানায়ক নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মদিন। তাঁর জীবন ও সংগ্রাম ছিল সাম্রাজ্যবাদ, শোষণ ও অসাম্যের বিরুদ্ধে এক অনন্য সংগ্রামের প্রতীক।
নেতাজীর আদর্শ বহুত্ববাদী, ধর্মনিরপেক্ষ এবং সাম্যের উপর ভিত্তি করে নির্মিত একটি স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু আজকের ভারতের প্রেক্ষাপট সেই স্বপ্নকে আরও দূরে সরিয়ে দিয়েছে।
নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু ছিলেন এক সাহসী বিপ্লবী, যিনি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কেবলমাত্র স্বাধীনতাই নয়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও জাতিগত সাম্যের জন্যও সোচ্চার ছিলেন। তিনি কখনোই ধর্মের ভিত্তিতে রাজনীতি করার পক্ষে ছিলেন না।
১৯৩৮ সালে কংগ্রেস সভাপতি থাকাকালীন তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে, কংগ্রেসে চরমপন্থী হিন্দু-মুসলিমদের জন্য কোনও জায়গা নেই। নেতাজী স্পষ্ট করেছিলেন, ধর্মীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে একতার প্রয়োজনীয়তা।
নেতাজীর সময়ে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে হিন্দুত্ববাদী চরমপন্থা একটি বিতর্কিত ইস্যু ছিল। আজকের বিজেপি বা আরএসএসের পূর্বসুরী সাভারকর এবং তাঁর হিন্দু মহাসভার প্রতি নেতাজীর বিরোধিতা ছিল তীব্র।
সুভাষ তাঁর লেখায় সাভারকরের উগ্র হিন্দুত্ববাদকে আক্রমণ করেছিলেন এবং ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে ভারতীয়দের নিয়োগের সাভারকরের আহ্বানকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখেছিলেন।
নেতাজীর নেতৃত্বে গঠিত আজাদ হিন্দ ফৌজ ছিল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উদাহরণ। সেখানে হিন্দু, মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টান সবাই সমানভাবে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন। মুসলিম কমান্ডার কর্নেল শাহনওয়াজ খান বা মহিলাদের নিয়ে গঠিত ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী সেহগালের বাহিনী এই সাম্যের প্রতীক ছিল।
১৯৪৩ সালে ব্যাঙ্ককের রেডিও থেকে দেওয়া এক ভাষণে নেতাজী গর্বের সঙ্গে উল্লেখ করেছিলেন যে, তাঁর বাহিনীতে মুসলমান সদস্যদের সংখ্যা বেশি ছিল এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ছিল তাদের গৌরব। আজকের দিনে এমন ঐক্যের উদাহরণ অভাবনীয় মনে হয়।
আজকের ভারতের প্রেক্ষাপটে, যেখানে হিন্দুত্ববাদ একটি আক্রমণাত্মক আদর্শ হিসেবে মাথা তুলেছে, সেখানে নেতাজীর বহুত্ববাদী ভারতের স্বপ্ন আরও অধরা হয়ে পড়েছে। মুসলিম সম্প্রদায়কে কোণঠাসা করার মাধ্যমে বিভাজন নীতি চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নেতাজীর সাম্যের বার্তা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শিক্ষা ক্রমশ ভুলে যাচ্ছে ভারত।
নেতাজী জানতেন যে, সব ধর্মের ঐক্য ছাড়া স্বাধীনতা অর্জন কঠিন। তিনি হিন্দুস্তানিকে জাতীয় ভাষা হিসেবে প্রচলনের পক্ষে ছিলেন, যাতে হিন্দি-উর্দুর মিশ্রণ সর্বজনগ্রাহ্য হয়। তাঁর বহুত্ববাদী আদর্শ আজকের ভারতীয় রাজনীতিতে বড়ই বিরল।
নেতাজীর জন্মদিনে তাঁর আদর্শ এবং ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোই যথেষ্ট নয়। বরং তাঁর আদর্শিক চিন্তাভাবনা পুনরায় গ্রহণ করাই বর্তমান পরিস্থিতিতে হতে পারে ভারতের অগ্রগতির একমাত্র পথ। আর সেই ধারাবাহিকতায়ই উগ্র হিন্দুত্ববাদের আগ্রাসন থেকে রেহাই পাবে ভারতের সকল প্রতিবেশী রাষ্ট্র।
এম.কে.