ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১

নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধের সুযোগে সীমান্ত দিয়ে মাদক আসছে অবাধে

শংকর কুমার দে

প্রকাশিত: ২৩:৫৯, ২১ জানুয়ারি ২০২৫

মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধের সুযোগে সীমান্ত দিয়ে মাদক আসছে অবাধে

মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠী

মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির গৃহযুদ্ধের মধ্যেও মাদক ইয়াবা প্রবেশ বন্ধ হচ্ছে না। রাখাইন অঞ্চলের বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকাগুলো এখন যুদ্ধকবলিত হয়ে পড়ার সুযোগে ইয়াবাসহ মাদক পাচার চলছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মির পৃষ্ঠপোষকতায়।

মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সঙ্গে বিদ্রোহী সশস্ত্র সংগঠন আরকান আর্মির যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পর্যাপ্ত অর্থের যে প্রয়োজন তার জোগান দেওয়া হচ্ছে ইয়াবা থেকে। এ কারণে মিয়ানমার হয়ে বাংলাদেশের বাজারে আসা এসব ইয়াবার চালান নিয়ন্ত্রণে রীতিমতো বেগ পেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। 
মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর সঙ্গে গৃহযুদ্ধের মধ্যে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি রাখাইন প্রদেশ দখল করে নেওয়ার পর এখন মাদক ইয়াবা পাচার বাড়ছে উদ্বেগজনকভাবে। নাফনদী পথে টেকনাফ স্থলবন্দরে সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ থাকলেও, ইয়াবা বিভিন্ন মাদক আসা কমছে না।

মিয়ানমার থেকে মাদক পাচার রোধে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে টহল জোরদার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। চলতি বছরের ১ থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত গত ১২ দিনে ৫ জন মাদক পাচারকারীকে গ্রেপ্তারসহ প্রায় ২৪ কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ৫ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি। পুলিশের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবছর মিয়ানমার থেকে মাদক ইয়াবা পাচারের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে প্রায় ৫০ হাজার কোটি। 
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জানিয়েছে, গত ১২ জানুয়ারি ভোরে টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া এলাকার ডাবল জোড়া নামক এলাকা দিয়ে মিয়ানমার থেকে মাদকের একটি চালান আসার খবরে বিজিবির সদস্যরা সেখানে টহল-নজরদারি বৃদ্ধি করে। মিয়ানমার জলসীমা থেকে কর্কশিট দিয়ে  তৈরি ভেলায় মাদক নিয়ে নাফনদী সাঁতরে আসা দুই পাচারকারীকে দেখে অভিযান পরিচালনা করে।

এ সময় ঘন কুয়াশার আড়ালে নদী সাঁতরিয়ে শূন্য লাইন অতিক্রম করে বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তের অপর পার্শ্বে পালিয়ে যায় তারা। তাদের ফেলে যাওয়া ভেলা তল্লাশি চালিয়ে ২ লাখ ৫০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়, যার মূল্য প্রায় ১২ কোটি টাকা।  
বিজিবি-২ অধিনায়ক আশিকুর রহমান বলেন, মাদকের একটি বড় চালান পাচারের গোপন তথ্যের ভিত্তিতে দমদমিয়াস্থল নাফনদের তীরে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ২৫টি প্লাস্টিকের ব্যাগে থাকা ২ লাখ ৫০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। আমাদের মাদকবিরোধী অভিযান চলমান রয়েছে। আমরা ১২ দিনে প্রায় পাঁচ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি।

তিনি আরও বলেন, মাদক রোধসহ সীমান্তে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি খুব শক্ত অবস্থানে রয়েছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গার পাশাপাশি কোনো মাদক ঢুকতে না পারে সেজন্য বিজিবি রাত-দিন টহল অব্যাহত রেখেছে। 
বিজিবির তথ্য বলছে, সীমান্ত দিয়ে নানা কৌশলে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথ আইস পাচার হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এর পেছনে পৃষ্ঠপোষকতায় বারবার নাম আসে মিয়ানমার সরকারের জান্তা বাহিনীর। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক তালিকায় বলা হয়েছে, মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বিজিপির অধীনেই ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক বেচা-বিক্রি হয়ে আসছে।

গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে মাসব্যাপী তুমুল লড়াইয়ের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বিজিপি ঘাঁটিগুলো এখন আরাকান আর্মির দখলে। ঘাঁটিগুলোতে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন আরাকান আর্মির সদস্যরা। বিশেষ করে গত ৮ ডিসেম্বর রাখাইনে মংডু টাউনশিপ আরাকান আর্মির দখলের পর বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বাণিজ্যে বন্ধ থাকলে সেদেশ থেকে মাদক ইয়াবা আসা বন্ধ হয়নি।  
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বলেন, এখন আরাকান আর্মি পাচারকারীদের সঙ্গে সিন্ডিকেট করে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে মাদক পাচার করছে। তা না হলে সীমান্ত দিয়ে মাদক পাচার বন্ধ হচ্ছে না কেন?  এ বিষয়টি আমি জেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় বলেছি। কেননা আরাকান আর্মি সম্প্রতি সময়ে রাখাইনে মংডু টাউনশিপ দখলের পর থেকে মাদক পাচার বেড়ে গেছে।

তিনি বলেন, মূলত তারা (আরাকান আর্মি) সেদেশ থেকে গবাদি পশু এবং মাদক পাঠাচ্ছে বাংলাদেশে। মাদককের টাকায় তার বিপরীতে বিভিন্ন কৌশলে সেদেশে (মিয়ানমার) চোরাচালানে পাচার হচ্ছে (যাচ্ছে) রসদসহ বিভিন্ন মালামাল। সরকারের উচিত এই মূর্হতে এটি বন্ধের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া, অন্যতায় ভয়াবহ রূপ নেবে।
টেকনাফ উপজেলার একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মিয়ারমারের সংঘাতে মংডু টাউনশিপ আরাকান আর্মি দখলের পর গত ৮ ডিসেম্বরের পর থেকে মিয়ানমার থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে কোন ধরনের পণ্যবাহী ট্রলার আসেনি। ফলে স্থলবন্দর অচল হয়ে পড়ে আছে। অভিযোগ রয়েছে, আরাকান আর্মির প্রতিবন্ধকতার কারণে কোনো ট্রলার না এলেও সীমান্তে মাদক পাচার বেড়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্র জানান, মিয়ানমারের ৪৫ ইয়াবা কারখানায় তৈরি ইয়াবার চালানে প্রায় প্রতিদিনই লাখ লাখ পিস ইয়াবা প্রবেশ করছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের বাজারকে টার্গেট করে মিয়ানমারের এসব ইয়াবা কারখানাগুলোতে তৈরি হচ্ছে ১৩ ধরনের ইয়াবা। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের প্রায় ৪৩টি পয়েন্ট দিয়ে বিভিন্ন কৌশলে ইয়াবা পাচার করা হচ্ছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমারের ২৭১ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে ১৭২ কিলোমিটারই অরক্ষিত। ইয়াবার চালান নিয়ে আসছে রোহিঙ্গারাও।

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা আসার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মরণ নেশা ইয়াবার চালান আসার ঘটনাও বেড়েছে। হেরোইন, বাংলা মদ, চরস, গাঁজাসহ নানা ধরনের মাদকের স্থান দখল করে নিয়েছে ইয়াবা। মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান আসা কোনোভাবেই বন্ধ করতে না পারায় গোটা বাংলাদেশ গিলে খাচ্ছে মিয়ানমারের ইয়াবার চালান। 
পুলিশের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে ইয়াবা আনতে বাংলাদেশ থেকে বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। বিগত সরকারের সময়ে কক্সবাজারের টেকনাফে ২১ ইয়াবা ও হুন্ডি ব্যবসায়ীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে একথা জানিয়েছেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি খোন্দকার গোলাম ফারুক। টেকনাফের সরকারি কলেজ মাঠে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে ২১ হাজার ইয়াবা কারবারি ও স্থানীয়ভাবে  তৈরি ১০টি আগ্নেয়াস্ত্রও জমা দিয়েছিলেন ইয়াবা কারবারিরা।

আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে ১০২ ইয়াবা ব্যবসায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। এই আত্মসমর্পণ সভায় মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে ইয়াবা আনতে বাংলাদেশ থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাওয়ার তথ্য জানানোর পর নড়ে চড়ে বসে বিজিবি, কোস্টগার্ড, র‌্যাব, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মিয়ানমারের জান্তা ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধের সুযোগ কাজে লাগিয়ে মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় প্রদেশ শান রাজ্য হয়ে উঠেছে মাদক কারবারিদের স্বর্গরাজ্য। আর মাদক কারবারিদের মাদক পাচারের বিশেষ করে ইয়াবা পাচারের কর্মকা-ের সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে রয়েছে প্রতিবেশী বাংলাদেশ।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে ইয়াবার সবচেয়ে বড় চালান আসে শান রাজ্য থেকে। ইয়াবার পাশাপাশি ওই রাজ্যে একরকম বিনা বাধায় উৎপাদিত হচ্ছে ভয়ঙ্কর মাদক ক্রিস্টাল মেথ (আইস) ও হেরোইন। এতদিন বাংলাদেশে আইসের মতো মাদকের বিস্তৃতি না থাকলেও সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে প্রায়ই জব্দ হচ্ছে সিনথেটিক এ মাদকের চালান।

গত বছরের নভেম্বরে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ থেকে ৫ কোটি টাকা মূল্যের ১ কেজি আইস জব্দ করে কোস্টগার্ড। তার আগে আগস্টে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) অভিযানে টেকনাফ ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত থেকে ২১ কোটি টাকা মূল্যের আইস ও ইয়াবার বড় চালান জব্দ হয়।
জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক সংস্থা ইউএনওডিসির প্রতিবেদনে ২০২৩ সালের পর ২০২৪ সালেও আফিম উৎপাদনে শীর্ষ দেশ হিসেবে মিয়ানমারের নাম দেখা যায়। শান রাজ্যের পাহাড়ি ঢালে চাষ হয় পপি, যার আঞ্চলিক নাম পিস ফ্লাওয়ার বা শান্তির ফুল। এই পপি ফুল থেকেই নানা প্রক্রিয়ায় প্রস্তুত হয় হেরোইন। হেরোইনের পাশাপাশি এই রাজ্যে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক ইয়াবা ও আইস কারখানা।

মিয়ানমারে ইয়াবা  তৈরির ৩৭টি কারখানার খোঁজ পাওয়া গেলেও গৃহযুদ্ধের সুযোগ কাজে লাগিয়ে গত কয়েক বছরে এই সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়েছে। ভৌগোলিকভাবে শান রাজ্যের সীমান্তবর্তী দেশ চীন, থাইল্যান্ড ও লাওস। ইয়াবা তৈরির প্রধান কাঁচামাল মেথামফেটামিন ও ক্যাফেইনের বড় জোগান আসে গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেলে অবস্থিত থাইল্যান্ড ও লাওস থেকে।

এ ছাড়া আইস তৈরির আরেক কাঁচামাল এফিড্রিনের বড় সরবরাহক চীনের মাদক কারবারিরা। অনেক সময় ভারত থেকেও আসে কাঁচামালের চালান। সব মিলিয়ে প্রস্তুতকারক হিসেবে শান রাজ্যের কারখানাগুলোতে চলে মাদকের রমরমা উৎপাদন।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে শান রাজ্যকে যুদ্ধবাজ নেতা, চোরাকারবারি এবং মাদকব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় কেন্দ্র বলে উল্লেখ করা হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মাদকের কেন্দ্রভূমি এ রাজ্যটিতে এতদিন সরকারের চোখ ফাঁকি দিয়ে এবং নানা সময়ে স্থানীয়, এমনকি দেশটির কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতাদের উৎকোচ প্রদানের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করতেন মাদক কারবারিরা।

তবে বর্তমানে সরাসরি বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মির পৃষ্ঠপোষকতায় উৎপন্ন হচ্ছে ভয়ঙ্কর এসব নেশাদ্রব্য। বর্তমানে মিয়ানমারের সরকার ব্যবস্থা একরকম ভেঙে পড়েছে। শান রাজ্যে একাধিক বিদ্রোহী সশস্ত্র সংগঠনের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পর্যাপ্ত অর্থের প্রয়োজন। সশস্ত্রগোষ্ঠীর অর্থের মূল জোগান আসছে মাদক থেকে। মিয়ানমার হয়ে বাংলাদেশের বাজারে আসা এসব ইয়াবার চালান নিয়ন্ত্রণে রীতিমতো বেগ পেতে হচ্ছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।
মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, বাংলাদেশে ইয়াবার প্রায় পুরো চালান আসে মিয়ানমার থেকে। টেকনাফ হয়ে তা দেশের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ে। ইয়াবার সঙ্গে সঙ্গে কারবারিরা আইস ও হেরোইনের চালানও পাঠাচ্ছে। প্রতিনিয়ত এরা মাদক পাচারে অভিনব সব পন্থা ব্যবহার করছে। প্রতি মাসেই পরিবর্তন হচ্ছে মাদক পাচারের রুট।
মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, ইয়াবা ও আইসের জন্য রাজধানীতে আলাদা আলাদা হটস্পট আছে। ঢাকার রেল স্টেশন, বাস টার্মিনাল ও লঞ্চঘাট এলাকা ইয়াবার একেকটি বড় জোন। এর বাইরে মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্প, মিরপুর কালশী, পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা, কামরাঙ্গীরচর ও কাওরানবাজার এলাকায় ডজনখানেক সক্রিয় চক্র ইয়াবা কারবারের সঙ্গে জড়িত।

আইসের দাম বেশি হওয়ায় অভিজাত এলাকাগুলোতে এর বিস্তার বেড়েছে। গুলশান, বনানী ও উত্তরার মতো এলাকায় বর্তমানে কয়েকটি চক্র আইস বিক্রির সঙ্গে জড়িত। এদের অনেকেই নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে অনলাইন ক্রয়-বিক্রয়কে বেছে নিয়েছে। ইয়াবা ও গাঁজার আধিক্যে দেশে হেরোইনের ব্যবহার কমে গেছে। তবে অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে আবারও নতুন করে হেরোইনের বিস্তার শুরু হয়েছে। বিশেষ করে মিয়ানমার থেকে প্রতিনিয়ত কমবেশি হেরোইনের চালান দেশে প্রবেশ করছে বলে জানিয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কর্মকর্তা। 
ইউএনওডিসির গবেষণা অনুযায়ী, একটি দেশে যে পরিমাণ মাদক প্রবেশ করে তার ৯০ শতাংশ বাজারে ছড়িয়ে পড়ে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গোচরে আসে মাত্র ১০ শতাংশ। সেই হিসাবে পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার হয়ে আসা মাদকে দিনকে দিন নেশাদ্রব্যের বড় হটস্পটে পরিণত হচ্ছে বাংলাদেশ। মিয়ানমারে আফিম চাষ বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রতি বাংলাদেশে হেরোইন প্রবেশের পরিমাণ বেড়েছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, জাতিসংঘ ১০ শতাংশ মাদক জব্দের কথা বললেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ পরিমাণ আরও কম। বাংলাদেশে ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক আগের তুলনায় অনেক সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। মাদক যখন সহজলভ্য হবে তখন এর বিস্তার বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে যাতে কোনোভাবেই ইয়াবা, আইস বা হেরোইনের মতো মাদক প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করার ওপর জোর দেন এই বিশেষজ্ঞ।

×