ভয়, অনিশ্চয়তা এবং বেঁচে থাকার তীব্র আকাঙ্ক্ষার মধ্যে উত্তপ্ত এক রাত কাটালেন চিহুয়াহুয়া শহরের শরণার্থীরা। মধ্যরাতে পুলিশের আকস্মিক অভিযানের সময় নিজেদের রক্ষা করতে মরিয়া হয়ে তারা কম্বল ও বিছানার গদি জ্বালিয়ে দেন। ঘটনাটি শরণার্থীদের জীবনসংগ্রামের এক হৃদয়বিদারক চিত্র তুলে ধরে।
মেক্সিকো সরকারের পক্ষ থেকে শরণার্থীদের ক্যাম্প উচ্ছেদ করতে প্রায় ২৫০ জন নিরাপত্তাকর্মী, দাঙ্গা প্রতিরোধী সরঞ্জাম পরিহিত জাতীয় গার্ড সদস্যদেরও নিয়ে মধ্যরাতে অভিযান চালানো হয়। যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তের মাত্র কয়েক মাইল দূরে এই ক্যাম্পটি ছিল বহু ভেনেজুয়েলান শরণার্থীর সাময়িক আশ্রয়স্থল।
“আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম,” বললেন ভেনেজুয়েলার শরণার্থী ড্যানিয়েল ব্যারিওস। তার পাশে এক নারী একটি শিশুকে পিঠে বহন করছিলেন। “তারা হঠাৎ চারদিক থেকে ঘিরে ফেলল। বলল, কেবল কথা বলতে আর ক্যাম্প পরিদর্শনে এসেছে। কিন্তু এত পুলিশ আর সেনা নিয়ে মধ্যরাতে কি শুধু কথা বলতে আসে?”
শরণার্থীরা তাদের গদি ও কম্বল পুড়িয়ে বিদ্রোহের চেষ্টা করেন। ক্যাম্পের মধ্যে থেকে শিশুসহ ব্যক্তিগত জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন অনেকে। একজন প্রত্যক্ষদর্শীর মতে, ক্যাম্পটি যেন মুহূর্তে ধোঁয়া আর চিৎকারে ভরে যায়।
এক নারী দুই শিশুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলেন, আর দু’জন পুরুষ কোলে শিশু নিয়ে দিশেহারা অবস্থায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। ধোঁয়ার লাল কুণ্ডলী আকাশে উঠছিল, সেই সঙ্গে ছিল ভয় আর বিভ্রান্তির স্পষ্ট চিহ্ন। “আমরা এই ক্যাম্পে নতুন এসেছি। কী হচ্ছে তা কিছুই বুঝতে পারছি না। আমরা ভীত। খুব ভীত,” বললেন তাদের মধ্যে একজন।
মেক্সিকোর অভিবাসন সংস্থা এই অভিযানের বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। তবে এক কর্মকর্তার মতে, এই অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল শরণার্থীদের মেক্সিকোর দক্ষিণ সীমান্তে নিয়ে যাওয়া, যেখানে তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে।
শরণার্থীদের জন্য এই ক্যাম্পটি ছিল আশার শেষ আলোকস্তম্ভ। বহু ভেনেজুয়েলান পরিবার, যারা যুদ্ধ, দারিদ্র্য এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থেকে পালিয়ে এসেছে, তাদের স্বপ্ন ছিল একদিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে নতুন জীবনের সূচনা করবে। কিন্তু মধ্যরাতের এই অভিযানের পর সেই স্বপ্ন যেন আরেক ধাপ দূরে সরে গেল।
সূত্র:রয়টার্স
আফরোজা