ছবি: সংগৃহীত
কাঁটাতারের বেড়া এমন এক বিষয় যা নিয়ে ভারতের সীমান্ত অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে যেমন, তেমনি সেখানকার একাডেমিক ও বিশ্লেষকদের মধ্যেও মতপার্থক্য স্পষ্ট।
ভারতীয়দের মধ্যে এই বেড়া নিয়ে ইতিবাচক ও নেতিবাচক, উভয় ধরনের মতামত রয়েছে।
অনেকেই স্বীকার করেছেন যে সীমান্তে বেড়া দেওয়ার কারণে অপরাধ বা চোরাচালানে নিয়ন্ত্রণ এসেছে। গরিব গ্রামবাসীদের গোয়াল থেকে গরু চুরি করে অন্য পাশে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও অনেক কমে গেছে।
তবে, যাদের কৃষিজমি কাঁটাতারের অন্য পাশে পড়েছে, তাদের মধ্যে এই নিয়ে তীব্র ক্ষোভ রয়েছে। বিএসএফ থেকে বিশেষ পারমিট নিয়ে দিনে মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য তারা জমিতে চাষ করতে যেতে পারেন। কিন্তু মাঝেমধ্যে নানা অজুহাতে ফেন্সিংয়ের গেট খোলা হয় না। অনেক সময় তাদের চোখের সামনেই ফসল লুট হয়ে যায় – এমন অভিযোগ প্রায়শই শোনা যায়।
এমনকি, মেঘালয়ের ইস্ট খাসি হিলসের লিংখং গ্রামের মতো জায়গায় বাসিন্দারা কয়েক বছর আগে কাঁটাতার লাগাতে বাধা দিয়েছিলেন, কারণ তাদের আশঙ্কা ছিল এতে তারা ভারতের মানচিত্রের বাইরে চলে যাবেন।
ভারতে এমন অনেক অঞ্চল রয়েছে, যেখানে গ্রামবাসীদের বাধার কারণে কাঁটাতার বসানোর কাজ থেমে গেছে।
ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব এবং ঢাকায় নিযুক্ত প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত মুচকুন্দ দুবে একাধিকবার বলেছেন, "কাঁটাতারের বেড়া মান্ধাতার আমলের ধারণা, যা একুশ শতকে আর মানানসই নয়।"
তিনি আরও বলতেন, "প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হয়তো মেক্সিকো-আমেরিকার মধ্যে দেয়াল তুলেছেন, সেটা আলাদা ব্যাপার। কিন্তু ভারত যদি বাংলাদেশ সীমান্তে বেড়া দেয়, তবে তা স্ববিরোধী। একদিকে বন্ধুত্বের স্লোগান দেওয়া এবং অন্যদিকে সীমান্তে দেয়াল তুলে দেওয়া – এ দুটি একসঙ্গে চলতে পারে না।"
অন্যদিকে, অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (অধুনা প্রয়াত) ফেলো জয়িতা ভট্টাচার্য যুক্তি দিয়েছিলেন যে এই বেড়া সীমান্তে অনেক ধরনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে সক্ষম হয়েছে।
তার মতে, বাংলাদেশ-ভারত উন্মুক্ত সীমান্তের কারণে আন্তঃসীমান্ত অপরাধ হওয়া খুবই স্বাভাবিক। আর এ ধরনের অপরাধ ঠেকানোর জন্য কাঁটাতারের বেড়ার মতো কার্যকর বিকল্প ভারতের হাতে নেই।
সূত্র: বিবিসি
নাহিদা