পাকিস্তানের একটি আদালত শুক্রবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ভূমি দুর্নীতি মামলায় ১৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। এই রায় দেশটির রাজনৈতিক অস্থিরতা কমাতে তার দল এবং সরকারের মধ্যে চলমান আলোচনার জন্য একটি বড় ধাক্কা।
এই রায় দেওয়া হয়েছে রাওয়ালপিন্ডির একটি কারাগারে অবস্থিত দুর্নীতি দমন আদালতে। ইমরান খান এই কারাগারে আগস্ট ২০২৩ থেকে বন্দি রয়েছেন।
খানের স্ত্রী বুশরা বিবিকেও দোষী সাব্যস্ত করে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তিনি আগে জামিনে ছিলেন, তবে রায় ঘোষণার পর তাকে কারাগারে নেওয়া হয়। জিও নিউজের প্রতিবেদনে জানানো হয়, তাকে চিকিৎসা পরীক্ষার পর ইমরান খানের সেলের কাছাকাছি একটি সেলে স্থানান্তর করা হয়েছে।
"অভিযুক্ত ইমরান আহমেদ খান নিয়াজিকে দুর্নীতি ও অনৈতিক কার্যকলাপের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হলো," রায়ের বিস্তারিত অংশে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া, বুশরা বিবিকেও দুর্নীতিতে সহায়তা করার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
ইমরান খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ওমর আয়ুব জানিয়েছেন, তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। অন্যদিকে, কয়েকজন সরকারি মন্ত্রী রায়কে "প্রমাণের ভিত্তিতে নেওয়া সঠিক সিদ্ধান্ত" বলে প্রশংসা করেছেন।
৭২ বছর বয়সী ইমরান খান ও তার স্ত্রী তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। অভিযোগে বলা হয়, তারা ২০১৮-২০২২ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালীন এক রিয়েল এস্টেট ডেভেলপারের কাছ থেকে অবৈধ সুবিধার বিনিময়ে জমি গ্রহণ করেছিলেন।
এই মামলা আল-কাদির ট্রাস্টের সঙ্গে জড়িত, যা ইমরান খান তার ক্ষমতায় থাকাকালীন একটি অ-সরকারি কল্যাণমূলক সংস্থা হিসেবে গড়ে তোলেন। প্রসিকিউটররা বলছেন, এই ট্রাস্ট একটি অজুহাত মাত্র এবং এর মাধ্যমে ইমরান খান অবৈধভাবে জমি গ্রহণ করেন।
আদালত আরও নির্দেশ দিয়েছে, সংশ্লিষ্ট জমি বাজেয়াপ্ত করা হবে। ইমরান খানের দল পিটিআই দাবি করেছে, এই জমি তাদের ব্যক্তিগত লাভের জন্য নয়, বরং এটি একটি আধ্যাত্মিক ও শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যবহৃত হওয়ার কথা ছিল।
ইমরান খানের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে পোস্ট করা একটি বার্তায় তার সমর্থকদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, "ঘাবড়াবেন না। এই রায় একটি তামাশা। আমি যতদিন প্রয়োজন, কারাগারে থাকব এবং এই একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাব।"
২০২২ সালে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ইমরান খানের বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলা হয়েছে, যার মধ্যে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সহিংসতা উস্কে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তবে অধিকাংশ মামলায় তিনি খালাস পেয়েছেন বা তার সাজা স্থগিত হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চলমান আলোচনায় হয়তো ইমরান খান ও তার দলকে আইনি সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব থাকতে পারে, যদি তারা ধারাবাহিক বিক্ষোভ বন্ধ করে। এছাড়া, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা প্রার্থনার সুযোগও রয়েছে।
২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে ইমরান খানের দল স্বাধীন প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও সর্বাধিক আসনে জয়লাভ করেছিল। কিন্তু সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা তারা অর্জন করতে পারেনি।
আফরোজা