ছবি : সংগৃহীত
ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর ১৫ মাসের হামলায় গাজা উপত্যকা কার্যত পরিণত হয়েছে এক ধ্বংসস্তুপে। ভেঙে পড়েছে গাজার খাদ্য, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মত মূল মানবিক ক্ষেত্রগুলো। এমন কোন স্থান বাদ নেই, যেখানে দখলদার হানাদার বাহিনীর গোলার আঘাত পড়েনি। হোক তা বাড়িঘর, মসজিদ, স্কুল, হাসপাতাল কিংবা নিঃস্ব শরণার্থী শিবিরে। তাই কাঙ্খিত যুদ্ধবিরতির সাথে আরেকটি প্রশ্ন স্বভাবতই চলে আসছে, এরপর গাজা শাসন করবে কে? গাজাকে পুনর্গঠন করতে কত সময় লাগবে? খরচই বা হবে কত?
দীর্ঘ ১৫ মাস পর আসছে গাজায় কাঙ্খিত সেই যুদ্ধবিরতি, কিন্তু প্রাণ হারানো প্রায় ৪৭ হাজার মানুষ ও লক্ষাধিক পঙ্গুত্ব বরণ করা পরিবারের কাছে প্রতিটা দিনই যেখানে যুদ্ধ, সেখানে যুদ্ধবিরতি বলে হয়তো কিছু নেই। তারপরেও শীতের শেষে এসে যুদ্ধবিরতি কিছুটা হলেও স্বস্তি নিয়ে আসবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত কারাগার হিসেবে পরিচিত এই মৃত্যু উপত্যকায়।
প্রশ্ন হচ্ছে যুদ্ধবিরতি না হয় হলো কিন্তু এরপর গাজাকে পুনর্গঠন করবে কে? তাতে খরচই বা হবে কত?
গত বছর এএফপিকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা বাসেম নাইম। সেখানে তিনি বলেছিলেন, যুদ্ধবিরতির পর আর গাজা শাসনের দায়িত্বে থাকতে চাইছে না হামাস। হামাসের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বিশ্লেষক ইয়াসির আবু হেইন এফপিকে বলেছিলেন, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি জারির পর হামাস আর ক্ষমতায় থাকতে চায় না এবং জনগণের ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত কোন ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ থেকে স্পষ্ট যে, হামাস গাজাকে পুনর্গঠিত করার দায়িত্বে আর থাকছে না। আলজাজিরার প্রতিবেদন অনুসারে, যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে গাজা শাসনের পরবর্তী দায়িত্ব কার কাছে যাবে তা নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলা নেই। তবে ধারণা করা হচ্ছে, নিয়ন্ত্রণ করা মাহমুদ আব্বাসের প্যালেস্টাইন অথরিটি দায়িত্ব নেবে গাজার। যুক্তরাষ্ট্র চায় প্যালেস্টাইন অথরিটির একটি নতুন সংস্করণ গাজার দায়িত্ব গ্রহণ করুক। গাজায় প্যালেস্টাইন অথরিটির আধিপত্য কমলেও স্থানীয় সরকারের পৌরসভাগুলো এখনো তাদেরই নিয়ন্ত্রণে। এমনকি গাজার লাইফলাইন খ্যাত রাফা ক্রসিং এর দায়িত্বেও রয়েছে তারা। একই সাথে প্যালেস্টাইন অথরিটির আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতার কারণে এছাড়া অন্য কোন উপায়ও নেই সামনে।
১৯ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির ৮৪ দিন পর, ১২ই এপ্রিল যুদ্ধবিরতির তৃতীয় ধাপ শুরু হবে। তখন এসে তিন থেকে পাঁচ বছর মেয়াদে গাজা পুনর্গঠন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। তখন প্যালেস্টাইন অথরিটির মাধ্যমেই আন্তর্জাতিক ও আরব দেশগুলোর সহায়তার মাধ্যমেই গাজাকে পুনর্গঠন করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রভাবশালী গণমাধ্যম দ্যা ন্যাশনালের প্রতিবেদন অনুসারে, ১৫ মাসের যুদ্ধে জাতিসংঘ বলছে গাজার ৭০ শতাংশই ধ্বংস হয়ে গেছে। গত এপ্রিলে বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন বলেছিল, গাজা উপত্যকা পুননির্মাণের জন্য ১৮.৫ বিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন, যা এখন আরো বাড়বে।
বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, গাজার অন্তত ৫৬ টি বিদ্যালয় ধ্বংস এবং ২১৯ টি বিদ্যালয় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তুরস্কের সংবাদ মাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ডের অন্য আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুননির্মাণ করতেই লেগে যাবে ১০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা। বিশ্লেষকরা গাজার অবস্থা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারসের সাথে তুলনা দিয়ে মনে করছেন, গাজাকে পুননির্মাণ করতে কমপক্ষে সময় লাগবে ১০ বছর এবং খরচ হতে পারে প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলারের।
মো. মহিউদ্দিন