ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ৫ মাঘ ১৪৩১

পাল্টে যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার মানচিত্র!

প্রকাশিত: ০৩:১৮, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫

পাল্টে যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার মানচিত্র!

ছবি : সংগৃহীত

বিশ্ব রাজনীতির পরিস্থিতি এমন যে, অন্য দেশ কিংবা ভূখণ্ড দখল করে নিজ দেশের মানচিত্রই পাল্টে ফেলতে চাইছে রাশিয়া, চীন আর ইসরাইল। রাজনৈতিক অস্থিরতায় একই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে দক্ষিণ এশিয়াতেও। কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে বাংলাদেশের সরকার পতন আর মিয়ানমারে জান্তা সরকারকে কোণঠাসা অবস্থায় নিয়ে যাওয়া বিদ্রোহী আরাকান আর্মির উত্থান। এই অঞ্চলের ভূরাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ দুই দেশের অবস্থানই এখন নড়বড়ে। এই আঁচ লেগেছে ভারত আর চীনেও। নিজেদের প্রকল্পগুলো টিকিয়ে রাখতে সমানে জান্তা সরকারকে অস্ত্র দিচ্ছে দুই দেশই। কিন্তু কিভাবে?

সংবাদ মাধ্যম ইউরাশিয়ান টাইমস বলছে, মিয়ানমারে জান্তা সরকারকে চাপে ফেলে, আরাকান আর্মি যেভাবে অপ্রতিরোধ্য হয়ে গেছে, তাতে দক্ষিণ এশিয়ার মানচিত্র আবারো আঁকতে হতে পারে। মিয়ানমারের সমৃদ্ধ রাজ্য রাখাইনের জান্তা নিয়ন্ত্রিত ওয়েস্টার্ন কমান্ড আরাকান আর্মি নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পর, সেনাবাহিনী আরো হালছাড়া অবস্থায় দাঁড়িয়েছে।

বিদ্রোহীদের নজর এখন ইরাবতী নদীর তীরে জান্তা সরকারের অস্ত্রের গুদামে। যেন প্রতিপক্ষকে হামলায় কোন ঘাটতি না থাকে। ওয়েস্টার্ন কমান্ড হিসেবে পরিচিত জান্তা বাহিনীর দ্বিতীয় আঞ্চলিক কমান্ড গেল বছরই জাতিগত সশস্ত্র সংগঠনের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। এর আগে একই বছর উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের নিয়ন্ত্রণ নেয় মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি। এতে করে একরকম জানতায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় ২৫ টি অস্ত্রের কারখানা। এর মধ্যে মাগুয়েতে ১৫, বাগতে ৭, আর নেইপিদোতে রয়েছে ২টি অস্ত্রের কারখানা। ইরাবতী নদীর পশ্চিম তীরে রয়েছে মাগুয়ে আর বাগর অস্ত্রের কারখানাগুলো। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর কৌশল ছিল পশ্চিমে রাখাইনে আরাকান পর্বতের কাছে আর পূর্বে ইরাবতী নদীর কাছে অস্ত্রের কারখানা তৈরি করলে তা থাকবে নিরাপদ। সে সময় রাখাইনরা সামরিক বাহিনীর জন্য কাজ করতো। অস্ত্রের কারখানায় যাওয়ার রাস্তা আনপাদান, যেটি রাখাইন পর্বতের সঙ্গে মাগোকে সংযুক্ত করে, সেই রাস্তায় দখলে নিয়ে নিয়েছে বিদ্রোহীরা। এখানে অবস্থান ছিল জান্তা সেনাবাহিনীর, এই রাস্তার নিয়ন্ত্রণ নেয়া মানেই অস্ত্রের কারখানা গুলো এখন আরাকান আর্মি নিয়ন্ত্রণে।

এই রাখাইন রাজ্য চীনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ গেটওয়ে কারণ এটি স্ট্রেট অফ মালাক্কার বিকল্প, যে কারণে দেশটিতে জান্তা সেনাবাহিনীর শাসন টিকিয়ে রাখা চীনের জন্য জরুরি। জান্তা সরকারকে সামরিক সহায়তা দিচ্ছে বেইজিং। সিতওয়েতে কালাদান বন্দরের খুব কাছে কায়াকফুতে গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরি করছে চীন। বন্দর তৈরি হলে বেইজিং পাবে ভারত মহাসাগরের গেটওয়ে। যা চীন-মিয়ানমার ১৭০০ কিলোমিটারের অর্থনৈতিক করিডোরের অংশ। মিয়ানমারের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ভারতের জন্য বেশ জরুরি। ভারত ও বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী দক্ষিণ চীন রাজ্যে নিরাপত্তা রক্ষা করতো জান্তার ওয়েস্টার্ন কমান্ড।

নিরাপদ ছিল ভারতের রাখাইন রাজ্যের কলকাতা থেকে সিতয়ে সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত কালাদান মাল্টিমোডাল ট্রান্জিট ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট। এই প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল, বাংলাদেশের ট্রান্জিট রুটের উপর নির্ভরশীলতা কমানো। তাই পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে গিয়ে মিয়ানমারের জান্তা সরকারকে সমর্থন দিয়ে আসছে ভারত। অস্ত্র সরবরাহ করছে নয়াদিল্লি।

জাতিসংঘ বলছে, সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত নেইপিদোর কাছে পাঁচ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে ভারত, একই অবস্থা চীনেরও। ২০২১ সালের সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে ভারত-চীন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নিজেদের স্বার্থেই জান্তা সরকারের পতন চায় না ভারত-চীন। আর তাই সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করে দেশটিতে যুদ্ধ টিকিয়ে রাখতে অর্থ ব্যয় করছে বেইজিং, নয়াদিল্লি।

মো. মহিউদ্দিন

×