ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১

মণিপুর আবারও তছনছ

ভারতীয় সেনাবাহিনীর ক্যাম্প জ্বালিয়ে দিলাে বিদ্রোহীরা

প্রকাশিত: ২১:১৯, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ০১:০১, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

ভারতীয় সেনাবাহিনীর ক্যাম্প জ্বালিয়ে দিলাে বিদ্রোহীরা

ছবি : সংগৃহীত

আবারো উত্তপ্ত মণিপুর। নাগা, কুকি সংঘর্ষে ছড়িয়ে পড়েছে উত্তেজনা। রীতিমত তছনছ সেভেন সিস্টারসের অন্যতম এই জেলা। এবার পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর যে আধা সামরিক বাহিনীর একটি ক্যাম্প জ্বালিয়ে দিয়েছে বিদ্রোহীরা। আধা সামরিক বাহিনীর আসাম রাইফেলস এর বিরুদ্ধেও হেনস্থার অভিযোগ স্থানীয়দের একাংশের। সব মিলিয়ে চূড়ান্ত অশান্তির দ্বারপ্রান্তে এই মণিপুর।

অশান্তির আশঙ্কায় মণিপুরের বেলজাং মহকুমার একাংশে জারি হয়েছে কারফিউ। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সেখানে এই নির্দেশনা বলবৎ থাকবে। কারফিউ জারির পেছনে স্পষ্ট কোন কারণ না দর্শালেও বলা হয়েছে জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তার স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত। মণিপুরে দুটো আলাদা ঘটনায় সৃষ্টি হওয়া উত্তেজনা রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশাসন তৎপর হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে।

কংপ্রকোপী জেলায় নাগা, কুকিদের মধ্যে তুমূল সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের সূত্রপাত দুটো গ্রামের মধ্যে আঞ্চলিক বিরোধের কারণে। জমি নিয়ে কংচক, তেলজাং উপবিভাগের নাগা জনগণের সাথে লেইলন ভৈফ গ্রামের কুকি জো জনগণের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। কনসাকখুল গ্রামবাসীর দাবি লেইলন ভৈফ তাদের এলাকায়। তবে এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে ভৈফ গ্রামের বাসিন্দারা। এর জেরেই ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা।

রাজ্যের কামজং জেলায় আসাম রাইফেলের একটি অস্থায়ী ঘাটিতে ভাঙচুরের পর আগুন লাগিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। এই জমি নিয়ে বিরোধের মাঝেই ৭ জানুয়ারি এক নাগা নারীর উপরে হামলার অভিযোগ উঠেছে যা পরিস্থিতিকে আরো উত্তপ্ত করে তোলে। এই পরিস্থিতিতে দুটি গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সংঘর্ষের ফলে কোন বড় ধরনের আহতের ঘটনা ঘটেনি। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম আনন্দবাজার স্থানীয় সূত্রের বরাদ দিয়ে বলছে, শনিবার হংব্যাং এলাকার নাগা জনগোষ্ঠী অধ্যূষিত এলাকায় বাড়ি তৈরির জন্য কাঠ কেটে  নিয়ে যাচ্ছিলেন কয়েকজন। অভিযোগ, কাঠ পৌঁছানো গাড়িটি আটকে দেন আসাম রাইফেলসের জাওয়ানেরা। তারপর থেকেই শুরু হয় অসন্তোষ।

গত বছরের মে মাস থেকে মেইতেই এবং কুকিজো সম্প্রদায়ের মধ্যে হিংসা ঘিরে উত্তাপ ছড়াচ্ছে মণিপুরে। মাঝে কিছুদিন বিরতির পর সেপ্টেম্বর মাস থেকে মেইতে ও কুকি জনগোষ্ঠীর মধ্যে নতুন করে সংঘর্ষে আবারো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। জ্বালিয়ে দেয়া হয় বেশ কয়েকটি বাড়িঘর। দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে পুরো রাজ্য জুড়ে।

শুধু বাড়ি পুড়িয়েই ক্ষান্ত হয়নি বিক্ষুব্ধরা। মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংহের পাশাপাশি রাজ্যের বেশ কয়েকজন বিধায়কের বাড়িতেও হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা। মুখ্যমন্ত্রী বীরেনের বাড়ির কাছেই উদ্ধার হয়েছিল বোমা।

গেল ৩১ ডিসেম্বর মণিপুরের অশান্তির জন্য সাধারণ মানুষের কাছে ক্ষমা চান রাজ্য মুখ্যমন্ত্রী। অশান্তি ভুলে নতুন করে শুরুর কথা বলেন তিনি। এই বছরেই শান্তি ফিরবে বলে প্রত্যাশা ছিল তার কণ্ঠে। কিন্তু মণিপুর জুড়ে বারবার অশান্তি যেন শান্তির কথা বলছেই না বরং কিছুদিন পর পর উত্তাপের দাবানল ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। 

মো. মহিউদ্দিন

×