মালালা ইউসুফজাই
মালালা ইউসুফজাই আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের দমনমূলক নীতিমালার বিরুদ্ধে এবং মেয়েদের ও নারীদের শিক্ষার অধিকারের পক্ষে মুসলিম নেতাদের আওয়াজ তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইসলামি দেশগুলোতে মেয়েদের শিক্ষার বিষয়ে পাকিস্তানের আয়োজিত একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে মালালা বলেন, ‘আফগানিস্তানের তালেবানরা নারীদের মানুষ হিসেবে দেখে না।’
মালালা মুসলিম নেতাদের বলেছেন যে তালেবানের নীতিমালায় ‘কোনো ইসলামী কিছু নেই’, যার মধ্যে রয়েছে মেয়েদের শিক্ষা ও কাজ করার সুযোগ থেকে বিরত রাখা।
২৭ বছর বয়সী মালালা, যিনি ১৫ বছর বয়সে পাকিস্তানের তালেবানদের গুলিবিদ্ধ হয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। মেয়েদের শিক্ষার পক্ষে কথা বলার জন্য তাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল।
গতকাল রবিবার ইসলামাবাদে সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি জানান, নিজের দেশে ফিরে আসতে পেরে তিনি অভিভূত এবং খুশি। ২০১২ সালের হামলার পর তিনি মাত্র কয়েকবার পাকিস্তানে ফিরে এসেছেন এবং প্রথমবার দেশে ফিরেছিলেন ২০১৮ সালে।
তিনি বলেন, ‘তালেবান সরকার আবারও লিঙ্গ বর্ণবাদের একটি ব্যবস্থা তৈরি করেছে। তাদের অস্পষ্ট আইন ভঙ্গ করার সাহস দেখানো নারীদের প্রহার, আটক এবং ক্ষতি করে শাস্তি দিচ্ছে। সরকার তাদের অপরাধকে সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় যুক্তির আড়ালে লুকানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু তারা প্রকৃতপক্ষে আমাদের ধর্মের যা কিছু ভিত্তি, তার বিপরীতে যাচ্ছে।’
তালেবান সরকার মালালার মন্তব্যের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে তারা পূর্বে বলেছিল যে তারা আফগান সংস্কৃতি এবং ইসলামি আইনের তাদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী নারীদের অধিকারকে সম্মান করে।
তালেবান সরকারের নেতাদের ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি), পাকিস্তান সরকার এবং মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগ দ্বারা পরিচালিত শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, কিন্তু তারা যোগ দেননি। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলির কয়েক ডজন মন্ত্রী এবং পণ্ডিত যারা মেয়েদের শিক্ষার পক্ষে কথা বলেছিলেন।
২০২১ সালে তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করার পর থেকে তাদের সরকারকে একটি বিদেশি সরকারও আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। পশ্চিমা দেশগুলো বলেছে যে নারীদের প্রতি তাদের নীতিমালা পরিবর্তন করতে হবে।
বর্তমানে আফগানিস্তান বিশ্বে একমাত্র দেশ যেখানে নারীদের মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষা গ্রহণ থেকে সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে। প্রায় দেড় মিলিয়ন মেয়েকে ইচ্ছাকৃতভাবে স্কুল থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
মালালা বলেন, ‘আফগানিস্তান বিশ্বে একমাত্র দেশ যেখানে মেয়েদের ষষ্ঠ শ্রেণির পর শিক্ষার ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।’
তিনি উপস্থিত সবাইকে আহ্বান জানান, মেয়েদের শিক্ষার অধিকারের সবচেয়ে গুরুতর লঙ্ঘনগুলো প্রকাশ্যে তুলে ধরুন এবং আফগানিস্তান, ইয়েমেন এবং সুদানের মতো দেশগুলোতে চলমান সংকটগুলোতে মেয়েদের পুরো ভবিষ্যৎ চুরি হয়ে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন।
সূত্র: বিবিসি।
এম হাসান