ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১

হঠাৎ তালেবানের বন্ধুত্ব কেন চায় ভারত?

প্রকাশিত: ২১:২৮, ১১ জানুয়ারি ২০২৫

হঠাৎ তালেবানের বন্ধুত্ব কেন চায় ভারত?

ছবি: সংগৃহীত

তালেবান শাসিত আফগানিস্তানের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের প্রথম দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে ভারত তাদের কাবুলের সরওঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে। এই পদক্ষেপ ইসলামী শাসক গোষ্ঠীর সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য মাইলফলক।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিসরি বুধবার দুবাইয়ে তালেবান সরকারের কার্যনির্বাহী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

তালেবান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, আলোচনায় আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি, ভারতের উন্নয়নমূলক প্রকল্প ও মানবিক সহায়তায় অংশগ্রহণ এবং আফগানিস্তানের চাবাহার বন্দর ব্যবহারের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, “আফগানিস্তানের ভারসাম্যপূর্ণ ও অর্থনীতিকেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতির আওতায় ইসলামি আমিরাত ভারতের সঙ্গে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে চায়।”

২০২১ সালের আগস্টে তালেবান কাবুল দখলের পর এটি ছিল ভারত ও তালেবানের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সংলাপ।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, "আফগান পক্ষের অনুরোধে ভারত প্রাথমিকভাবে স্বাস্থ্য খাত এবং শরণার্থীদের পুনর্বাসনের জন্য আরও সহায়তা দেবে। এছাড়া, ক্রিকেটসহ ক্রীড়া ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদারের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।”

চীনের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল
আফগানিস্তান বিশেষজ্ঞ শান্তি মারিয়েত ডি’সুজা বলেছেন, এই বৈঠক ভারতের জন্য কাবুলে তাদের প্রভাব পুনরুদ্ধার এবং চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতির জবাব দেওয়ার একটি সুযোগ।

তিনি বলেন, “ভারতের কৌশলের মূল লক্ষ্য হলো কাবুলে তাদের পুরনো সংযোগগুলো পুনর্নবীকরণ এবং হারানো প্রভাব ফিরে পাওয়া।”

ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত গৌতম মুখোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে জানান, ভারত তালেবান নেতৃত্বের সঙ্গে সম্পর্ক স্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তবে, তালেবান এখনও নারীদের ওপর কঠোর নিপীড়ন চালাচ্ছে, যা কূটনৈতিক স্বীকৃতির পথে বড় বাধা।

দুই দেশের সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন
২০২২ সালের জুনে ভারত কাবুলে একটি "প্রযুক্তি দল" পাঠায়। এর মাধ্যমে মানবিক সহায়তা সমন্বয় এবং আফগান জনগণকে সাহায্যের সুযোগ খুঁজে বের করা হয়।

ভারত এখন তালেবান প্রতিনিধিকে মুম্বাইয়ের আফগান কনস্যুলেটে কাজ করার অনুমতি দিয়েছে। এর মাধ্যমে তালেবান আফগান শিক্ষার্থী, রোগী ও ব্যবসায়ীদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার আহ্বান জানায়।

ভারতের সাবেক আফগানিস্তান দূত অমর সিনহা বলেন, "এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠক প্রাকৃতিক পরবর্তী পদক্ষেপ। যদিও কোনও দেশ এখনও তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি, এই বৈঠক তালেবানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ।"

পাকিস্তানের সঙ্গে তালেবানের সম্পর্কের টানাপোড়েন
ভারতের সাবেক পাকিস্তান দূত অজয় বিসারিয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, "ভারতের সঙ্গে তালেবানের বাস্তবমুখী বোঝাপড়া হয়েছে। ভারতের চাহিদা হলো, আফগান ভূমি কোনওভাবেই ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যাবে না।"

অন্যদিকে, পাকিস্তান আফগানিস্তানকে নিজেদের কৌশলগত প্রভাবের জন্য ব্যবহার করতে চায়। কিন্তু, ক্রস-বর্ডার সন্ত্রাসবাদ ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক বিমান হামলার কারণে তালেবান ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক তিক্ত হয়েছে।

সূত্র: ডয়েচে ভেলে

নাহিদা

×