ছবিঃ সংগৃহীত
বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার সমাধি ইতিহাসের এক অংশ, যাকে কেন্দ্র করে এখনও মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম ও ক্ষোভের মিশ্র অনুভূতি কাজ করে। ভারতের মুর্শিদাবাদের খোশবাগে শায়িত রয়েছেন তিনি। তবে তাঁর সমাধিস্থল দেখে হতাশ হন অনেক দর্শনার্থী। অপরিকল্পিত ও অবহেলায় জীর্ণশীর্ণ এই স্থান যেন বাংলার গৌরবময় ইতিহাসকে আরও মলিন করে তুলেছে। এখানে যাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য। ভাগীরথী নদী পেরিয়ে নৌকা ও শ্যালোমেশিন চালিত ভ্যানগাড়ি ব্যবহার করতে হয়। সমাধির চারপাশে নেই কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থা বা নির্ধারিত তত্ত্বাবধান। সাদামাটা এই সমাধিস্থল দেখে বোঝার উপায় নেই, এটি এক সময়কার বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবের।
অন্যদিকে, মুর্শিদাবাদের জাফরগঞ্জে শায়িত রয়েছেন বাংলার ইতিহাসের এক ঘৃণিত চরিত্র মীরজাফর। তাঁর সমাধিস্থল সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র উপস্থাপন করে। আভিজাত্যে ভরা এই স্থানে রয়েছে সুরক্ষিত গেইট, নিরাপত্তারক্ষী, এবং গাইডের ব্যবস্থা। মীরজাফরের সমাধি ঝকঝকে মার্বেল পাথরে নির্মিত, যা দেখতে প্রতিদিন বহু দর্শনার্থী পাঁচ টাকার বিনিময়ে ভিড় করেন। গাইডের জন্য ৫০ টাকা দিয়ে তাঁদের ইতিহাস শোনার সুযোগও মেলে। এখানকার পরিচ্ছন্নতা ও পরিকাঠামো মীরজাফরের বংশধরের প্রভাবের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
মীরজাফরের সমাধিস্থলেই রয়েছে তাঁর ১,১০০ বংশধরের কবর। বাইরের কাউকে এখানে সমাহিত করা হয় না। সমাধিস্থলে পুরুষদের কবর খোলামেলা স্থানে হলেও নারীদের কবর দেয়ালঘেরা। মীরজাফরের তিন স্ত্রীর মধ্যে প্রথম স্ত্রী সাহা খানম ও দ্বিতীয় স্ত্রী বদবু বেগম কবরস্থানের ভেতরেই শায়িত। তবে তৃতীয় স্ত্রী মুন্নি বেগম, যিনি আগে নৃত্যশিল্পী ছিলেন, পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের মাধ্যমে নবাবের স্ত্রী হন, তাঁর কবর একটি নির্ধারিত জায়গায় রয়েছে।
এদিকে, সিরাজউদ্দৌলার সমাধিস্থল থেকে কিছুটা দূরে তাঁর বংশধরদের কবর রয়েছে, যেগুলোও অযত্নের শিকার। গাইড ছাড়া সেগুলো চিহ্নিত করা দুষ্কর। বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবের সমাধিস্থলে নেই কোনো আভিজাত্য বা ঐতিহাসিক মর্যাদার চিহ্ন, যা অনেকের জন্য বেদনাদায়ক।
দুই সমাধিস্থলের এই বৈপরীত্য ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা প্রশ্ন ও ক্ষোভকে উস্কে দেয়। একদিকে বিশ্বাসঘাতক মীরজাফরের আভিজাত্যপূর্ণ সমাধি, অন্যদিকে সিরাজউদ্দৌলার জীর্ণ সমাধি যেন ইতিহাসের অবিচারকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।
মারিয়া