ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের বিভিন্ন অংশে নিয়ন্ত্রণহীন দাবানল তাণ্ডব চালাচ্ছে। এতে অন্তত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে, শত শত ভবন পুড়ে গেছে এবং প্রায় ১,৮০,০০০ বাসিন্দাকে তাদের এলাকা খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এমন বিধ্বস্ত পরিস্থিতি ফিলিস্তিনের গাজার ধ্বংসস্তুপের কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে বিশ্ববাসীকে। নেটিজেনদের মুখে চর্চিত হচ্ছে কিভাবে গাজার হামলাতে সাহায্যকারী দেশগুলোই এখন সংকটের মুখে পড়েছে। তারা এটিকে কর্মের ফল হিসেবে অভিহিত করছে।
লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টিতে প্রায় ১,৭৯,০০০ বাসিন্দা নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশ পেয়েছেন। এ ছাড়া আরও ২,০০,০০০ বাসিন্দা সতর্কতামূলক অবস্থায় রয়েছেন, যাদের যেকোনো সময় এলাকা খালি করতে হতে পারে।
ইটন ফায়ারের কাছে পাঁচজনের মরদেহ পাওয়া গেছে। তাদের মৃত্যুর সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি।
লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির শেরিফ রবার্ট লুনা বলেছেন, মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে বলেন, এলাকাগুলোকে যেন “বোমা ফেলা হয়েছে” এমনটা মনে হচ্ছে।
অন্যদিকে, কিছু খালি করা এলাকায় লুটপাট বেড়ে গেছে। পুলিশ এ পর্যন্ত ২০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
পালিসেডস এবং ইটন ফায়ার: এই দুটি দাবানল এখনো সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে রয়েছে।
সানসেট ফায়ার: হলিউড হিলস এলাকায় আগুন কিছুটা কমলেও তা এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তবে হলিউড হিলস ওয়েস্ট এলাকার বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ তুলে নেওয়া হয়েছে।
ক্ষয়ক্ষতির হিসাব
৫,৩০০টি কাঠামো ধ্বংস হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বাড়ি, স্কুল এবং সানসেট বুলেভার্ডের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
এই দাবানল যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অন্যতম ব্যয়বহুল হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বীমা শিল্প ধারণা করছে, ক্ষতির পরিমাণ ৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
আবহাওয়া পরিস্থিতি
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানলের ঝুঁকি “অত্যন্ত সংকটপূর্ণ” থেকে কমে “সংকটপূর্ণ” হয়েছে। তবে আগামী এক সপ্তাহে বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই।
রাজনৈতিক বিতর্ক
ফায়ারফাইটারদের পানির সংকট নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির ফায়ার চিফ অ্যান্থনি ম্যারোনে দাবি করেছেন, পানির সরবরাহের কোনো ঘাটতির কথা তিনি জানেন না। তবে পাশের পাসাডেনা এলাকার ফায়ার চিফ চ্যাড অগাস্টিন বলেছেন, কিছু সময়ের জন্য পানির চাপ কমে গিয়েছিল, যা পরে সমাধান করা হয়েছে।
দাবানল কোথায় ঘটছে?
লস অ্যাঞ্জেলেসের পাঁচটি বড় দাবানলের কথা জানা গেছে:
পালিসেডস ফায়ার: ১৭,০০০ একর এলাকা পুড়িয়ে দিয়েছে।
ইটন ফায়ার: প্রায় ১৪,০০০ একর এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত।
হার্স্ট ফায়ার: ৬৭০ একর এলাকা জুড়ে দাবানল।
লিডিয়া ফায়ার: ৩৫০ একর এলাকায় ছড়িয়েছে, তবে ৬০% নিয়ন্ত্রণে।
কেনেথ ফায়ার: নতুন দাবানল, যা ৫০ একর এলাকা পুড়িয়েছে।
দাবানলের কারণ কী?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টিপাত না হওয়া এবং সান্তা আনা বাতাস দাবানলের প্রধান কারণ। ৯৫% দাবানল মানুষের কার্যক্রমের মাধ্যমে শুরু হয় বলে ধারণা করা হয়। তবে এবার দাবানলের সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো জানা যায়নি।
জলবায়ু পরিবর্তনের ভূমিকা
জলবায়ু পরিবর্তন দাবানলের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যালিফোর্নিয়ার মতো অঞ্চলে দীর্ঘ গরমের সময়কাল, খরার প্রকোপ এবং শুষ্ক বাতাস দাবানলকে আরও বিধ্বংসী করে তুলছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের এই দাবানল প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকেও স্পষ্ট করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ারফাইটাররা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।
সূত্র: বিবিসি নিউজ
নাহিদা